আজ শনিবার, ১লা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ফুটপাতে বিদ্যুৎ চুরি করে বছরে ১ কোটি টাকা চাঁদাবাজি

অপরাধ প্রতিবেদক:

ফুটপাতে দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে ২ কোটি ৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজির পর এবার অনুসন্ধানের বেরিয়ে এসেছে প্রতিটি দোকানে বিদ্যুতের বাতি দিয়ে আদায় করছে বছরে ১ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ কতৃপক্ষের অসাধু কর্মকর্তাদের সহায়তায় চাঁদাবাজরা অনায়েশে চালিয়ে যাচ্ছে নৈরাজ্য। সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধি করা হলেও তাদের মধ্যে চলছে অবৈধ অর্থ আয়ের নেশা।

উড়ছে টাকা ধরবে কে? দল করবে যে পাবে সে! প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জ এখন টাকার নগরীতে রূপান্তরিত হয়েছে। এই নগরীর আকাশে বাতাশে এখন টাকার সুবাশ। এই সুবাশ যেন তেন সুবাশ নয়। এই সুবাশের ¯িœগ্ধতা যে কেউ নিতে পারবে না। দল ও পদ-পদবীধারী কিংবা দলের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তির আতাতকারীরাই পারবে এর ¯িœগ্ধতা উপভোগ করতে। নারায়ণগঞ্জের আকাশে-বাতাশে যে টাকার সুবাশ ছাড়াচ্ছে এই টাকার কোন বৈধ উৎস নেই। উড়ন্ত টাকাগুলো রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের মেহনতের টাকা। যারা ভোগ করছে তারাও কোন সাধারণ মানুষ নয়। ভোগকারীরা একেকজন একেক দলের পদ-পদবীধারী কিংবা ভাই-ভাতিজা।

নারায়ণগঞ্জের বহুল প্রচাতি দৈনিক সংবাদচর্চার বিশেষ অনুসন্ধানী টিম গতকাল নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাত ও ভ্রাম্যমান বিপনী দোকানগুলোতে অনুসন্ধান চালালে সরজমিনে দেখা যায় সড়কের দুই ধারের বিপনীবিতানগুলোর ঝলমলে আলো।

ঝলমলে আলোর উৎস উদঘাটনকল্পে শহরের ১নং রেল গেইটস্থ ভ্রাম্যমান বিপনীবাতগুলোর মালিক ও কর্মচারীদের সাথে আলোচনা করলে তারা জানায়, দৈনিক ২০ থেকে ৩০টাকার বিনিময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে থাকেন। আর এই বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে তারা তাদের দোকানগুলোতে একাধিক বৈদ্যুতিক বাল্ব ব্যবহার করছেন। এই বিদ্যুৎ সংযোগ গুলো বৈধ কিনা জানতে চাইলে মালিক-কর্মচারী জানান, এই বিষয়ে তাদের কোন ধারণা নেই তেব এই বিদ্যুৎ সংযোগগুলো সাংবাদিক শারহাজাহনের। সেই বলতে পারবে এগুলো বৈধ নাকি অবৈধ। সাংবাদিক শারজাহান অত্র ১নং রেল গেইটের কতগুলো দোকানে তার বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন জানতে চাইলে তারা জানান, ১নং রেল গেইটের রাস্তার এপার ওপার থেকে শুরু করে কালীরবাজার মাজার পর্যন্ত সাংবাদিক শারজাহানের বিদ্যুতের লাইন।

সংবাদচর্চার অুসন্ধানী টিম খুজে বের করেছে কে বা কারা বঙ্গবন্ধু সড়কসহ অন্যানো সড়কগুলোতে অবৈধ বিদ্যুা সংযোগ চাঁদা উত্তোলন করছে।

চাষাড়া খাজা মার্কেট থেকে সায়মপ্লাজা ছাত্রলীগের নেতা নামধারী আল-আমিন আনুমানিক ১শ’ দোকান থেকে ৩০ টাকা করে ৩ হাজার টাকা, মাসে ৯০ হাজার টাকা আর বছরে ১০ লক্ষ ৮০ হাজার চাঁদা অত্তোলন করে।

এছাড়া মুক্তি জেনারেল হাসপাতাল থেকে কালির বাজার এলাকা পর্যন্ত আনু মানিক ১৫০টি হকারের দোকান থেকে ৩০ টাকা করে প্রতিদিন ৪ হাজার ৫শ’ টাকা করে মাসে ১লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা আর বছরে ১৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করে চাষাড়ার আরও একটি গ্রæপ।

এছাড়াও আনন্দ হোটেল থেকে ১ নং গেইট এলাকার হাবিব মার্কেট পর্যন্ত আনুমানিক ২০০ দোকান থেকে আরেক আলামিন অবৈধ বিদুৎ সংযোগ দিয়ে প্রতিটি দোকান থেকে বাতী বাবদ প্রতিদিন ৩০ টাকা প্রতিদিন ৬ হাজার টাকা করে মাসে ১লক্ষ ৮০ হাজার টাকা আর বছরে ২১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা চাঁদা উক্তোলন করে এই আলামিন।

অন্যদিকে, ইলেক্টটিক মিস্ত্রী তাহের অবৈধ বিদ্যুা সংযোগ দিয়ে ২নং রেল গেইট থেকে করিম মার্কেট পর্যন্ত আনুমানিক ১৫০টি হকারের দোকান থেকে প্রতিদিন ৩০ টাকা ৪ হাজার ৫শ” টাকা মাসে ১লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা আর বছরে ১৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকা চাঁদা উক্তোলন করে ।

২নং রেল গেইট থেকে ১ নং রেল গেইট রেল লাইনের পাশের ১শ’ দোকান অবৈধ বিদ্যু সংযোগ দিয়ে সোহেল প্রতিদিন ৩০ টাকা করে ৩ হাজার টাকা ,মাসে ৯০ হাজার টাকা আর বছরে ১০ লক্ষ ৮০ হাজার চাঁদা অক্তোলন করে।

এছাড়া, নারায়ণগঞ্জের ১নং রেল গেইট এলাকা থেকে কালির বাজার পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশের আনুমানিক ২শ’ দোকান থেকে অবৈধ বিদ্যু সংযোগ দিয়ে ৩০ টাকা প্রতিদিন ৬ হাজার করে মাসে ১লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বছরে ২১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা চাঁদা উক্তোলন করে বিশেষ শাহজাহান।

১নং রেল গেইট এলাকা জুটার দোকানী বলেন আমরা ৩০ টাকা করে রোজ (প্রতিদিন) কথিত সাংবাদিক শাহজাহান প্রদান করি তবে তিনি এ টাকা বিদ্যুত অফিসে দেন কিনা আমরা জানি না।

রেল লাইনের আরেক দোকানী বলেন, ১নং রেল গেইট ২নং রেল গেইট পুলিশ বক্সের সামনের একটি প্রত্রিকা বিক্রির দোকানের মালিক সোহেলের তিনি আমাদের কাছ থেকে ৩০ টাকা করে প্রতিদিন লাইট বাবদ নিয়ে যায়।

অবৈধ সংযোগের বিষয়ে আলা-আমিনের সাথে মুঠোফনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি মহান ছাত্রলীগের কর্মী। আমাদের জেনারেটরের লাইন আছে। আমাদের জেনারেটরের লাইন খাজা মার্কেট থেকে প্রিপারেটি স্কুল পযর্šÍ। আর সংযোগ গুলো আমাদের ৫জনের। এর মধ্যে মহানগর ছাত্রলীগের শান্ত আছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় জেনারেট ব্যবহার হচ্ছে না তাহলে সড়করে দুইধারের ঝলমলে আলো কি করে এল জিজ্ঞেস করতেই আল-আমিন কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলেন, সরাসরি কথা বলে ভালো হতো। প্রতিটা দোকারে বিদ্যুৎ সংযোগ সরাসরি বৈদ্যুতিক খুটি থেকে সংযোগ হয়েছে বললে আল-আমিন জানান, আমাদের নিজস্ব মিটার রয়েছে। তবে এই ব্যবসার সাথে আমি একা সম্পৃক্ত নই। আমার সাথে আরো অনেকেই আছে যাদের মধ্যে আর কত টাকা করে আদায় হয় এটা আমি জানি না। আমাদের মিটার আছে জেনারেটর আছে এছাড়া এই ব্যবসা করে বালুর মাঠের রাজা,দিবু বাজারের আকাশ।

অপরদিকে ইলেক্টটিক মিস্ত্রী তাহের জানায়, তার আন্ডারে প্রতিদিন চল্লিশটি দোকানে বাতি জ্বলে। প্রতিটি দোকান থেকে দৈনিক বিশ থেকে ত্রিশ টাকা করে আদায় করা হয়। তবে সাপ্তাহে একদিন শুক্রবার ১০ থেকে ২০ টি লাইট বেরে যায়। আমার নিজস্ব মাদার মিটার রয়েছে। আর এই মাদার মিটার থেকেই প্রতিটি দোকানে একটি করে সাব মিটার স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি দোকানে সরাসরি বৈদ্যুতিক খুটি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ কেন জিজ্ঞেস করলে তাহের জানায়, খুটি থেকে কে বা কারা সংযোগ নিয়েছে সেই বিষয়ে আমি কিছু জানিনা।

এছাড়া ২ নং রেল গেইট এলাকার আলামিন বলেন,আমার চার-পাঁচটা লাইন মাত্র আর আনন্দ হোটেল থেকে হাবিব মার্কেট পর্যন্ত আমার একা লাইন নয় আরো অনেকের লাইন আছে আর আমি ২০ করে টাকা আদায় করি। আমার মিটার আছে আমি গত ৩ মাসে ১৫হাজার টাকা প্ররিশোধ প্রদান করেছি।

এ বিষয়ে জানতে শহরের ডিপিডিসির নির্বাহী কর্মকর্তা আনিসুর রহমানের মুঠোফোনে অন্তত ২০ বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেন নি।