আজ শুক্রবার, ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শামীম ওসমান বলয়ে উল্লাস

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:

নারায়ণগঞ্জে যোগ দিয়েই পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেছিলেন, আমি একটু অন্যরকম। এরপর বিভিন্ন কান্ডে তার কিছু প্রমানও দেন। এরমধ্যে হকার ইস্যু, ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার অন্যতম। এসব কর্মকান্ডে তিনি আলোচিত যেমন হয়েছেন তেমনি সমালোচিতও কম হননি। সর্বশেষ পারটেক্স গ্রুপের মালিকের বাড়িতে গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে, যুবক-নারীসহ আটকের ঘটনা সামাল দিতে না পারায় রোববার পুলিশ হেডকোয়ার্টারে বদলী করা হয় তাকে। এ ঘটনা এখন নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের মানুষের মুখে মুখে। তবে এসপি হারুনের বদলীতে স্বস্তি ফিরে এসেছে শামীম ওসমান বলয়ে। রীতিমতো উল্লাস বয়েছে তাদের মাঝে।

অতীতে যারাই এ জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দিয়েছেন তারা ওসমান পরিবারকে সমীহ করে চলতেন। বিশেষ করে প্রভাবশালী রাজনীতিক শামীম ওসমানের সাথে সখ্য রাখতেন। শুধু আওয়ামী লীগ ক্ষমতাকালে নয় ‘৯১’র বিএনপি সরকারের আমলেও এমনটা দেখা গেছে। প্রশাসনের সাথে সখ্যের এ বিষয়টি দারুণভাবে উপভোগ করতেন ওসমান পরিবারের অনুগতরা। নেতার ক্ষমতায় কর্মীরা মোহিত হতেন। তারা ধরে নিতেন, প্রশাসনের চেয়ে তাদের নেতার অনেক ক্ষমতা। এ অবস্থায় কতিপয় অনুগতরা বাড়াবাড়ি করতেন। এলাকায় রাম রাজত্ব সৃষ্টি করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে এসপি হারুন এসে তাদের রাজত্বেও হানা দেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি এ জেলায় আসার পর পরই শামীম ওসমান বলয়ের সাথে একটা অলিখিত দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। প্রথম শুরু হয় শামীম ওসমানের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী ও তার সাথে থাকা সরকারী ওয়াকিটকি সেট নিয়ে। এই ওয়াকিটকিতে প্রশাসনের সব খবর ওসমান পরিবারের লোকজন পেয়ে যেতেন বলে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এরপর এমপিকে ছেড়ে অয়ন ওসমানের সাথে কক্সবাজার ভ্রমনে যাওয়ায় শামীম ওসমানের বডিগার্ডকেও বদলী করা হয়। এরপর চাঁদাবাজি, মাদক, সংঘর্ষসহ বিভিন্ন ঘটনায় একে একে শামীম ওসমানের অনুগতদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। কেউ কেউ গ্রেপ্তারও হয়। এরমধ্যে পাগলার টেনু গাজী, কুতুবপুরের মীরু, নাসিক কাউন্সিলর কবির হোসাইন, আ. করিম বাবু, সাইফুদ্দিন আহমেদ দুলাল প্রধান, শ্রমিক লীগ নেতা মুন্না অন্যতম। জামতলায় জমি দখলের অভিযোগে এমপি পুত্রের সমন্ধি মিনহাজ আহমেদ ভিকির বিরুদ্ধে মামলা। পরে চাষাঢ়ায় এক সিএনজি চালককে মারধরের ঘটনায় ভিকিকে গ্রেপ্তারও করা হয়। পাগলায় ভ্রাম্যমান রেস্তোরা মেরী এন্ডারসনে হানা দিয়ে মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও গ্রেপ্তারের পর গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ মাদকদ্রব্য ব্যবসার সাথে তানভীর মাহমুদ টিটু জড়িত। টিটু এমপি শামীম ওসমানের শ্যালক। এসব ঘটনায় শামীম ওসমান অনুগতদের সাথে এসপি হারুনের প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব শুরু হয়। শামীম ওসমান বিভিন্ন সভা সমাবেশে এসপির সমালোচনা করে বক্তব্যও দেন। এমনকি নিজের শক্তি দেখাতে তিনি একাধিক সমাবেশও করেন। তবে মাঝে মধ্যে শামীম ওসমান ও এসপি হারুনকে একসঙ্গেও দেখা গেছে। হাসিমুখে দু’জন কথা বলেছেন এমন চিত্র গণমাধ্যমে এসেছে। তবে এ চিত্র কতটা আন্তরিক তা নিয়ে একটা প্রশ্ন বরাবরই থেকে গেছে।

অনেকের মতে, সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেছে এসপি হারুনের বদলীর খবরের পর। বদলীর খবর শোনামাত্রই শামীম ওসমান বলয়ে খুশির বন্যা বয়েছে। গতকাল এ বলয়ের অনেকেই এসপিকে নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেন। সূত্র মতে, এসপি হারুনের এ্যাকশন শুরু হওয়ার পর অনুগতদের কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন শামীম ওসমানসহ সিনিয়র নেতারা। অযথা বাইরে বেশিক্ষন অবস্থান না করা, কোন বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতেও বলা হয়েছিলো। এরপর অনেক দিন এ নিয়মে চলে তারা। আগে যারা নিয়মিত ঢাকা থেকে আসতেন তারা তা কমিয়ে দেন। একাধিক নেতা তার নিজস্ব অফিসে অবস্থানের সময়ও কমান। তবে গতকাল থেকে ফের অনেকে আগের নিয়মে চলতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। এসপি বদলীর খবরে তাদের মাঝে উল্লাস দেখা গেছে।