আজ সোমবার, ২৫শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

স্বার্থে তোড়জোড় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
পদ পদবীর জন্য হঠাৎ জেগে উঠলেও বাকী সময় দলের কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকার অভিযোগ অনেক পুরনো। নির্বাচন এলে মনোনয়ন লড়াইয়ে তোড়েজোড়ে নামলেও মনোনয়ন না পেলে আপনা আপনিই মিইয়ে যান তারা। এই নেতাদের কারনেও অনেকটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে দল। এসব অভিযোগ একাধিকবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা বিএনপির বিরুদ্ধে, এ দলের নারায়ণগঞ্জের নেতাকর্মীদের। তাদের মতে, সিদ্ধান্ত নিতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কতিপয় নেতাও ভুল করেছেন।

দলীয় সূত্র মতে, বিএনপি যখন প্রতিষ্ঠা হয় তখন নারায়ণগঞ্জ জেলা হয়নি। তবে এই মহকুমা শহরকে গুরুত্ব দিয়ে শুরু থেকেই এখানে সাংগঠনিকভাবে জেলা কমিটি দেয় দলটি। জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন আব্দুল মতিন চৌধুরী। যিনি পরে দলটির সর্বোচ্চ ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মন্ত্রী হয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অধ্যাপক রেজাউল করিম। শহর কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন হাজী জালালউদ্দিন (জালাল হাজী), সাধারণ সম্পাদক হাসান জামাল ও সাংগঠনিক সম্পাদক হানিফ কবীর। এরশাদ সরকার আমলে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে এই নেতাদের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ শহরে আরও অনেক নেতা ভূমিকা রাখেন। স্থানীয়ভাবে এ দলের সাংগঠনিক অবস্থা মোটামুটি ভালোই ছিলো বলে মনে করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। ১৯৯০ এর ৬ ডিসেম্বর হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সরকারের পতন হলে ১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি। ওই নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনই ছিলো এ দলের। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় গেলেও জেলার ১টি আসন পায় বিএনপি। ২০০১ এ ফের ক্ষমতায় যায় দলটি, তখনো জেলার সব ক’টি আসন পায়। তবে ওয়ান ইলেভেনের পর ২০০৮ সালের ৯ম সংসদ নির্বাচনে এখানে একটি আসনও পায়নি এ দল। সেই থেকেই দলটির দুর্দশা শুরু হয় বলে মনে করেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।

নিরপেক্ষ তত্ববধায়ক সরকারের দাবিতে ১০ম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। বিশ্লেষকদের মতে, এটি তাদের জন্য একটি বড় ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো। আর একাদশ সংসদ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত অংশ নিলেও ফল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। তবে বিএনপির ৩ জন সাংসদ সংসদে রয়েছেন। বিএনপি নেতাদের মতে, ১০ম সংসদ নির্বাচনে না যাওয়া যে ভুল ছিলো না তা একাদশে প্রমান হয়েছে। তবে রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, দশম ও একাদশে পরিস্থিতি এক রকম ছিলো না। তাদের মতে, পাঁচ বছর ক্ষমতাসীনদের বিনা বিরোধিতায় ছেড়ে দিয়ে দুর্বল হয়েছে বিএনপি।

সূত্র মতে, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে আরও অনেক দলের মতো নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতাদের সাহসী ভূমিকা ছিলো। সে সময়ে এ দলের অনেক ত্যাগী ও আদর্শবাদী নেতার নাম মানুষ এখনও মনে রেখেছে। বিভিন্ন সময়ে বিরোধী দলে থাকলেও দলের নেতাকর্মীদের মনোবল ছিলো চাঙ্গা। ৯ম সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির স্থানীয় কয়েকজ নেতা এক ধরনের নতুন রাজনীতি খেলা শুরু করেন। দলের সমর্থনে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলর হলেও কতিপয় বিএনপি নেতা সম্পর্ক গড়েন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতার সাথে। বিষয়টি প্রথম প্রথম গোপনীয়ভাবে চললেও পরে ক্ষমতাসীন বন্ধুদের ধমকে ওই বিএনপি নেতারা সামনা সামনি আসতে শুরু করেন। কেউ কেউ মঞ্চে বক্তব্য দিয়ে কেউ আবার সব সময় তাদের সাথে থেকে জানান দেন, বিরোধী দল হলেও তারাও ক্ষমতাবান। জনপ্রতিনিধি ছাড়াও বিএনপিতে পদ পদবী নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সখ্যতা গড়েন আরও কয়েকজন নেতা। যাদের মধ্যে কেউ কেউ সংসদ নির্বাচনও করেছেন, কেউ মনোনয়ন চেয়ে পাননি। তারা বিএনপির রাজনীতি করলেও অন্য অনেক নেতার মতো মামলার শিকার হননি, বাড়ি ছাড়া হননি বরং নির্বিঘেœ তাদের ব্যবসা বাণিজ্য চালিয়ে গেছেন। দলের মধ্যে তারা দালাল হিসেবে চিহ্নিত হলেও এ নিয়ে তাদের কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়না। ভাবসাব দেখলে মনে হয় , দালালীর বিষয়টিকে তারা সহজভাবে মেনে নিয়েছে।

জেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতা জানান, বিষয়টি ভালো চোখে দেখেননা দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এইসব নেতাদের উপর তাদের প্রচন্ড ক্ষোভ রয়েছে। ওই নেতার মতে, এতে কেন্দ্রীয় কমিটির কতিপয় নেতার ভুল রয়েছে। তাদের কারনে আস্কারা পায় দালাল নেতারা।