আজ শনিবার, ১লা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

একাদশ সংসদ নির্বাচনে শামীম ওসমানের মনোনয়ন অনিশ্চিত !

শামীম ওসমানের মনোনয়ন অনিশ্চিত

শামীম ওসমানের মনোনয়ন অনিশ্চিতনিজস্ব প্রতিবেদক:

নানা কারণে বির্তকিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান ফের আলোচনায়। শহরজুড়ে আলোচনা সমালোচনা আবারও আওয়ামীলীগ দলীয় এই প্রভাবশালী সংসদ সদস্যকে ঘিরে। তবে এবারের আলোচনা আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নাও পেতে পারেন শামীম ওসমান। গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন সভা সমাবেশে গিয়ে শামীম ওসমান যে বক্তব্য দিচ্ছেন তার সেই সব বক্তব্যের কারণেই শহর জুড়ে আবারও আলোচনায় তিনি।
এর আগে ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের আগেই দেশ ছেড়েছিলেন শামীম ওসমান। এরপর জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশে ফিরেছিলেন আলোচিত সমালোচিত এই আওয়ামীলীগ নেতা। এরপরে নবম জাতীয় নির্বাচনে দল তাকে নির্বাচনের টিকিট দেয়নি। দশম সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
নগরের রাজনৈতিক বোদ্ধামহলের মতে, নবম সংসদ নির্বাচনের পর তার চাচী সারাহ বেগম কবরীর সাথে নানা সময় দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরে আলোচনায় ছিলেন শামীম ওসমান। নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র ত¦কি হত্যাকান্ড নিয়ে দেশ বিদেশে সমালোচনার শিকার হন শামীম ওসমান। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে দলীয় হাই কমান্ডের বিরাগভাজন হন শামীম ওসমান। সর্বশেষ হকার ইস্যূতে গত জানুয়ারীতে রাজপথে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাথে সংঘর্ষ এবং রাজপথে মেয়র আইভী আহত হওয়ার ঘটনায় কেন্দ্রীয় নেতাদের তোপের মুখে পরেন শামীম ওসমান। হকার ইস্যুতে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিরক্ত হয়ে বলেন-“ তুমি আমাকে বেচো কেনো শামীম ”। বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়, এই ঘটনায় দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শামীম ওসমানের প্রতি নাখোশ হন। যদিও এ ঘটনায় দল থেকে কারো বিরুদ্ধেই শাস্তিমুলক কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সুত্রে জানা যায়, হকার ইস্যূ নিয়ে সৃষ্ট ঘটনার পর কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপের মুখে পরেন শামীম ওসমান।
এবছরের শুরুতে দলের সাধারন সম্পাদক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ফতুল্লায় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের জনকল্যান বিষয়ক উপ সম্পাদক কাউছার আহমেদ পলাশের বাসায় চা চক্রে মিলিত হলে রাজনৈতিক বোদ্ধাদের কাছে অনেকটা প্রকাশ্য হয় আসন্ন একাদশ সংসদ নির্র্র্র্বাচনে দল থেকে এবার শামীম ওসমানকে প্রার্থী নাও করা হতে পারে। দলীয় হাই কমান্ডের এমন মনোভাব বোঝার পরই নানা সুরে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন সভা সমাবেশে শামীম ওসমান তার বক্তব্যে নানা কথা বলছেন।
স্থানীয় বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও অনলাইনের খবর থেকে জানা যায়, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে সরকারি তোলারাম কলেজের অনুষ্ঠানে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেন শামীম ওসমান। এরপর সোমবার (১৯ মার্চ) চাষাড়ার বাংলাভবন কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত কর্মী সমাবেশে শামীম ওসমান তার বক্তব্যে আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জে থাকবেন না বলে জানান এমপি শামীম ওসমান। তিনি বলেন, যে নির্বাচন হবে সে নির্বাচনে জাতীয় নেতারা যার যার স্থানে চলে যাবে। এই সময়ে আমার নেত্রীর পাশে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমি নির্বাচন করি কিংবা অন্য কেউ করুক তাকে অব্যশই আওয়ামীলীগের হতে হবে। তার এমন বক্তব্যে তার আসনে নির্বাচন কে করবে, তা তিনি নিশ্চিত বলতে পারেননি বলে মনে করেন রাজনৈতিক মহল। তাদের মতে শামীম ওসমান বলেছেন-“ আমি নির্বাচন করি কিংবা অন্য কেউ করুক তাকে অব্যশই আওয়ামীলীগের হতে হবে। তার এ কথায় নারায়ণগঞ্জ-০৪ আসনের আওয়ামীলীগের নতুন প্রার্থী আসতে পারে বলে তিনি নিজেই ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে মনে করেন রাজনৈতিক মহল।
অন্যদিকে, ২০ মার্চ ফতুল্লার বক্তাবলীতে কর্মী সমাবেশে শামীম ওসমান নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্যে বলেছেন, আমি ভালো মানুষ না, আমাকে মানুষ ভোট দিবেনা। আপনারা দলকে সংঘঠিত করুন। আপনাদের দেখে মানুষ আমাকে ভোট দেবে।
আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, দলীয় হাই কমান্ড শামীম ওসমানের প্রতি বিরাগভাজন। সেই সাথে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শামীম ওসমানের আসন থেকে অনেক শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বি রয়েছে। এবার বিএনপিও নির্বাচনে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা বেশি। আওয়ামীলীগের হাই কমান্ড চাইছেনা নারায়ণগঞ্জের মত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আসন হারাতে। এছাড়া আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জে দলীয় প্রার্থী নির্বাচন করা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর মতামতকেও গুরুত্ব দিবেন দলীয় প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আইভী নিশ্চয় শামীম ওসমানের নাম প্রস্তাব করবে না। তাই ইমেজ সংকটে থাকা ও নানা কারণে বিতর্কিত শামীম ওসমানকে এবার প্রার্থী নাও করা হতে পারে।