সংবাদচর্চা রিপোর্ট
হল রুমে বসা দেড় শতাধীক শিক্ষার্থী। সকাল থেকে দুপুর, বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা ছুই ছুই। তারপরেও সুনশান নীরবতা। বক্তব্য পর্বে প্রধান অতিথি জিজ্ঞাসা করলেন, কেমন কাটলো সাড়াদিন? উত্তরে এক সাথে সকলেই বললেন, ‘ভালো’। সারাদিন এক স্থানে বসে থেকেও শিক্ষার্থীদের এমন নীরবতা, অনেকটা বিস্মিত করেছে অতিথিদের। আর একজনতো বলেই ফেললেন, ‘নীরবতাই বলে দিচ্ছে কেমন হয়েছে অনুষ্ঠানটি’।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা গ্রন্থাগার মিলানায়তনে ‘বিতর্ক কর্মশালা ২০২০’এর সমাপনি অনুষ্ঠানের দৃশ্য ছিল এটি। দিনব্যাপি কর্মশালাটির আয়োজক ডিবেট ফর হিউম্যানেটি। পৃষ্টপোষকতায় ছিল নারায়ণগঞ্জ চেম্বার এন্ড কমার্স ও মিডিয়া পার্টনার ছিল অনলাইন নিউজ পোর্টাল লাইভ নারায়ণগঞ্জ।
এর আগে, সকাল ৯ টায় সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে বিকেএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর পুরটা সময় জুড়েই জেলার একঝাঁক তরুণ-তরুণীর উচ্ছ্বাসময় উপস্থিতি পুরো অনুষ্ঠানটিকে সার্থক করে তুলেছে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত ও প্রাণচাঞ্চল্যময় কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে।
এই আয়োজনে নারায়ণগঞ্জ কলেজ, বি.এম. ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজ, মিরকাদিম হাজী আমজাদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়, রামপাল মহাবিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া উচ্চ বিদ্যালয়, শাহীন ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজ, সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুল, মর্গ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ফিলোসোফিয়া স্কুল, নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল এবং এ্যারিবস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
দিনব্যাপী আয়োজনে, বিতর্ক কি? কেন করবেন ও বিতর্কর শ্রেণি বিভাগ নিয়ে বিশদ বলেন ডিবেট ফর হিউম্যানিটির সভাপতি তারেক আজিজ, উচ্চারণ-উপস্থাপনা ও বাচন ভঙ্গী নিয়ে বলেন কর্মশালা বিষয়ক সম্পাদক অর্পণ দাস, সংসদীয় বিতর্ক নিয়ে বলেন ঢাকা কলেজের বির্তাকিক শাকিবুল ইসলাম, যুক্তি ও কৌশল নিধারণ নিয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম শাহা রিয়াদ, বিতর্কে সংগঠনের প্রয়োজনিয়তা নিয়ে বলেন শফিকুর রহমান, ক্লাব গঠন ও কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে বলেন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লা আল জুনাইদ। এছাড়াও অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বক্তব্য পর্বের পরিচালনা করেন ডিবেট ফর হিউম্যানিটির নারায়ণগঞ্জ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অহমি তুজ জোহরা।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দীন সবার উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, নারায়ণগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক রুমন রেজা, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার এন্ড কমার্সের নেতৃবৃন্দরা।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক বলেন, শত ঐতিহ্যর সূতিগার নারায়ণগঞ্জ। নারায়ণগঞ্জ হয়নি এমন কোন ঐতিহ্য বাদ নেই। কিন্তু আজকে নারায়ণগঞ্জ আর সেই অবস্থানে নেই। তবে, এখান থেকেই আবার শুরু করতে হবে। বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মানুষই এ জেলায় আছে। এখানকার পোশাক কারখানা, শিল্প প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। এটাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এ সময় শিক্ষার্থীদের বলেন, আমি বিতর্কের সাথে আছি, থাকবো ও আমি চাই-আমার ছেলেও বির্তাকিক হোক।
এর আগে সকালে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, শুধু জয়ের জন্য বিতর্ক নয়, বিতর্কের মাধ্যমে আগামী দিনের নেতৃত্ব তৈরি হয়। বির্তক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যৌক্তিক মন বিকশিত হয়। অথচ, নারায়ণগঞ্জ থেকে এ বিতর্ক প্রতিযোগীতা হারিয়ে যাচ্ছিল। আমি খুবই গর্বিত ফের বির্তক প্রতিযোগীতার বিষয়টা আমরা নারায়ণগঞ্জে শুরু করতে পারছি বলে। এ জন্য ডিবেট ফর হিউম্যানেটি, চেম্বার এন্ড কমার্স, লাইভ নারায়ণগঞ্জ ও সকল সহযোগীদের ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠান শেষে অংশগ্রহণার্থীদের মধ্যে সনদ বিতরণ করা হয়।
এসএএইচ/এসএএইচ