আজ বৃহস্পতিবার, ১৪ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ইজি বাইকে যাচ্ছে প্রাণ, টাকা গুনছে পুলিশ!

নিজস্ব প্রতিবেদক:
তিন চাকার ব্যাটারিচালিত গাড়ি ইজিবাইক। নারায়ণগঞ্জের অলি গলি থেকে শুরু করে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে গেছে জনপ্রিয় ও সমালোচিত এই বাহন। মধ্য ও নিম্ন বিত্তের প্রাইভেট কারও বলা হয়ে থাকে এটিকে।
রিক্সা থেকে চলাচলে ইজিবাইক গাড়ি সময় সাশ্রয়ী। রিক্সা ও সিএনজি থেকে ভাড়াও কম।

একসঙ্গে বেশি মানুষ যাতায়াত করতে পারে। অল্প টাকায় বেশি দূরত্বে যাতায়াত করা সম্ভব। সেইসঙ্গে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে ব্যাপকভাবে। চালকরাও হচ্ছেন সাবলম্বী। একই সঙ্গে তিন চাকার ব্যাটারিচালিত গাড়ি ইজিবাইক চাঁদাবাজী জেলা জুড়ে আলোচিত।

কে বা কারা এই চাঁদাবাজীর সঙ্গে জড়িত তা নগরবাসীর খুব ভালো করেই জানা। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে পাশাপাশি চালকরাও সাবলম্বী হচ্ছে তবে নগরীর যানজটের জটলা সৃষ্টিতেও ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে এই বাহনের। অনেকের মতে অদক্ষ চালকদের অসুস্থ্য প্রতিযোগিতার কারনে শহরে বিশৃঙ্খলা যেমন সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি করে অনেক তাজা প্রাণও প্রতিনিয়ত ঝড়ছে। ইজি বাইক দুর্ঘটনার কবলে পরে মরছে মানুষ অপর দিকে পুলিশের কতিপয় অসাধু সদস্যরা নিজেদের পকেট ভাড়ি করছে করছে বলে অভিযোগ করছে সাধারণ মানুষ।

নিষিদ্ধ হলেও এই শিল্পখাত বিস্তার লাভ করেছে অনেক বেশি। এখন ব্যবসায়ীদের পণ্য আমদানিতে লোন দিচ্ছে ব্যাংক। খোলা হচ্ছে একের এক এলসি।

নারায়ণগঞ্জ নগরীতে প্রবেশ করার জন্য বিভিন্ন পথে অবৈধ ইজি বাইক চলাচল করছে আর এ সকল ইজি বাইক গুলো যাতে করে শহরে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য নগরীর বিভিন্ন মোড়ে ও পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে কিন্তু এ সকল স্থান গুলোতে দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা ট্রাফিক পুলিশের সাথে দেখা যায় অবৈধ ইজি বাইক চালকদের। ট্রাফিক পুলিশ কে ম্যানেজ করার জন্য কৌশলীতা অবলম্ভন করতে। এছাড়া চাষাড়া এলাকায় প্রবেশ করে পূনরায় সে পথে ফিরে গেলে সেখানে থাকা নির্ধারিত ট্রাফিক পুলিশকে টাকা দিয়ে যেতে হয় এমন অভিযোগ করেছে এ সকল নগরীর সড়ক প্রবেশরত অবৈধ ইজি বাইক চালকরা।

গতকাল সরেজমিনে খানপুর ৩০০শয্যা হাসপাতালের সামনে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশের সাথে অবৈধ ইজি বাইক চালকের সমযোতার কৌশল বিনিময়। চালকরা বিভিন্ন ভাবে এ সকল ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদেরকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে। এছাড়া সরকারি তোলারাম কলেজ রোড এলাকায় দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা এ সড়কে চলাচলরত অবৈধ ইজি বাইক গুলোকে থামিয়ে চালকদের গাড়ি পুলিশ লাইনে নেওয়ার ভয় দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ করে এ সড়কে চলাচলকারী অবৈধ ইজি বাইক চালকেরা।

অবৈধ ইজি বাইক চালক আলামিন বলেন, চিটাংরোড এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে গাড়ি নিয়ে আসলে খানপুরে থাকা ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের চোখ ফাকি দিতে হয় আর যদি তাদের কাছে ধরা পড়ে যাই তবে টাকা ছাড়া গাড়ি নিয়ে আসা সম্ভব নয়। অন্যদিকে কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা নজরুল মিয়া বলেন, এখানে বিভিন্ন সময় দেখা যায় ইজি বাইক চালক ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের সাথে ঝামেলা চলছে এছাড়া এদের মধ্যে গাড়ি ধরা নিয়ে টাকা পয়সার লেনও চলে।

অভিযোগের বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের পুলিশ পরির্দশক শরফুদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,মেট্রোহল খানুর এলাকায় প্রবেশ পথে অবৈধ ইজি বাইক নিশিদ্ধ করা হয়েছে যাতে করে এ সকল অবৈধ ইজি বাইক নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে। এ ব্যাপারে আমাদের দু’জন পুলিশ সদস্য কাজ করে থাকে। দায়িত্বে থাকাবস্থায় অবৈধ ইজি বাইক চলাচল বন্ধ রাখতে তারা নিয়োজিত । আর পুলিশ সদস্যরা যদি দায়িত্বে অবহেলা করে অথবা কোন আর্থিক ভাবে লেনদেন করে তবে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য নিজে দায়ি থাকবে। কেউ যদি মোখিক ভাবে অভিযোগ না দিয়ে লিখিত ভাবে অভিযোগ দেয় তাহলে তাদের বিরূদ্ধে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহন করবে।

অন্যদিকে,পুলিশের বিশেষ শাখার পুলিশ পরির্দশক সাজ্জাত রোমান বলেন, এ সকল ইজি বাইকগুলো আমদানী নিষেধ। নগরীর ইজিবাইকগুলোর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও সকল জনপ্রতিনিধিরা সহযোগিতা করলে এগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। এছাড়া যদি কোন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ইজি বাইক সংক্রান্তে কোন অর্থ লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া যায় সে সকল ট্রাফিক পুলিশদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

প্রসঙ্গত ৫ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার দুপুর ১টায় নগরীর গলাচিপা এলাকার আউয়াল চেয়ারম্যান বাড়ির সামনে চকলেট কিনে ফেরার পথে অটোরিক্সার ধাক্কায় নুসরাত (৭) আক্তার নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। জানা যায়, শিশু নুসরাত তার মায়ের সাথে কোচিং করার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়। রাস্তার অপর পাশের মুদির দোকান থেকে চকলেট কিনতে যায় নুসরাত। চকলেট কিনে ফেরার পথে দ্রুতগতিতে আসা অটোরিক্সাটি গতি রোধ করতে না পেরে নুসরাতের উপর দিয়ে চালিয়ে দেয়।
ঘটনার পরপরই পরিবারের মধ্যে শুরু হয় কান্নার আহাজারি। নুসরাতের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষুব্দ হয়ে এলাকাবাসী গলাচিপা চেয়ারম্যান বাড়ী এলাকার সকল প্রকার অটোরিক্সা চলাচল বন্ধ করে দেয়। পাশাপাশি বেশ কিছু অটোরিক্সা তারা ভাংচুর করে।

ইচ্ছে খুশী মতো গাড়ী চালালে তো আর হয়না। বাচ্চা মেয়েটি দোকান থেকে চকলেট কিনে রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুত গতিতে আসা অটোরিক্সাটি তার উপর দিয়ে চালিয়ে দেয়। সাথে সাথেই মেয়েটি মাটিতে লুটিয়ে পরে। মেয়েটি স্বাভাবিক ভাবেই রাস্তা পার হচ্ছিল।

তিন চাকার ব্যাটারিচালিত গাড়ি ইজিবাইক অযোগ্য ও অদক্ষ চালকদের নিয়ন্ত্রনে থাকায় সড়কে ব্যাপক নেরাজ্যের সৃষ্টি হচ্ছে এবং কমল মতি শিশু থেকে শুরু বিভিন্ন বয়সি মানুষের জানমালের ক্ষতি হচ্ছে পাশাপাশি অনেক মানুষকে পারিজমাতে হয়েছে না ফেরার দেশে।

২০০১ সালে ৫ মে ইজিবাইকের আমদানি বন্ধে সরকারী সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ২২ জাতীয় মহাসড়কে অটোরিক্সাসহ তিন চাকার সব ধরনের যানাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে সারাদেশে ১০ লাশের বেশি এ গাড়ি চলছে। প্রতিমাসে বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে দুই হাজার গাড়ি। অথচ সরকারী ভাবে গাড়ি আমদানি নিষিদ্ধ। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণায় তেকে পার্টস আমদানির সঙ্গে যুক্ত ৩০টির বেশি প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে গোটা দেশেই নিষিদ্ধ ও অনুমদোদনহীন এই পরিবহনের সুবিধা নিচ্ছে বেশিরভাগ মানুষ।