আজ সোমবার, ২৫শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নিন্দিত না কি নন্দিত শামীম ওসমান !

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদের ভিপি হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতি শুরু একেএম শামীম ওসমান এর। এরপর শহর, জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব ও দলের মনোনয়নে একাধিকবার সাংসদ হয়েছেন। তার অনুগত নেতাকর্মীর সংখ্যা অনেক। অনুগতদের মতে, তিনি একজন প্রগতিশীল রাজনীতিক। একাধারে দল ও কর্মী বান্ধব নেতা। অপরদিকে বিরোধীদের দাবি, তিনি নেতিবাচক রাজনীতি করেন। তার অনেক অনুগতের কারনে দলের বদনাম হয়। এই বিরোধীদের মধ্যে তার দলের নেতাকর্মী যেমন রয়েছে তেমনি ভিন্ন দলেরও আছে। সব কিছু মিলিয়ে কারও কাছে নায়ক আবার কারও কাছে খলনায়ক শামীম ওসমান।
অনুগতরা মনে করেন শামীম ওসমান হলেন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের সুপার ম্যান। তিনি একাধারে তুখোড় বক্তা, দক্ষ সংগঠক এবং জনপ্রিয়। তাদের দাবি, স্থানীয় আওয়ামী লীগে তার মতো এত জনপ্রিয় আর কেউ ছিলেন না।
তবে শামীম অনুগতদের এমন দাবি মানতে নারাজ দলের ভিতরেরই একটি অংশ। তারা মনে করেন, তিনি দলকে দলের মতো চলতে দেন না। দলকে ব্যক্তি ও বলয়ের মধ্যে রাখতে পছন্দ করেন। আর জনপ্রিয়তার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে তারা বলেন, নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠির কাছেই তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। বরং সাধারণ মানুষ তাকে নানা কারনে পছন্দ করে না।
বিরোধীদের এই যুক্তি খন্ডন করে শামীম ওসমান অনুগত এক আওয়ামীলীগ নেতা বলেন, মানুষ যদি পছন্দ না করতো তবে কিভাবে তিনি একাধিকবার এমপি হলেন। এ নেতার মতে, শামীম ওসমানের ডাইনামিক নেতৃত্বের কাছে দলের অনেকেই পেরে উঠেন না। তারাই মূলত তার বদনাম করেন।
জেলা আওয়ামীলীগের একজন সিনিয়র নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, পারিবারিক ঐতিহ্যের কারনে অনেকটা পথ শামীম ওসমান এমনিতেই এগিয়ে ছিলেন।

২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি শহরের হকার ইস্যু নিয়ে একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। যা নারায়ণগঞ্জবাসী কল্পনা করতে পারে নি। সেই ঘটনাকে একটি পক্ষ পুজি করে রাজনীতি করতে চায় এবং আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব জিয়ে রাখতে চায়।
হকার ইস্যু প্রসঙ্গে শামীম সমর্থক বলেন , শামীম ওসমান মাঠ পর্যায়ে থেকে রাজনীতি করেছেন। তিনি গরীবের দুঃখ বুঝেন। তাই হকারদের পূনর্বাসন না করে তাদের হটিয়ে দেয়ার পক্ষে তিনি নন।

এ নেতা জানান, শামীম ওসমান পারিবারিকভাবেই একজন প্রগতিশীল মানুষ ও রাজনীতিক। তিনি মনে প্রাণে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি। তিনি যখন ছাত্রলীগ করতেন তখন মাসদাইরস্থ আদর্শ স্কুলে শহীদ মিনার করতে আন্দোলন করেছিলেন। ওই সময়ে ওই স্কুলের অধ্যক্ষ ছিলেন মানবতা বিরোধী অপরাধে ফাঁসি হওয়া বিএনপি জোট সরকারের আমলের সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মুজাহিদ। ‘৯৬তে তিনি এমপি হওয়ার পর শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নামে সরকারী তোলারাম কলেজে হল উদ্বোধন হয়েছিলো। ওই সময়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের নারায়ণগঞ্জে নিষিদ্ধ করে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে সাইনবোর্ড লাগিয়েছিলেন তিনি। এসব কারনে দেশ বিরোধী রাজাকার ও তাদের দোসররা শামীম ওসমানের উপর ক্ষেপা। তারাই তাকে নিয়ে অপপ্রচার করে বলে দাবি।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান শামীম ওসমান। তার দাদা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন করেছে। তার বাবা মা ভাষা সৈনিক ছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি দুটি বলয়ে বিভক্ত হয়। একটি স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি অপরটি স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি। শামীম ওসমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। আর বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর নারায়ণগঞ্জে সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করেছিলেন শামীম ওসমানরা। সুতরাং আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শামীম ওসমানকে প্রয়োজন আছে।