আজ মঙ্গলবার, ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

যাদের কর্মকান্ডে বিতর্কিত শামীম ওসমান

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য এ.কে.এম শামীম ওসমান। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত ও সমালোচিত একজন সংসদ সদস্য। বিভিন্ন সময় তাঁর নিজের ও নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের  পদধারী নেতাকর্মীদের বেশ কিছু কর্মকান্ডের জেরে সর্বদাই সংবাদের হেড লাইন হয়ে থাকেন এই সাংসদ । দলীয় নেতাকর্মীদের সন্ত্রাস, মাদক, হত্যা, গুম, চাঁদাবাজী, ভূমিদস্যুতা সহ বেফাস মন্তব্যের জেরে এই সংসদ সদস্যকে দলীয়, সাধারণ মানুষ সহ প্রশাসনের রোষানলে পড়তে হয়।  শামীম ওসমানের নিজের ব্যক্তি জীবন কিংবা পারিবারিক কোনো কারনে তাঁকে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়নি বলে মনে করেন জেলা আওয়ামী লীগের একধিক নেতৃবৃন্দ।

জানা যায়, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ৫২ এর ভাষা আন্দোলন সহ সর্বশেষ ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের অবদান চোখে পড়ার মতো। তৎকালীন সময়ে নব উদ্যোমে গঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও ওসমান পরিবারের আরেক বীর সন্তান এ.কে.এম সামসুজ্জোহা। সেই সুবাদে ছাত্র জীবন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমান।  আওয়ামী লীগের সভানেত্রী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও কাছের একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন এই সাংসদ । তবে তিনি তার সেই অবস্থান খুব বেশিদিন ধরে রাখতে সক্ষম হননি বলে মনে করেন নারায়ণগঞ্জের বোদ্ধামহল।

নগরীর সচেতন নাগরিকদের মতে শামীম ওসমান বরাবরের মতো একজন প্রভাবশালী নেতা। তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকা সহ সমগ্র নারায়ণগঞ্জবাসীকে নিয়ে চিন্তা করেন। সাধনা করেন কিভাবে এই নগরীর মানুষদের সুন্দর ও উজ্জ্বল  একটি জীবন পেতে পারে সেই বিষয়ে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান তার ব্যক্তি জীবনের আলোচনার চেয়ে তাঁর দলীয় ও আশপাশে থাকে মানুষদের কারনে সমালোচনার শীর্ষে উঠেছেন। যাদের মধ্যে অন্যতম টেনু গাজী, সন্ত্রাসী মীর হোসেন মীরু, ডিস বাবু, শাহজালাল বাদল, মতিউর রহমান মতি, নাজিম উদ্দিন, শাহ নিজাম।

শাহ আলম গাজী টেনু
আলোচিত টেনু গাজী নিজেকে স্থানীয় সাংসদের বন্ধু সহ নিজেকে কুতুবপুরের এমপি হিসেবে জাহির করেন বলে গণমাধ্যম সূত্রে জনা যায়। সম্প্রতি বেশ কিছু গণমাধ্যমে ফতুল্লার পাগলা বাজার বহুমুখী সমবায় সমিতির শাহ আলম গাজী টেনুর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। সর্বশেষ চাঁদাবাজীর দাবিতে সংখ্যালঘু পরিবারের তিন ভাইকে তোলে নিয়ে মারধর করার অভিযোগে তাকে জেলা গোয়েন্দ (ডিবি) পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, টেনু গাজীর বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টার, ভূমিদস্যুতা, স্থানীয় নিরীহ মানুষদের অত্যাচার নির্যাতনসহ রয়েছে বেশ কিছু অভিযোগ।

মীর হোসেন মীরু
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী  হত্যাসহ এক ডজন মামলার আসামীর মীর হোসেন মীরু। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনের পর প্রতিপক্ষের গুলিতে কোমরের গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে। কিন্তু পঙ্গুত্ব বরণ করলেও মীরু হুইল চেয়ারে বসেই ফতুল্লার অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। সন্ত্রাসী মীরুর যে নিজস্ব একটি বিশাল সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে। বেশ কিছু সময় সন্ত্রাসী মীরু ও তার বাহিনীর কারণে ফতুল্লা শিল্পাঞ্চল অশান্ত হয়ে উঠে। গুঞ্জন রয়েছে মীরু ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর নিকট প্রচুর পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। ইতি মধ্যে গত ২০ জানুয়ারী-২০১৯ এ ফতুল্লার কুতুবপুর এলাকার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতর করে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের একটি টিম।

আব্দুল করিম বাবু

আব্দুল করিম বাবু। ডিস বাবু হিসেবেই নারায়ণগঞ্জের তার ব্যাপক পরিচয়। স্থানীয় পর্যায়ে কারো কারো কাছে মাউড়া বাবু হিসেবেও পরিচিত। ডিস বাবুর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। প্রকাশ্যে ফিল্মি স্টাইলে গুরি করা থেকে শুরু করে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ সহ জোরজবর দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগের অন্ত নেই ডিস বাবুরে বিরুদ্ধে।  তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। নগরীর ডিস ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আব্দুল করিম বাবু “ডিস বাবু” হিসেবে পরিচিত লাভ করলেও নারায়ণগঞ্জের একটি প্রভাবশালী বিশেষ পরিবারের অনুগত হিসেবে তার ব্যাপক ডাক নাম রয়েছে। সর্বশেষ গত ১৮ এপ্রিল বাবুর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হাসান নামে এক ব্যক্তির দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলায় জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়।

শাহজালাল বাদল
হাত বাড়ালেই টাকা। জোর খাটালেই টাকা। ধমক দিলেই টাকা। এত অল্পতে দেশের কোথাও টাকা কামানো না গেলেও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে তা সম্ভব। ব্যাপারটি সম্ভব করেছেন নূর হোসেন, যিনি নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সেভেন মার্ডার মামলার প্রধান আসামি। ওই মামলায় তার ফাঁসির আদেশ হয়েছে । এখন তিনি কারাগারে বটে। কিন্তু সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন   তারই আস্থাভাজনরাই। এদের শীর্ষে রয়েছেন তার ভাতিজা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও নাসিক ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার শাহজালাল বাদল। সাত খুন ঘটনার পর শাহজালল বাদল ১৫ মাস পলাতক ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জের ওভারব্রিজের সামনে থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোড় পর্যন্ত রাস্তার পাশের ফুটপথ ও দোকানপাটে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন বাদল।

মতিউর রহমান মতি
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ.কে.এম শামীম ওসমানের অন্যতম আস্থাভাজন হিসেবে খুব খ্যাতি রয়েছে এই কাউন্সিলরের। সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী নতুন বাজার এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গত ৩ জানুয়ারী আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের আগে জমির মালিক আওয়ামী লীগের কর্মী ইসমাইলকে পেটাতে পেটাতে বাড়ি থেকে ধরে আনার হুমকি দিয়েছে।

নাজিম উদ্দিন
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন, তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষক লীগের সভাপতিও বটে। নানা সময়েই নানা বিতর্কীত কর্মকান্ডের কারণে ংবাদ শিরোনাম হয়েছেন। কান পাতলেই শোনা যায় তার অসংখ্য বিতর্কীত কাজের ফিরিস্তি। অনেকের মতে নাজিম উদ্দিন একজন ভয়ঙ্কল সন্ত্রাসী। প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানের আস্থাভাজন বহু বিতর্কে বিতর্কীত এই নাজিম উদ্দিন। চঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা, নারী কেলেঙ্কারি আবার কখনো তিনি খবরের শিরোনাম হয়েছেন মেয়ের পরকীয়া প্রেমের ঘটনায়। সম্প্রতি নাজিম উদ্দিন তার বাহিনী নিয়ে রূপায়ন টাউনবসীর উপর দু’দফা অতর্কিত হামলা চালিয়ে সংবাদের শিরোনামে এসেছেন। সেই ঘটনায় হয়েছে তার বিরুদ্ধে মামলা। অভিযোগ রয়েছে রূপায়নের পক্ষ হয়ে তিনি অসংখ্য নীরিহ মানুষের জমি জবর দখল, নামমাত্রা মূল্যে আমমোক্তারনামা দলিল লিখেও নিয়েছেন। আরো অভিযোগ রয়েছে ভূইগড়ের অসংখ্য পরিবারকে তিনি পথে বসিয়েছেন।

অপর দিকে চারদিক থেকে যে সকল সমালোচনার সৃষ্টি হচ্ছে এবং যাদের ন্যায় এহেন এ সকল পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে শামীম ওসমানকে সেই সকল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কেন তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না সেই প্রশ্ন রেখেছে নগরীর বোদ্ধা মহল। নগরীর বোদ্ধামহলেল মতে যে সকল ব্যক্তি বিশেষদের কারনে তিনি শামীম ওসমান সহ তার পরিবারের বিরুদ্ধে যে সকল অপবাদ ও অভিযোগের আঙ্গুল তোলা হচ্ছে সে সকল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। তারা আরো মনে করেন শামীম ওসমান একজন জন নেতা। তিনি বিভিন্ন প্রতিকুলতার মধ্য দিয়েও  জেলা আওয়ামী লীগকে আগলে রেখেছেন। রাজপথের আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব প্রদান করে থাকেন। সেই নেতার ভাগ্যে যদি কথিত কালিমা লেপন করা হয় সেটা অবশ্যই অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ