এম.এ মোমেন
গত কয়েকদিনের কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশায় শীত বস্ত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের সব অঞ্চলেই শীত জেঁকে বসেছে। সকাল-সন্ধ্যা শীত অনুভুত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তৈরি ও বিদেশ থেকে আমদানি করা শীতবস্ত্র মেলায় পাওয়া যাচ্ছে। শীতের কাপড়ের চাহিদা অনেক বেশি। কাপড়ের মানও ভালো। গরিব, দুঃস্থ, নিঃস্ব, ছিন্নমূল ও অসহায়রা ফুটপাত থেকে শীতবস্ত্র কিনছেন। তবে স্বচ্ছল ও উচ্চ বিত্তদের কেউ কেউ মার্কেট থেকে কিনছেন। কেউবা বাণিজ্য মেলার স্টল থেকে শীতবস্ত্র কিনছেন। শীতবস্ত্রের স্টলে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত শীতবস্ত্রের স্টলে ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ছে। বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। ব্যবসায়ীরাও খুশি।
নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোর সব বয়সের মানুষের জন্য নানা রকম শীতবস্ত্রের পণ্য সাজিয়েছেন বাণিজ্য মেলার স্টলে। এর মধ্যে চাদর, শাল, কোট, মাফলার, টুপি, সোয়েটার, জ্যাকেট, ব্লেজার, মোজা, হাত মোজা, পা মোজা, কানটুপি, কম্বল ও ট্রাউজারের চাহিদা বেশি। শীতের পোশাক কিনতে স্টলে ভিড় করছেন তারা। উলের তৈরী সোয়েটার, টুপি সবই মিলছে মেলায়। প্রতিদিন বাড়ছে ক্রেতার সংখ্যা। শীতের পোশাকের পাশাপাশি সাইজ ও মানভেদে ৭০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে কম্বল। অনেকেই কম্বল কিনে বাসায় ফিরছেন।
শীতের তীব্রতায় দুঃস্থ, নিঃস্ব, ছিন্নমূল, গরিব-দুঃখী, বস্ত্রাভাবী শিশু, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষের নিদারুণ কষ্ট। অসহায়দের এ কষ্ট নিবারণে রূপগঞ্জের তারাবো পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজী মেলা থেকে কম্বল কিনে বিনামূল্যে বিতরণ করেন। শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শীতবস্ত্রের স্টলে ছুটে যাচ্ছেন ক্রেতারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাণিজ্য মেলার শীতবস্ত্রের স্টলগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়। ধুম পড়েছে কেনাকাটার। মেলায় ঘুরতে আসা অধিকাংশ ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা শীতবস্ত্রের স্টল পরিদর্শন করছেন। পছন্দের শীতবস্ত্র খুঁজছেন। কেউবা তা কিনে বাসায় ফিরছেন। দাম একটু বেশি। মান ভালো হওয়ায় ক্রেতাদের কোন অভিযোগ নেই।
ভারতীয় কাশ্মিরী শালের দোকান কর্মচারী তাপস সাহ বলেন, দোকানের পজিশন, স্টল নির্মাণ, সাজসজ্জা ও কর্মচারীর বেতন পুষিয়ে নিতে পণ্যের দাম একটু বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে পণ্যের গুণগত মান ভালো। চাহিদাও বেশ। বিক্রিও হচ্ছে দেদারসে। শীতবস্ত্র বিক্রিতে মূল্যছাড় দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই ঘুরেফিরে শীতবস্ত্রের স্টলে ভিড় করছেন। তারা দেখেশুনে কিনছেন শীতের পোশাক। কেউ কেউ শাড়ির রঙের সাথে মিলিয়ে শাল কিনছেন। কাশ্মিরী শাল ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩০ হাজার পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে ৫০ ভাগ ছাড়। ব্লেজারের স্টলগুলোতে কলেজ পড়ুয়াদের ভিড় লেগেই থাকে। প্রতিটি ব্লেজার ১ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এখানে ২০ ভাগ ছাড়। চামড়ার তৈরি কোর্ট ব্লেজারের দাম একটু বেশি। এখানে ৭ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত একএকটি ব্লেজার বিক্রি হচ্ছে। এখানেও ৩০ ভাগ ছাড় রয়েছে।
ড্রেসলাইনের বিক্রয় প্রতিনিধি সাজিদ প্রধান বলেন, কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশায় শীতবস্ত্রের চাহিদা বেশি। ভালো মানের পাওয়ায় অনেকেই মেলা থেকে শীতবস্ত্র ক্রয় করছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শীতবস্ত্রের স্টলের কর্মচারীরা ব্যস্ত রয়েছে।
ক্লাসিক্যাল হোমটেক্সের বিক্রয় প্রতিনিধি শাহনাজ পারভীন বলেন, মেলায় ঘুরতে এসে শিশু, কিশোর, নারী, পুরুষ সকলেই শীতবস্ত্র ক্রয়ে ঝুঁকছেন। কিনছেনও তারা।
গাজীপুরের জয়দবপুর থেকে জনকল্যাণ ফার্মেসীর মালিক মোঃ মশিউর রহমান তারেক স্বপরিবারে মেলায় এসেছেন। ছবি তোলা আর খাওয়া ছাড়া মেলায় প্রথমে কিছু কিনতে চাননি। একসময় ছোট মেয়ের অনুরোধে শীতবস্ত্রের স্টলে তাঁরা যান। সেখানে গুণগত মান ও পছন্দের হওয়ায় কেউ কাশ্মিরী শাল, কেউ সোয়েটার, কেউবা ট্রাউজার এমনি করে তাঁরা একএক করে পরিবারের সকলের জন্য শীতবস্ত্র ক্রয় করেন। দাম হাতের নাগালে হওয়ায় তাঁরা খুশি।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, শুধু শীতবস্ত্রের স্টল নয়, যেকোন স্টলেই নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।