আজ সোমবার, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

তিনি কী আন্তরিক নন

সংবাদচর্চা রিপোর্ট :

নারায়ণগঞ্জে হকার ইস্যু নিয়ে বিগত বছরগুলোতে পরিস্থিতি কম উত্তপ্ত হয়নি। অন্যসকল সমস্যা ছাপিয়ে হকার সমস্যাটি এতোটাই প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে যে, এ নিয়ে নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর উপর ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনাও ঘটেছে প্রকাশ্য দিবালোকে। একপ্রকার মানবঢাল তৈরি করে সেই যাত্রায় শহরবাসী তাকে রক্ষা করলেও আইভী হকারদের উপদ্রব থেকে জনসাধারণকে রক্ষার শত চেষ্টা করেও পারছেন না সফল হতে। এবার অবশ্য তিনি রাখঢাক না রেখেই বরাবরের মতো এই সমস্যা জিইয়ে রাখার জন্য সরাসরি দায়ী করলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানকে। বহুল আলোচিত-সমালোচিত এই এমপিকে সামনে রেখেই আইভী হকার সমস্যা সমাধানের পথও বাতলে দিলেন।
গত ৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে শহরের বিকেএমই ভবনে আয়োজিত নাগরিক সমস্যা সমাধানে করনীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেখা মেলে নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, জাতীয় সংসদের হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু এমপি, সেলিম ওসমান এমপি, শামীম ওসমান এমপি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীলের। স্পষ্টভাষী হিসেবে পরিচিত মেয়র আইভী তার বক্তব্যে হকার সমস্যার সমাধান চেয়েছেন শামীম ওসমানের কাছেই। এর কারণও ব্যাখা করেছেন তিনি সুনির্দিষ্টভাবে। আইভীর ভাষায় ‘শামীম ভাই যদি রহিম মুন্সি (নারায়ণগঞ্জ হকার্স লীগের তথাকথিত সভাপতি) ও আসাদুজ্জামানকে (হকার্স সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক) ডেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে রাস্তা খালি করতে বললেই হয়। ওরা দুই মিনিটের মধ্যে পালাবে। শামীম ভাই আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি বলছি, ভাই আপনি যদি বলেন কালকে থেকে হকার বসবে না বঙ্গবন্ধু রোডে, তাহলে আর একজনও বসবে না। আপনি খালি এইটা বলেন দাঁড়িয়ে। শামীম ভাই এইটা বলবে না, কিন্তু বললে আসলেই থাকতো না। ওরা কই পালায়া যাবে খুঁজেও পাবেন না।
আইভীর ওই বক্তব্যের জবাবে অবশ্য ‘কৌশলী’ শামীম ওসমান পরোক্ষভাবে হকারদের পক্ষই নেন। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, কারো পেটে লাথি দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব না। এমন বক্তব্য যখন চলছিলো, মিলনায়তনে উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যেও তখন চলে নানা গুঞ্জন। পেটে লাথি না দেওয়ার সাথে মানবতার যোগসূত্র খুঁজে পাওয়ার অনেক চেষ্টা চললেও ফুটপাত থেকে উত্তোলন করা কোটি কোটি টাকা চাঁদায় কারো কারো পেট চালানোর বিষয়টি যখন যোগ হয়ে যায়, তখন তা যে গলাবাজির রাজনীতিরই নামান্তর, এমন সমীকরণই মিলে যাচ্ছিলো যেন বারবার। চাঁদাবাজ রহিম মুন্সি ও আসাদুজ্জামান কার লোক, কাদের আশীর্বাদে সরকারের মালিকানাধীন ও জনগণের চলাচলের ফুটপাত রীতিমতো ভাড়া দিয়ে তারা টাকা তোলেন, সেই টাকা উপর মহলের কতোটা সিঁড়ি পেরিয়ে পৌঁছে যায় হোমড়াচোড়াদের কাছে, সেসব প্রশ্নও অবধারিতভাবে চলে আসে সামনে।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ফুটপাতের এসব চাঁদাবাজেরা যে এমপি শামীম ওসমানের কথামতোই চলে, আইভীর এমন মন্তব্যের কোনোপ্রকার প্রতিবাদ করেননি শামীম ওসমানও। তাহলে কোটি কোটি টাকা চাঁদা ওঠে কার নির্দেশে বা প্রশ্রয়ে, সেই সহজ যোগের অঙ্কটুকু তো দুইয়ে দুইয়ে বাইশ মেলানো কুটিল রাজনীতিবিদ না হয়েও যে কারো পক্ষে মিলিয়ে ফেলা যে কারো পক্ষেই সম্ভব।
তবে নারায়ণগঞ্জ শহরে ফুটপাতে চাঁদাবাজির রমরমা অবস্থার পরিসংখ্যান জানলে চক্ষু চড়কগাছ হবে সকলেরই। গণমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, শহরে ফুটপাত থেকে চাঁদাবাজরা বছরে ২ কোটি ৫ লাখ টাকা আদায় করছেন। ক্ষমতাসীন দলের পরিচয় দিয়ে ও প্রভাবশালী মহলকে বিভিন্ন উপায়ে চলে ম্যানেজ চাঁদা তোলার মহোৎসব। তবে নগরবাসী চায় মুক্তভাবে ফুটপাত দিয়ে চলাচল করতে, কিন্তু এতে বাধ সেধেছে ‘তুমি হাকিম হইয়া হুকুম করো পুলিশ হইয়া ধরার’ চিরাচরিত কৌশল। এখন দেখার বিষয়, শহরবাসীর বহুল আরাধ্য স্বপ্ন অবারিত, হকারমুক্ত ফুটপাত আদৌ কোনোদিন আলোর মুখ দেখে কি না। এবং সাংসদ শামীম ওসমান নীরবতা ভেঙে আন্তরিক হোন কিনা।