সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদল সভাপতি মশিউর রহমান রনি। দীর্ঘ সাড়ে ৪মাস জেলা খাটার পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। গত মঙ্গলবার হাই কোর্টের জামিনে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। মুক্তি পাওয়ার পর মশিউর রহমান রনিকে একনজর দেখার জন্য সব নেতাকর্মীরা তার নিজবাসা মাসদাঈরে ছুটে আসে। শত শত মানুষ জড়ো হয় তার নিজস্ব বাসভবনে। সকলেই তার ভাব ভঙ্গিমা কিংবা রনি কেমন আছে তা জানার জন্যই মূলত সেখানে উপস্থিত হয়। আর মুক্তি পাওয়ার পর দৈনিক সংবাদচর্চার নিজস্ব প্রতিবেদককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তার সাথে ঘটে যাওয়া ১৪১দিনের বর্ণনা দেন রনি।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রনি অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বলেন, ’আমি একটা স্যাটাস দেওয়ার পরে ঢাকার বাগান বাড়ীর সামনে থেকে ফতুল্লা থানার পরিচয় দিয়ে সহকারী উপ-পরিদশক তারেকসহ তিন জন আমাকে নিয়ে যায় সতাব্দি টাওয়ারের সামনে। সেখানে উপ-পরিদশক এনামসহ ৪/৫জনের কাছে নিয়ে যায়। এ সময় পল্টন থানার এক পুলিশ কর্মকর্তাকে আমি ডেকে পরিচয় দেই। তিনি এ সময় ফতুল্লা থানার অফিসারদের পরিচয় জানতে চান। তখন এনাম মোবাইলে কথা বলিয়ে দেন এ অফিসারকে। পরে অফিসার আমার মোবাইল নাম্বার রেখে আমাকে যেতে বলেন।
সাদা রঙের একটি মাইক্রো গাড়িতে উঠিয়ে হাতে হ্যানক্যাফ ও কালো কাপর দিয়ে আমার চোখ বেধে ফেলে এবং আমাকে নিয়ে গাড়িতে করে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুড়ি করে। এসময় গাড়িতে শব্দ শুনে আমি বুঝতে পাড়ি পুলিশের দু’টি গ্রুপ রয়েছে। এবং একটি গ্রুপ বলছে ওকে ফেলে দেই! কি হবে? আর আরেক গ্রুপ বলছে না ঝামেলা আছে। এ সময় আমি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি। পরে আমাকে থানার ভিতরে নিয়ে আসে। সেখানে প্রচুর মশার কামড়ে আমার শরিরের বিভিন্ন অংঙ্গ বিসাক্ত করে ফেলে। আমি কান্নায় চিৎকার করি, যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে আমার চোখে পানি দিয়ে হাজতের মাটি ভিজে যায়।
কিন্তু কেউ আমাকে সাহায্যে করতে আসেননি। বরং কিছুক্ষণ পরপর থানার লোকজন এসে আমাকে বিভিন্ন ভাষায় গালমন্দ করেন এবং বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকেন। অনেক রাতে আমাকে একটা ডিম আর একটু ভাত খেতে দিয়েছিল, কিন্তু পানি ছিল না। আমাকে একজন পুলিশ আপা বোতলে করে একটু পানি দিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পর আরেক দল এসে আমাকে একটি পরিত্যাক্ত বাড়িতে নিয়ে যায় এবং মেরে ফেলার জন্য আলোচনা করতে থাকে। কিন্তু ফতুল্লা থানার ওসি সাহেবের ফোনে আমাকে পুনরায় থানার হাজতে নিয়ে যায়। সেখানে গভীর রাতে একজন এসে আমাকে বিভিন্ন ভাষায় গাল মন্দ করে সাথে বলেন আমার মাথা কেটে ফুটবল খেলবে! একথা বলে সে চলে যায়। কিছুক্ষন পর আবার আমাকে কালো কাপড় পড়িয়ে থানা থেকে বাহিরে নিয়ে যায় একদল এবং গাড়িতে বসিয়ে একজন আরেক জনকে বলেন, র্যাবে নিয়ে যেতে! তখন আমি বলি আমাকে কেন র্যাবে নিয়ে যাবেন? পরে আমি অনুভব করলাম সামনে একটি গাড়ি আছে। পুলিশ আমার গাড়িতে অস্ত্র দিয়ে দিত, কিন্তু একটি গাড়ি সামনে থাকায় পুনরায় আমাকে আবার থানায় নিয়ে যায়। তবে প্রতিবারই থানা খালি হওয়ার পর আমাকে থানার ভিতরে নিয়ে যেত। পরেরদিন আমাকে অস্ত্রসহ আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। এছাড়া আমি জেলে থাকার সময় আমার বিরুদ্ধে ২টি মাদক মামলা দেওয়া হয়েছিলো। অথচ আমি জীবনে কোন দিন ধুমপানও করি নাই। আমি জেলে থাকা অবস্থায় ২১দিন আমার পরিবারের সাথে আমাকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি।
এছাড়াও আমাকে বিভিন্নভাবে মানষিক টর্চার করা হয়। আমি জীবনে কখনোও ভাবতে পারিনি জেলের জীবনযাপন এরকম হয়। পুরো ১৪১দিন আমাকে জেলের ভিতর খুবই কষ্ট করতে হয়েছে। তবে আমি জেলে থাকা অবস্থায় শিমুল বিশ্বাসের মাধ্যমে অনেক বিএনপি নেতার্কমীর জামিন করিয়েছি। আমাকে দেখতে হাজতের সকল হাজতী ছুটে আসতো। আমি হাজতে থেকে যা করেছি তা হয়তো বাহিরে থেকেও করা সম্ভব হত না। আর ১২ বছর ধরে বিএনপি ক্ষমতায় নেই কিন্তু আমাদের জনপ্রিয়তা একটুকুও কমেনী বরং বেড়েছে। আর বিএনপি কে ভাঙ্গার ক্ষমতা কারো নেই। এছাড়া কোন ছাত্রদল নেতাকে মাদক মামলা দিয়ে ফাসাঁনো যাতে না হয় সে জন্য তিনি পুলিশের কাছে অনুরোধ করেন।
উল্লেখ্য, রনিকে গ্রেফতারের পর তারা পরিবার জানায় ২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় পারিবারিক কাজে ঢাকা যায় রনি। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে ডিবি পরিচয়ে সাদা পোশাকে কিছু লোক রনিকে মাইক্রোবাস তুলে নিয়ে যায়। সে সময় তাকে অনেক খোজাখোজি করে পায়নি তার পরিবার। পরদিন মশিউর রহমান রনিকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। এরপর বেশ কয়েকবার তাকে রিমান্ডে নিয়ে আরও অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করে পুলিশ।