নিরাক হাসান প্রেম
নারায়ণগঞ্জের একটি দরিদ্র পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন নগেন্দ্র দাস ওরফে কেটু। বাবা, মা, বড় বোন ও ভাইকে নিয়ে অভাবের সংসার ছিলো তাদের। তার বাবা ছিলেন জেলে। মাছ ধরে সেই মাছ বিক্রি করে সংসার চালাতেন। প্রথম শ্রেনীতে পড়া অবস্থায় বাবার সাথে মাছ ধরতে যাওয়া শুরু। এরপর কেটে যায় অনেক বেলা। ১২ বছর বয়সে মা মারা যায় তার। তবে টাকার অভাবে মায়ের লাশ হাসপাতাল থেকে আনতে পারেননি। এখন ধন সম্পদের অভাব নেই, তবে সে কষ্টের কথা ভুলতে পারেন না তিনি। শহরের পালপাড়ায় নিজের গড়া ৬ তলা আলীশান বাড়িতে বসে এ কষ্টের কথা বলতে গিয়ে দু’চোখে জল গড়িয়ে পড়ে কেটুর।
কেটু জানান, মায়ের খুব ইচ্ছে ছিলো আমাকে লেখাপড়া শেখানোর। মা সব সময় বাবাকে বলতো ‘তুমি মাছের কাজ করো ঠিক আছে কিন্তু ছেলে-পেলেদের এই কাজে নিও না। যেভাবে হোক ওদের লেখাপড়া শেখাও’। আজও সেই কথা আমাকে মনে করিয়ে দেয়। তিন ভাই বোনের সংসারে বাবা আর বিয়ে করেননি। বড় বোনের আদর-যতেœ বড় হওয়া কেটু জানান, বাবার পথে অর্থাৎ মাছ ধরা আর মাছের ব্যবসা দিয়েই ঢের উন্নতি হয়েছে তার। নিজে লেখাপড়া না শিখলেও সন্তানদের পড়াশুনায় কোন কার্পণ্য করেননি।
নগেন্দ্র দাশ ওরফে কেটুর বড় ছেলে লিটন চন্দ্র দাস ইস্টার্ন ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে এমবিএ সম্পন্ন করে এখন সিটি ব্যাংকে কর্মরত। ছোট ছেলে রিপন চন্দ্র দাস উচ্চশিক্ষার জন্য ইতালিতে আছেন। ৬ তলা ভবনের মালিক এখন কেটু। স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধু, কন্যা সব মিলিয়ে তার এখন ভরা সংসার। অভাব নেই কোন কিছুর। তারপরও থেমে নেই তার পরিশ্রম। ৪০ বছর আগে যেভাবে ৪ টায় ঘুম থেকে উঠে বাবার সাথে মাছ ধরতে যেতো। সকাল ৯ টার মধ্যে বাজারে মাছের পসরা সাজিয়ে বসতে হতো। এখনও আগের সময়েই ঘুম ভাঙ্গে তার। ছা-পোষা থেকে অঢেল সম্পদের মালিক হলেও কেটু এখনও দ্বিগুবাবুর বাজারে মাছ বিক্রি করে।
নগেন্দ্র দাস ওরফে কেটুর বড় ছেলে লিটন চন্দ্র দাস বলেন, আমরা বাবার উপদেশ অনুযায়ী চলাফেরা করতাম। আমাদের ভালো স্কুলে পড়ানো, ভালো কলেজে পড়ানো সহ আমাদের সব চাহিদা বাবা পূরণ করেছেন। সেই সাথে কিভাবে পড়াশোনার পাশাপাশি সমাজে মানুষের সাথে কেমন ব্যবহার করা লাগবে সেই সব বিষয়ে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন বাবা।
নগেন্দ্র দাস এর সহধর্মীনি স্বামীর ব্যাপারে বলেন, আমার স্বামী তার জীবনে অনেক পরিশ্রম করেছে।। সেই ঢাকা থেকে মাছ এনে বিক্রি করতো। শীত নেই, গরম নেই কাজ সেরে বাসায় আসতে আসতে সন্ধ্যা-রাত হয়ে যেত। পরিশ্রম করে ৪ ছেলে-মেয়েকে পড়াশুনা করিয়েছেন।
দ্বিগুবাবুর বাজারে সবার আগে কেটুর মাছ বিক্রি শেষ হয়। ভিআইপি কাস্টমারদের প্রথম পছন্দ কেটু। এই পছন্দের কারণ সম্পর্কে সংবাদচর্চা’র প্রতিবেদককে নগেন্দ্র দাস কেটু জানান, সততা আর পরিশ্রমের মাধ্যমে মানুষের আস্থা অর্জন করেছি।