বিপ্লব হাসান : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গাউছিয়া এলাকায় ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে জড়ো হয় খেটে খাওয়া শ্রম বিক্রির ওইসব দরিদ্র মানুষগুলো। সকাল ৬-৭টার মধ্যে দিনমজুরদের দেখা মিলে এই শ্রমের হাটে। প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে এ হাটে শত শত মানুষ জড়ো হয়। কারো হাতে কোদাল, কারো কাঁধে ঝুঁড়ি আর নানা সরঞ্জাম নিয়ে নিজেদের শ্রম বিক্রির জন্য অপেক্ষা করে। ক্রেতা-মহাজনদের দর কষাকষিতে দিন ৩৫০ থেকে ৪৫০ বা ৫০০ টাকায় বিক্রি হয় তারা। এই দামে মহাজন, মালিক ও সামর্থবানদের প্রয়োজনীয় কাজ সারাতে হাট থেকে এসব মানুষদের কিনে নেয়। কিন্তু গত ৩ মাস ধরে করোনা ভাইরাসে ঝেঁকে বসায় মানুষ বিক্রির হাটে চরম মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। ঘরে বসে থাকতে আর পারছে না শ্রমজীবী মানুষগুলো। দীর্ঘদিন লকডাউনের পর জীবিকার তাগিদে আজ শ্রমজীবী মানুষগুলো বেড়িয়ে এসেছে শ্রম বিক্রির হাটে। জীবীকা নির্বাহে শ্রম বিক্রি করতে শ্রমের হাটে জড়ো হয়ে থাকে শ্রমজীবী মানুষেরা । কিন্তু করোনা ভাইরাস মহামারিতে মানুষ বিক্রির এই হাটের দৃশ্য একেবারেই পাল্টে গেছে। তবে এখানে আর আগের মতো শ্রম বিক্রি হয় না। করোনা ভাইরাস মহামারিতে অচলাবস্থার কারণে বহুমাত্রিক সংকট দেখা দিয়েছে শ্রমজীবী মানুষের ঘরে। বেচাকেনা একেবারেই কমে গেছে। আর এতে করে চরম অনিশ্চাতায় পড়েছে প্রতিদিন হাটে বিক্রি হওয়া প্রায় শতাধিক মানুষ। বৃহস্পতিবার (১৮জুন) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক শ্রমজীবী মানুষ জড়ো হয়ে শ্রম বিক্রি করার জন্য অপেক্ষা করছে। সেখানে পঞ্চাশার্ধ্ব বয়েসের দিনমজুর আনোয়ার হোসেন জানান, জমিজামা বলতে আমার কিছুই নেই। শ্রম বিক্রি করেই আমার সংসার চলে, আর কাজ না পেলে অনাহারে অর্ধহারে থাকতে হয়। এই হাটে নিজেকে বিক্রির জন্য অপেক্ষমান উপজেলার ভূলতা এলাকার নাসির উদ্দিন জানান, গত ১০ বছর ধরে তিনি এই হাটে নিজেকে বিক্রি করছেন। মাটি কাটা থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজ করে থাকেন তিনি। আর এজন্য প্রতিদিন ২০০-২৫০ টাকা হারে শ্রমের দাম পান। কিন্তু গত চারদিনে তিনি নিজেকে বিক্রি করতে পারেননি। করোনা তো রয়েছেই তার উপর প্রচ- ঝড়-বৃষ্টি তাই এ হাটে ক্রেতারা আসতে পারছেন না বলে জানান শ্রম বিক্রি করে খাওয়া এই মানুষটি। আরেক দিনমজুর জমির আলী জানান, করোনা ভাইরাসের আগে আমাদের তেমন কোনো সমস্যা হয় নাই। কিন্তু করোনা ভাইরাস মহামারি আসায় আমরা কাজ ক্যাম পাই না। করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হয় না। তাই শ্রম বিক্রি কমে গেছে। আর এ কারণেই আমাদের ঘরে অভাব অনটন শুরু হয়। এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম বলেন, মানুষ বিক্রির হাটের কথা আমি শুনেছি। তবে আর্থিক অভাব অনটনের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ যদি অনাহারে থাকে বা অভাব অনটনে থাকে তাহলে তার ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়া হবে।