রাজনৈতিক প্রতিবেদক
এক দিন আগেই নির্বাচন বয়কট করেছে বিএনপি। যার নেপথ্যে ছিল নানা অভিযোগ আর অনিয়ম। নির্বাচনের পূর্বেই কমিশনারের প্রতি অনাস্থা, ভোটগ্রহণের স্থান পরিবর্তনসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরেছিল বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তাদের দাবির তোয়াক্কা না করে আওয়ামী লীগের করা এমন একতরফা নির্বাচন মেনে নিতে পারছেনা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের অন্যান্য নেতাকর্মীরা।
আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, অগণতান্ত্রিক একটি পরিবেশে এই নির্বাচনটি হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে এটি একটি কলঙ্ক হয়ে থাকবে। ইতিপূর্বে এই ধরণের একতরফা নির্বাচন নারায়ণগঞ্জ বারে হয় নি। এই ধরণের নির্বাচন আমরা আশা করি নি। এটি অত্যন্ত খুবই দুঃখজনক।
তিনি আরও বলেন, এটি একটি স্বৈরাচারী মনোভাব। সেই সাথে স্বৈরতান্ত্রিক পরিবেশ দেশে বিরাজমান। সেটার প্রভাব জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় নির্বাচন সহ এই ক্যাম্পাস ভিত্তিক নির্বাচনেও আমরা দেখতে পেয়েছি।
একই বিষয়ে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল বলেন, নির্বাচন একটি খেলার মতো। সেখানে বিভিন্ন দল থাকবে যারা খেলবে। একটি দলকে হারিয়ে আরেক দল জয়লাভ করবে। এমনটাই হয় নির্বাচনেও। কিন্তু এই নির্বাচনে তো তেমন কিছুই ছিলো না। না ছিলো কোন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না ছিল কিছু। তারা তাদের মতো করেই সবকিছু করলো। শুরু থেকেই বিএনপিপন্থী আইজীবীরা নির্বাচন কমিশনার পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে। এরপর নির্বাচনের স্থান পরিবর্তন সহ নানা অভিযোগ তুলেছে। এসকল অভিযোগের কোন তোয়াক্কা না করে গণতন্ত্র না মেনে তারা নির্বাচন কার্যক্রম অব্যহত রাখলো। আমরা কখনোই এমনটা আশা করি না। আমরা চেয়েছিলাম গণতান্ত্রিক পরিবেশে সুষ্ঠ একটি নির্বাচন হবে নারায়ণগঞ্জ বারে। কিন্তু তারা আমাদের হতাশ করলো।
মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তো আর নির্বাচন হয়নি। যা হয়েছে তা পূর্ব নির্ধারিত। আমরা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে একটি প্যানেলকে জোর করে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। যারা নিজ দলেরই গণতন্ত্র রক্ষা করতে পারলো না তারা বিরোধি দলের গণতন্ত্র কিভাবে দিবে। নির্বাচন কমিশনার নিয়ে শুরু থেকেই একটা বিবাদ ছিলো। যেহুতু সর্বমোট ৫জন নির্বাচন কমিশনার। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুইটি গ্রুপ ছিলো। আমাদের দুইজন নির্বাচন কমিশন তো রাখা যেতো। দুইজন না হলে একজন তো দেয়া যেতো। হঠাৎ করে ভোটের আগের দিন নির্বাচনের স্থান পরিবর্তন জোর-জুলুমের একটি প্রক্রিয়া ছিলো বলে আমার কাছে মনে হয়। যদিও আমরা আইনজীবী নয় তবুও তাদের একটি অংশ আমরা। কারণ কোর্ট এখন আমাদের জীবনের বড় একটি অংশ। তারা নির্বাচন করে জয়লাভ করেছে ঠিকই তবে এমন একতরফা নির্বাচনের কোন মূল্য নেই কোন বিরত্ম নেই।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি বলেন, আমরা সবসময়ই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী। যখনই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কোন কিছু করা হয় তখনই আওয়ামী লীগ সেখানে হস্তক্ষেপ করে এবং সবকিছুই একতরফা করার চেষ্টা করে। যে নির্বাচন কমিশন করা হয়েছে তা ছিলো একতরফা। বিএনপি প্যানেলের কোন দাবি তারা মানে নাই। তারা যেভাবে একটি ইসতেহার দিয়েছিলো তা তারা করে নাই। আর এ কারণেই বিএনপি এই নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তারা কখনোই চায়না গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হোক। কারণ তারা জানে যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হলে তারা বিপুল ভোটে হারবে। আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। নারায়ণগঞ্জের বার নির্বাচনে এমন একজন কমিশনার দেয়া হবে আমরা ভাবতে পারি নাই। এমন নির্বাচনের আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েম বলেন, তারা এককভাবে তাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলীয় প্রার্থীদের পাশ করানোর জন্য তারা এমনটা করেছে। যা আমরা কখনোই আশা করিনি। এই কারণেই বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে গেছে। সত্য বলতে গেলে তারা আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলো যে কোনটার পর কোনটা করবে। বিএনপির দাবি তারা কখনোই মেনে নেবে না। কারণ এই দলটি তো জণগনের। জণগনের দল বিধায় বিএনপি সবসময় নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানায়। তাই বিএনপি কোন দাবি মেনে নেয়া হয় না। আর বিএনপির দাবি যদি মানা হয় তাহলে তো তারা বিপুল ভোটে হেরে যাবে। এই কারণেই তারা নির্বাচনের স্থান পরিবর্তন করলো। ইচ্ছেখুশী সিদ্ধান্ত নিলো। দেশটা তো সবার। আওয়ামী লীগের যারা আছে তারা এ কাজগুলো ভালো করছে না। আগামী প্রজন্ম যারা আছে এদের কাছে তারা কী জবাব দিবে?
প্রসঙ্গত, বার্ষিক সাধারণ সভা থেকেই নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এর প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করে বিএনপি পন্থী আইনজীবীসহ সাধারণ আইনজীবীরা। তারপরেও নির্বাচনে তিনটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়। যার একটি ছিলো দিপু-পলু প্যানেল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই প্যালেনটি নির্বাচন থেকে সরে যায়। তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে এমন একটি অভিযোগও উঠেছিলো। বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের নানা অভিযোগ আর অনিয়ম ছাপিয়ে অনুষ্ঠিত জেলা আইনজীবী সমিতির নিয়মরক্ষার নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী পন্থী আইনজীবী প্যানেল। এদিকে ভোটগ্রহণের একদিন আগে এই নির্বাচন বয়কট করে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। ভোটগ্রহণের স্থান পরিবর্তন, নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা জ্ঞপনসহ স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে ধরে ভোটের এক দিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে ওই ঘোষণা দেয় তারা।
এসএমআর/এসএমআর