সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
নারায়ণগঞ্জ মহানগরের ২৭টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যক্রম চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির কাঁধে ভর করে। এতে করে নতুন নেতৃত্ব যেমন সৃষ্টি হচ্ছে না, তেমনি দিনকে দিন সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হচ্ছে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা এই দলটি। মহানগর কমিটির সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে তারা ২৭টি ওয়ার্ডে কমিটি দিতে পারেনি। এতে করে দল চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল।
সূত্র মতে, আনোয়ার হোসেনকে সভাপতি ও অ্যাড. খোকন সাহাকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা হয়েছিলো নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি। এর দুই বছর তিন মাস পর ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। সে হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগের বয়স প্রায় আট বছর। দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে মহানগরের ২৭টি ওয়ার্ড কমিটি এখনও করতে পারেনি ক্ষমতাসীন এই দলটি। যা বর্তমান কমিটির নেতাদের সব থেকে বড় ব্যর্থতা বলে মনে করা হচ্ছে।
বলা হচ্ছে, তিন বছর মেয়াদী মহানগর আওয়ামী লীগ কমিটিরও মেয়াদ শেষ হয়েছে আরও দুই বছর আগে। বর্তমানে যে কমিটি আছে গঠনতন্ত্র মোতাবেক সেটির কোনো বৈধতা নেই। একইভাবে মহানগর অন্তর্ভূক্ত ২৭টি কমিটি আরও আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও বর্তমান কমিটি নতুন করে এসব ওয়ার্ডে কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। নিজেদের মধ্যে অন্তকোন্দলের কারণে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দূরত্বের কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্র বলছে, ২৭টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কোনো কমিটি নেই। যা আছে তা বহু আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। নতুন করে কমিটি গঠন না করতে পারায় এসব ওয়ার্ডে সৃষ্টি হচ্ছে না নতুন কোনো নেতৃত্ব। এমনকী সাংগঠনিক চর্চাও হারিয়ে গেছে ওয়ার্ডগুলো থেকে। আগামীতে এই ভুলের মাশুল ব্যাপকভাবেই দিতে হবে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে।
এদিকে কমিটি গঠন না হওয়ার পেছনে অনেকেই মনে করেন, এককভাবে একটি পরিবার মহানগর আওয়ামী লীগকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই পরিবারের বাইরে গিয়ে কিছু করার সক্ষমতাও নেই নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের। কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সদিচ্ছা থাকলেও সেটিকে পূর্ণতা দিতে পারেনি খোকন সাহার কারণে। তিনি পুরোপুরি ভাবেই একটি পরিবারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করেন। তার সাথে দীর্ঘদিন ধরেই দূরত্ব চলছে সভাপতির। বলা যায় কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে মাইনাস করেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশ করেছেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্বও চরম আকারে রূপ নিয়েছে। সামনে এই দ্বন্দ্ব নিরসনের কোনো উপায় আছে বলেও মনে করেন না কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
অনেকেই বলছেন, ক্ষমতাসীন হওয়ার পরও সাংগঠনিকভাবে একেবারে অগুছালো নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ। যা দলের জন্য চরম হতাশাজনক বলেও মনে করা হচ্ছে। একই সাথে আগামীর জন্য বিষয়টিকে অসনি সংকেত বলেও মনে করছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। তারা মনে করেন, পরিবার কেন্দ্রিক যে রাজনীতি চলছে, তার থেকে বেরুতে না পারলে আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানো সম্ভব নয়। দলের স্বার্থ রক্ষায় পরিবার কেন্দ্রিক রাজনীতি পরিহার করা এখন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে বলেই তারা মনে করেন। নয়তো আগামীতে দুই একজনের কাঁধে ভর করে ধুঁকে ধুঁকে চলতে হবে বর্তমান ক্ষমতাসীন এই দলটিকে।
২৭টি ওয়ার্ডে কমিটি নেই জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত বলেন, আগে সভাপতি সাধারণ সম্পাদক দুজন এক সঙ্গে ছিলেন। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার কারণে কমিটিগুলো আর গঠন করা সম্ভব হয়নি।
কমিটি না করতে পারাটাকে তিনি ব্যর্থতা হিসেবেই মনে করছেন। এবং আগামীতে এই কমিটি গঠন করতে না পারার খেসারতও দিতে হবে বলে মনে করেন এই তরুণ রাজনীতিক। তার মতে, পরিবার কেন্দ্রিক রাজনীতিতো বড় একটা ফ্যাক্টর। পাশাপাশি করোনার বিষয়টিও রয়েছে। তবে, ব্যর্থ হয়েছি এটাই মূল। কেন কমিটি গঠন করতে পারিনি, কি কি সমস্যা তা কেন্দ্রীয় হাই কমান্ডেও জানানো হয়েছে।