বগুড়া প্রতিনিধি:
মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বগুড়ার নবাগত পুলিশ সুপার মো: আলী আশরাফ ভূঞা। ঘুষ ছাড়া চাকরি হচ্ছে সন্তানদের। তাই আনন্দে কাঁদলেন অভিভাবকেরা।
পুলিশের চাকরিতে কাউকে ঘুষ না দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন নবাগত পুলিশ সুপার। এমনকি দালাল ঠেঁকাতে জেলার প্রতিটি উপজেলার গ্রামগঞ্জে পুলিশ সুপারের পক্ষে ব্যাপকভাবে মাইকিং করা হয়। যেকারণে কোনো দালালই প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার সুযোগ পায়নি।
শতাধিক অভিভাবক পুলিশ সুপারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বুধবার। এ সময় খুশিতে কেঁদে ফেলেন অনেকেই। পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে চাকরি পাওয়া সন্তানদের অভিভাবকরা জড়ো হন। অভিভাবকদের সামনে আসেন নবাগত পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা। এ সময় কয়েকজন অভিভাবক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন।
মেধার ভিত্তিতে ছেলে আল ফাহাদ নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ দিতে এসেছেন মা আলেয়া জেসমিন। তিনি আনন্দে কেঁদে ফেলেন। শিবগঞ্জ উপজেলার দোপাড়া গ্রামের বর্গাচাষি তফসির উদ্দিন বলেন, স্বপ্নেও ভাবেননি তাঁর ছেলে নাজমুল হকের পুলিশে চাকরি হবে।
সোনাতলা উপজেলা থেকে আসেন আকতার হোসেন। তার নাতি কনস্টেবল পদে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি বলেন, পুলিশে নিয়োগ মানেই লাখ লাখ টাকা ঘুষ। ঘুষের টাকা জোগাতে না পেরে গরিব মানুষের সন্তানেরা চাকরি পায় না। কিন্তু এবার নিয়োগ পরীক্ষা স্বচ্ছ হয়েছে। স্বাধীনতার পর এই প্রথম দেখলাম, পুলিশে ঘুষ ছাড়াই নিয়োগ হচ্ছে। যা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
একই উপজেলার উত্তর সুখানপুকুর গ্রামের ভ্যানচালক শাহিদুল ইসলাম। তার অভাবের সংসার। পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ তালিকায় তার কলেজপড়ুয়া মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিনের নাম দেখে তিনি পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তিনি বলেন, ‘মেয়েডার খুব ইচ্ছা পুলিশ হয়্যা দ্যাশের সেবা করবি। হামি কই, মা, পুলিশের চাকরিতে তো ১৫ লাখ টেকা ঘুষ লাগে, হামি সেই টেকা কুনটি পামো। মেয়ে কয়, আব্বা এবার টেকা লাগবি না।
১০০ টেকা দেও, নিয়োগ পরীক্ষাত দাঁড়ামো। নিয়োগ স্বচ্ছ হওয়ায় মেয়েডার স্বপ্ন আজ সত্যি হচ্ছে। এই বলে কেঁদে ফেলেন তিনি । মেয়ে জান্নাতুল পারভীন পুলিশে চাকরি পাচ্ছেন, এমন খবর জেনে পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন সালমা বেগম। তিনি বলেন, অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে মেয়েকে পড়াশোনা করাচ্ছি। বিনা ঘুষে চাকরি হচ্ছে। অনেক উপকার হলো। ছেলে পুলিশে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন জলার চন্দনবাইশা ডিগ্রি কলেজের পিয়ন মাইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঘুষ ছাড়া ছেলে পুলিশে চাকরি পাবে, এটা কখনোই ভাবিনি।
সোনাতলার মহিষপাড়া গ্রামের রোমানা আকতার উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাঁর মা হতদরিদ্র গৃহবধু ফাতেমা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী মুকুল মিয়া শারীরিক প্রতিবন্ধী। মাথা গোঁজার মতো বসতবাড়ি ছাড়া কোনো সম্বল নেই। মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে দরজির কাজ করে সংসার চালান তিনি। কাউকে ঘুষ দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। ঘুষ ছাড়া চাকরি পাচ্ছেন তাঁর মেয়ে, এটা এখনো তাঁর কাছে স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে।
পুলিশ সুপার মো. আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, এ জেলায় এবার কনস্টেবল পদে ১৭০ জন পুরুষ ও ৩০ জন নারী প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। মেধা ও যোগ্যতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। শতভাগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় কুলি, শ্রমিক, ভ্যানচালক, দিনমজুর ও ডাব বিক্রেতার সন্তানেরাও নিয়োগের জন্য উত্তীর্ণ হয়েছেন। তবে মাদক গ্রহণের প্রমাণ মিললে কাউকে নিয়োগ দেয়া হবে না।
এবার বগুড়ায় পুলিশ কনস্টেবল পদে পরীক্ষায় অংশ নেন ৪ হাজার ৩০০ জন। তাদের মধ্যে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন ২০০ জন।