মাজহারুল ইসলামঃ নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় শারীরিক প্রতিবন্ধী এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এসএসসি ফরম পূরণ করতে দশ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সুশীল সমাজ।
জানা যায়,উপজেলার দবির উদ্দিন ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী ১২৮ জনের মধ্যে ৩৪ জন শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়।বাকী ৯৪ জন শিক্ষার্থী ২ থেকে ৮ বিষয় পর্যন্ত অকৃতকার্য হয়েছে। সরকার এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের ফি ১৫৫০ টাকা নির্ধারণ করলেও বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ বাবদ ৪ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়েছে।অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের প্রতি বিষয়ে ৫ শ’ টাকা জরিমানাসহ ফরম পূরণের বর্ধিত ফি আদায় করে ১২৮ জন থেকে ১২৭ জন শিক্ষার্থীকে ফরম পূরণের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।বর্ধিত ফি থেকে রক্ষা পায়নি শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শান্ত,রোল নং ১২৮।শান্ত মিয়া দবির উদ্দিন ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র।
বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই কমিটির নির্বাচন না হওয়ায় অদক্ষ ও অযোগ্য কমিটি গঠন করে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হচ্ছে।দীর্ঘদিন একই কমিটি অধীনে বিদ্যালয়টি পরিচালনা হওয়ায় স্বেচ্ছাচারিতা গ্রহন করেন পরিচালনা পরিষদের অনেকেই।
তাছাড়া কমিটি কিছু সদস্য নিজের স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত থাকায় কমিটির মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে।কমিটির বিরোধ জালে আটকে পড়ে বিদ্যালয়ের ১৬ জন শিক্ষক ১৬ মাসের বেতন বন্ধ পায়নি বলে জানা গেছে।এতে বিদ্যালয়টির শিক্ষা ব্যবস্থার অবনতি হচ্ছে।উন্নয়নের নামে বিদ্যালয়ের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন করে পকেট ভারী করছেন কমিটির প্রভাবশালী সদস্যরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েজন অভিভাবক জানান,প্রতিষ্ঠানের ম্যানিজিং কমিটির কতিপয় সদস্য ও কতিপয় অসাধু শিক্ষকের যোগসাজে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করে অনিয়ম ও দূর্নীতি করায় শিক্ষার মান নিম্মমূর্খী।অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা।অনেক শিক্ষার্থী পাশের বিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান ধ্বংস হওয়ার আশংকা করছেন সবাই।
কমিটির এক সদস্য জানান, আমরা কমিটির সদস্য হলেও আমাদের কোন সিদ্ধান্ত কাজে আসে না।নাম মাত্র আমরা কমিটির সদস্য।কমিটির দাতা সদস্য আফাজ উদ্দিন ভূঁইয়ার একক সিদ্ধান্তে এখন বিদ্যালয়ের সব কিছু পরিচালিত হয়। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দবির উদ্দিন ভূঁইয়ার চাচা হলো দাতা সদস্য আফাজ উদ্দিন ভুইয়া ও শিক্ষানুরাগী সদস্য মোজাম্মেল হক ভুইয়া রতনের সিদ্ধান্তের বাহিরে আমাদের কথা বলার সুযোগ নেই।সম্প্রতি কোনো ঠিকাদার ছাড়াই বালু ভরাটের নামে প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে।এ সকল অনিয়ম ও দূর্নীতির কারনে কমিটির মধ্যে দ্বন্ধের সৃষ্টি হয়েছে।
বিদ্যালয়টির কয়েকজন শিক্ষক জানান,বিদ্যালয়ের কোষাগারে টাকা থাকার পরও উন্নয়নের নাম করে আমাদের বেতন ভাতা বন্ধ করেছে ম্যানেজিং কমিটি। অথচ কোনো উন্নয়নও করা হচ্ছেনা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ড. আজগর আলী জানান,ফরম পূরণে টাকা ও উন্নয়নের কাজের বিষয় আমার জানানেই।আমাকে ম্যানিজিং কমিটি আদেশ দিয়েছেন কোন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ফরম পূরণে নির্ধারিত টাকা থেকে কম না নিতে।তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফরম পূরণ হয়েছে।
সোনারগাঁ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম প্রধান জানান,ফরম পূরণে সরকারের নির্ধারিত টাকার বাহিরে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায় করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি মৌখিক ভাবে কিছু কমিটির অনিয়ম সর্ম্পকে শুনেছি।সরেজমিনে বিদ্যালয়ে পরির্দশনে যাব।তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।