আজ শনিবার, ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পুলিশকে বুড়ো আঙ্গুল দেখালো কিশোর গ্যাং

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আরাফাত আলম সানি। পেশায় বেসরকারী একটি এনজিওর জোনাল ম্যানেজার। ফতুল্লার দক্ষিন শেহাচর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। সম্প্রতি নিজ গ্রামের বাড়ি শরিয়তপুর থেকে চিকিৎসা করাতে নিজের মা কে নিয়ে আসেন নারায়ণগঞ্জে। প্রত্যাশা ছিল মাকে সুস্থ করে বাড়িতে পাঠাবেন আবারও। কিন্তু এলাকার কিশোর গ্যাংদের রাতভর গান বাজনায় সুস্থ হবার বদলে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ষাটোর্ধ এ বৃদ্ধা। মুক্তি পেতে পুলিশের দ্বারস্থ হলেও এসব কিশোররা পুলিশকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে উল্টো গানের শব্দ আরও বাড়িয়ে দেয়।

বৃহস্পতিবার ফতুল্লার দক্ষিন শেহাচরের লালখা খানকা মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় এমন অমানবিক ঘটনার অবতারণা ঘটে। এ ব্যাপারে আরাফাত আলম সানি গণমাধ্যমের মাধ্যমে পুলিশের দ্বারস্থ হলেও কোন প্রকার উপকার পাননি বরং ফল হয়েছে উল্টো। এতে করে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ সদস্যদের আচরণে হতাশ হয়েছেন সানি।

শুক্রবার আরাফাত সানি সরাসরি অফিসে এসে বৃহস্পতিবার রাতের পুরো ঘটনার ব্যাখ্যা দেন। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পত্রিকা অফিসে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে পুলিশের সহায়তা চান গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট। রাত ৮টায় সানির নিকট হতে পুরো ঘটনা শুনে অফিসের ফোন হতে ফতুল্লা মডেল থানার ডিউটি অফিসারের কাছে শেহাচর এলাকার টহল টিমের নাম্বার চাওয়া হয়। পরে টহল টিমের প্রধান এসআই রকিবুলকে সোয়া ৮টা নাগাদ পুরো ঘটনা জানিয়ে তাকে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। প্রায় দেড় ঘন্টা পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় কিশোরগ্যাং দের আস্তে গান বাজানোর অনুরোধ জানিয়ে চলে যায় টহল টিমটি। তার ঠিক ১০ মিনিট পর পুনরায় উচ্চস্বরে গান বাজাতে থাকে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। পরবর্তীতে আবারও এসআই রকিবুলকে বিষয়টি অবগত করা হলে তিনি এখনই যাচ্ছি বলে আশ্বস্ত করেন তিনি। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা সেখানে আর উপস্থিত হয়নি বলে জানান সানি। আর পুলিশ কে ডেকেছে এমন জেদ ধরে রাত ৩টা পর্যন্ত উচ্চস্বরে গান বাজাতে থাকে কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা। এতে করে আশেপাশের সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ে।

সানি কান্নাভেজা কন্ঠে প্রতিবেদককে বলেন, রাতটি কেমন গিয়েছে আমি বোঝাতে পারবো না। আমার মায়ের দুই কানের পাশে বালিশ দিয়ে রেখেছিলাম। প্রচন্ড মাথাব্যাথায় মায়ের চোখের পানিতে বালিশ ভিজে যাচ্ছিলো। অনবরত সাউন্ড বক্সের বিট মায়ের বুকে লাগছিলো আর মা আমার হাত ধরে বলছিলো আমাকে বাড়ি দিয়ে আয়। চোখের সামনে মায়ের এমন চিত্র কিভাবে সহ্য করতে হয়েছে তা বোঝানো যাবে না। রাত ৩টা পর্যন্ত এদের অত্যাচার আমার মাকে সুস্থ হবার বদলে আরও অসুস্থ করে দিয়েছে। সকালে উঠেই আমি আমার মা কে আমার বোনের শ্বশুরবাড়ি মুন্সিগঞ্জ দিয়ে আসি।

সানি আরও জানান, স্থানীয় ডিম ব্যবসায়ী আলআমিন নামে এক ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে বাড়ির পাশের খোলা স্থানে গান বাজাচ্ছিলো তারা। প্রায় ২০/২৫ জনের উশৃঙ্খল যুবক সারারাত মদ খেয়ে মাতলামি করেছে এবং উচ্চস্বরে গান বাজনা চালিয়েছে। এদের কয়েকদিন পর পরেই বিভিন্ন দিবস আর জন্মদিনকে সামনে রেখে সাউন্ড বক্স নিয়ে আসে আর গান বাদ্য করে আশেপাশের মানুষের ঘুম নষ্ট করে। পুরো গ্যাং এ ২০/২৫ জনের মত মাদকাসক্ত সদস্য থাকায় পরিবারের ভয়ে এদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে পারে না।

পরিবেশ অধিদপ্তরের শব্দ দূষণ ও নীতিমালা হতে জানা যায়, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পেয়ে আবাসিক এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ মানমাত্রা অতিক্রম করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে আবাসিক এলাকায় দিনের বেলায় ৫৫ ডেসিবেল ও রাতের বেলায় ৪৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দ অতিক্রম করতে পারবে না। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর অধীনে ২০০৬ সালে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। এই বিধিমালার ৯ ধারায় উচ্চস্বরে গান বাজানোসহ বিভিন্ন ধরনের শব্দ দূষণের বিষয়ে বলা আছে।

তবে কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে খোলা বা আংশিক খোলা জায়গায় বিয়ে বা অন্য কোনো কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে গান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, কনসার্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক বা অন্য কোনো ধরনের সভা, মেলা, যাত্রাগানের অনুষ্ঠান করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে অনুষ্ঠান আয়োজককারী ব্যক্তিকে পুলিশ কমিশনার বা সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে আবেদন করতে হবে। সে আবেদন মঞ্জুর হলে দৈনিক ৫ ঘণ্টা শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্র বাজানো যাবে এবং রাত ১০টার পরে তা আর বাজানো যাবে না।

এই আইনের ১৮ নং ধারায় বলা আছে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আবাসিক এলাকায় শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্র বাজালে বা আইন অমান্য করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং এক মাসের কারাদ-ে দ-িত হবেন। এ ছাড়া পরে একই ধরনের অপরাধ করলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৬ মাসের কারাদ-ে দ-িত হবেন।

এ ব্যাপারে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন জানান, নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের লক্ষ্যে আমরা সর্বদা সচেতন। আমাদের কাছে কেউ যদি অভিযোগ করে সেক্ষেত্রে আমরা যেকোন মূল্যে তা বন্ধ করে দেই এবং সেটি বিয়ে বাড়ি হলেও তাতে আমরা ছাড় দেই না। গতকালও ৩টি স্পটে আমরা অভিযান চালিয়েছি। এসব বিষয় বন্ধে আমরা অতীতেও তৎপর ছিলাম ভবিষ্যতেও থাকবো।