আজ বৃহস্পতিবার, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রান্নার গ্যাসে জীবন ঝুঁকি

বিশেষ প্রতিবেদকঃ সামান্য লিক থেকে গ্যাস জমে অগ্নিকান্ড বা বিস্ফোরণের ঘটনা বেড়েই চলছে নারায়ণগঞ্জে। পাইপ লাইন থেকে রাইজার ও গ্যাসের চাবির মাধ্যমে গ্যাসের চাপ সংকুচিত করে রান্নাবান্নার উপযোগী করে তোলা হলেও পাইপের জয়েন্ট থেকে গ্যাস লিক হয়ে ঘটছে প্রাণনাশী দুর্ঘটনা। অথচ খানিকটা সচেতনতাই এসকল দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে পারে অনেকাংশে।

শুধুমাত্র জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে রান্নাঘরে জমে থাকা গ্যাসে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২টি। আর এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৫ জন যারা একই পরিবারের সদস্য। বিশেষ করে রাতে রান্নার কাজ শেষ করে পরদিন সকালে চুলোয় আগুন ধরাতে গেলেই ঘটছে এসকল বিস্ফোরণ কিংবা অগ্নিকান্ড। অথচ চুলোয় আগুন ধরাবার পূর্বে কিছু সময়ের জন্য রান্নাঘরের দরজা জানালা খুলে রাখলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সুযোগ থাকেনা বললেই চলে। সামান্য কিছু সচেতনতা অনুসরণ না করায় একের পর এক দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে।
ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা জানান, রান্নার কাজে গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সতর্কতা পালন করা প্রয়োজন। সাধারণ শীত মৌসুমে অগ্নিকান্ডের ঘটনা বেশী ঘটে। এসময় পাইপ সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় অনেক সময় জয়েন্ট থেকে গ্যাস লিক করে। পাশাপাশি অবৈধ লাইন ও সংযোগ দাতাদের গাফলতির জন্য এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তবে এসকল দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে কয়েক মাস পর পর বাসাবাড়ির গ্যাস লাইন সার্ভিসিং ও প্রতিদিন সকালে রান্নাঘরের দরজা জানালা খোলা রেখে দিলে এই ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়।
গত ২ জানুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জের একটি ফ্ল্যাট বাসায় গ্যাসের আগুনে দগ্ধ হয় একই পরিবারের ৩ সদস্য। স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা রান্নাঘরের চুলা বন্ধ না করেই ঘুমিয়ে পড়েন। এতে রান্নাঘরে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। ভোরে রান্নার জন্য চুলায় আগুন দিলে সাথে সাথেই আগুনে দগ্ধ হন গৃহকর্তা কবির হোসেন, তার স্ত্রী রেখা বেগম ও মেয়ে সুফিয়া। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে। দগ্ধদের মধ্যে কবির হোসেনের শরীর ৫৫ ভাগ, স্ত্রী রেখা বেগমের ২০ ভাগ ও মেয়ে সুফিয়ার ৫ ভাগ পুড়ে গেছে। গৃহকর্তার কবির হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
একই ভাবে ৭ জানুয়ারি ফতুল্লার কায়েমপুরে গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে ফ্ল্যাট বাসায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসময় দগ্ধ হয়েছেন ফ্ল্যাটের বাসিন্দা স্বামী-স্ত্রী উভয়েই। মঙ্গলবার সকালে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড সংলগ্ন কায়েমপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি নিশ্চিত করে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন জানান, ধারণা করা হচ্ছে গ্যাসের চুলার পাইপে লিকেজ থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। সকালে রান্না করার জন্য চুলায় আগুন দিলে জমে থাকা গ্যাসের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। দগ্ধরা হলেন- শরীফ ও তার স্ত্রী ফরিদা। তারা ওই ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন বলে জানা যায়। উভয়ের মধ্যে দগ্ধ ফরিদার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে নিশ্চিত করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনার জন্য কেউ একক ভাবে দায়ী নন। একই সাথে বাড়ির মালিক, ব্যবহারকারী, অসচেতন ব্যক্তি, সংযোগদাতা, অবৈধ সংযোগদাতা দায়ী। মূলত সচেতনতা ও বিস্ফোরণের ভয়াবহতা অনুধাবন করলেই মুক্তি পাওয়া যাবে গ্যাস সম্পর্কিত দুর্ঘটনার হাত থেকে।