আজ সোমবার, ২৫শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পারভীন ওসমান ও জয়নালের কাছে হারলেন সেলিম ওসমান

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
জাতীয় পার্টির কেউ না হয়েও ২০১৪ সালের উপ নির্বাচনে এ দলের মনোনয়নে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হউন ব্যবসায়ী সেলিম ওসমান। তিনি এমপি হওয়ার পর শহর থেকে জাতীয় পার্টির কার্যালয় উধাও হয়ে যায়। গত বছর সংসদ নির্বাচনে নানা ঘটনার পর শেষ পর্যন্ত তিনি লাঙ্গলের প্রার্থী হয়ে এমপি হন। তবে এখনো এ পার্টির কোন পদ নেননি তিনি। নেতাকর্মীদের ধারণা, এ কারনেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ স্মরণে দোয়া মাহফিল বা স্থানীয়ভাবে কোন দলীয় কর্মসূচী করেননি। তাদের মতে, এদিক দিয়ে পারভীন ওসমান ও জয়নাল আবেদীনের কাছে হেরে গেছেন তিনি।

সূত্র মতে, এরশাদ সরকারের আমলে গার্মেন্ট মালিক হন সেলিম ওসমান। তখন তার বড় ভাই নাসিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ও শহর জাতীয় পার্টির সভাপতি ছিলেন। ২০১৪ সালে ৩০ এপ্রিল নাসিম ওসমান মারা যাওয়ার পর এ আসনে উপ নির্বাচনে সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পান অনেকটা নির্বিঘেœ। ওই সময়ে দলের মনোনয়নের ক্ষেত্রে তার কোন প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলো না। তবে গত বছর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে কিছুটা বেগ পেতে হয় তাকে। এ নির্বাচনে তার মনোনয়ন প্রতিদ্বন্দ্বি হন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমান। তবে শুরু থেকেই ভাবীর মনোনয়ন চাওয়া পছন্দ হয়নি তার। এজন্য প্রকাশ্যে সভায় ভাবীকে উদ্দেশ্য করে কটুক্তি করেছেন সেলিম ওসমান। একই আসনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীনও মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। নিজের পার্টিতে এ বিরোধিতা ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা তার মনোনয়নের ব্যাপারে অন্য রকম অবস্থান নিয়েছিলেন। তারা এ আসনে লাঙ্গলের প্রাথী মেনে নেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেও এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের নেতাদের। জেলা ও মহাগনেরর শীর্ষ নেতাদের এমন বিরোধিতার মুখে সেলিম ওসমান প্রথমে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন নেয়ার চেষ্টা করেন। তার আমন্ত্রনে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বন্দরে তিনটি স্কুল উদ্বোধন করেন। সূত্র মতে, এ বিষয়ে ‘না’ সূচক জবাব এলে সেলিম ওসমান ঝুঁকেন জাতীয় পার্টির দিকে। শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক কৌশলের কারনে এ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামীলীগ। আর জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত সেলিম ওসমানকেই মনোনয়ন দেয়।

গত ১৪ জুলাই মারা যান জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলের নেতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। তার মৃত্যুর পর নারায়ণগঞ্জে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন মনোনয়ন বঞ্চিত দুই নেতা। তারা হলেন জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমান ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জয়নাল আবেদীন। তবে যিনি এ পার্টির মনোনয়নে দুইবার সাংসদ হয়েছেন সেই ব্যবসায়ী নেতা সেলিম ওসমান এদিকটায় এখন পর্যন্ত যাননি। এ নিয়ে জাতীয় পার্টির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। কেউ কেউ বলছেন, উনি রাজনীতিক নন বলে দলীয় কর্মসূচীর বিষয়ে আগ্রহ দেখান না তাই বলে কি পার্টির চেয়ারম্যানের মৃত্যুতেও কিছু করবেন না। এদিকে জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টিও তাদের দলের চেয়ারম্যানের মৃত্যুতে কোন শোক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনি। এই দুই কমিটির শীর্ষ নেতারা সেলিম ওসমানের অনুগত বলে জানা গেছে। রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, পার্টির চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পর পারভীন ওসমান ও জয়নাল আবেদীন দোয়া মাহফিল করে বুঝিয়েছেন দলের প্রতি তাদের আন্তরিকতা আছে। তাদের কাছে এ বিষয়ে হেরে গেছেন সেলিম ওসমান।