আজ শুক্রবার, ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আড়াইহাজারে ৪ যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশসহ না.গঞ্জে ৫ খুন

আড়াইহাজারে ৪ যুবকের গুলিবিদ্ধ

আড়াইহাজারে ৪ যুবকের গুলিবিদ্ধ

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ৪ যুবককে নৃসংশভাবে মাথার পেছনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ের পাশে রক্তাক্ত থেতলানো লাশ পাওয়া গেছে। খুনের ঘটনায় জেলা জুড়ে আতংক বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নড়ে চড়ে বসেছে। একের পর এক খুনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন জেলা সুশীল সমাজ।
জানা গেছে, জেলার আড়াইহাজার উপজেলায় ৪ যুবকের মাথার পেছন দিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আরএমও আসাদুজ্জামান। নিহতদের প্রত্যেকের মাথার পেছন দিকে শর্টগান দিয়ে গুলি করা হয়েছিল।
ভোরে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের সাতগ্রাম ইউনিয়নের পাচঁরুখী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে ওই লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম আব্দুল হক জানান, ভোরে এলাকাবাসী জানালে পুলিশ গিয়ে লাশগুলো উদ্ধার করে। এসময় লাশের পাশে পড়ে থাকা অবস্থায় ২টি দেশীয় পিস্তল ও ১টি প্রাইভেটকার (নোয়া- ঢাকা মেট্রো-চ-১৩-০৫০১) জব্দ করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, প্রতিটি লাশের মাথাগুলো থেঁতলে দেওয়া হয়েছে যাতে পরিচয় না জানা যায়। তাদের প্রত্যেকের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ এর মধ্যে। তবে শরীরে কোন গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে, দুর্বৃত্তরা অন্য কোথাও থেকে হত্যা করে এখানে লাশগুলো ফেলে গেছে। যাতে পরিচয় শনাক্ত না করা যায় সে জন্যই মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়েছে। এরা ডাকাত দলের সদস্য কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
সাতগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাহমুদ বলেন, স্থানীয়রা জানালে আমিও ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশগুলো পড়ে থাকতে দেখি। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না। তবে রাতে কেউ কোন গুলির শব্দও পায়নি। লাশগুলো স্থানীয়রা কেউ চিনতে পারেনি।
এদিকে ব্যস্ত মহাসড়কের পাশে রক্তাক্ত লাশ পাওয়ার পর সকাল থেকে শত শত মানুষ সেখানে ভিড় করে। বিকেলে নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিহতদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আরএমও আসাদুজ্জামান জানান, নিহত ৪ জনের মাথার পিছন দিকে শর্টগানের গুলি করা হয়েছে। নিহত ৪ জনের মধ্যে একটি পরিবার হাসপাতালে আসলেও এখনো তারা লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি।
জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া গুলিবিদ্ধ ৪ যুবকের মধ্যে একজনের পরিচয় সনাক্ত হয়েছে। তার নাম লুৎফর মোল্লা (৩৬)। তার বাবার নাম মনসুর মোল্লা। সে রাজধানী ঢাকার রামপুরায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন। পেশায় গাড়ি চালক। বেলা পৌনে ৩টায় নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে তার স্ত্রী রেশমা আক্তার শরীরের টিশার্ট দেখে লাশ সনাক্ত করেন। এসময় তিনি হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তার সাথে আসেন লুৎফরের বড় ভাই ইউনুছ মোল্লা ও অন্যান্য স্বজনরা। স্বজনদের কান্নায় হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।
নিহত লুৎফরের স্ত্রী রেশমা জানান, তার স্বামী বাস চালক। শুক্রবার বিকাল ৫ টার দিকে বাসা থেকে বের হন। সন্ধ্যা ৭ টার দিকে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামেন। রাত ১ টায় স্বামীর সাথে তার শেষ বারের মতো কথা হয়। এরপর থেকেই স্বামীর মোবাইল ফোন বন্ধ পান। গতকাল সকালে টেলিভিশনে ৪ জনের লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জ হাসপাতাল মর্গে ছুটে আসেন। নিহত লুৎফর মোল্লার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে রিশাদ ৮ম শ্রেনী ও মেয়ে লিজা ৪র্থ শ্রেনীতে পড়ে।
অপরদিকে, রূপগঞ্জ উপজেলার এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কে অজ্ঞাত এক যুবকের (৪০) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাকে হত্যার পর মুখের একপাশে থেতলে দেয়া হয়েছে। পুলিশের ধারনা ডাকাতদের ডাকাতি করা মালামাল ভাগাভাগি করতে গিয়ে প্রতিপক্ষ তাকে হত্যা করে সড়কের পাশে ফেলে রেখে যায়। উপজেলার এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের কুশাব জামে মসজিদের পাশে এ ঘটনা ঘটে।
ভুলতা পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম জানান, সকালে এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে কুশাব জামে মসজিদের পাশে লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। পরে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। শেষ পর্যন্ত লাশের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
কুশাব জামে মসজিদের ঈমাম মাওলানা আব্দুল মতিন জানান, ফজরের নামাযের আগেই সড়কে পুলিশের একাধিক গাড়ি ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়। নামাজ শেষের পরপর কিছু পোশাকধারী পুলিশ সড়কটি বন্ধ করে দিয়ে মুসুল্লিদের চলাচলে বাধা দেয়। কিছুক্ষণ পরেই ঘটনাস্থলে লাশটি পড়ে থাকতে দেখেন তারা। সকাল ৮ টার দিকে অপর একদল পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের পুলিশ যারা জীবন রক্ষাকারী হিসেবে পরিচিত তারা নিরপেক্ষ হতে হবে। পুলিশ যতক্ষন পর্যন্ত নিরপেক্ষ না হবে ততক্ষন পর্যন্ত সাধারন মানুষের জীবনের নিরাপত্তা থাকবে না। পুলিশকে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য সাংবিধানিক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। যেখানে পুলিশ থাকাকালিন হত্যাকান্ড সংগঠিত হয় তবে তো বোঝাই যায় পুলিশ একেবারে নিরপেক্ষ নয়। নাগরিক কমিটির সাধারন সম্পাদক হিসেবে মনে করি পুলিশের নিরপেক্ষ হওয়া দরকার এবং যে সংবিধানে শপথ নিয়ে তারা যোগ দেন সেই শপথটা তারা যেন রক্ষা করেন। শপথ রক্ষা করার দায়িত্ব সকলের। পুলিশ সাধারন মানুষের জীবন জীবিকারও দায়িত্ব গ্রহণ করে। পুলিশ নিরপেক্ষ না হওয়া পর্যন্ত দেশে খুন বন্ধ হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা হবে না। দেশের শান্তি চলে যাবে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্বিক) মনিরুল ইসলাম জানান, আড়াইহাজারের ঘটনায় আমরা ধারনা করছি দুটি গ্রুপের মধ্যে পাল্টা প্রতিশোধ নিতে এ হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। এখনো পর্যন্ত সব লাশের পরিচয় পাওয়া যায় নি। তাদের কেউ অভিযোগ না করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা নেবে। ঘটনার জের খুঁজতে তদন্ত চলছে।