আজ রবিবার, ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীতে বেপরোয়া অজ্ঞান পার্টি।

কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীতে বেপরোয়া অজ্ঞান পার্টি চক্রের সদস্যরা। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে তাদের তৎপরতা বেড়েই চলছে। নিত্য-নতুন কৌশলে তারা মানুষের কাছ থেকে সব কিছু কেড়ে নিচ্ছে । অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর কোথাও না কোথাও সর্বস্বান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

সর্বস্ব হারানোর পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। গত এক মাসে শতাধিক ব্যক্তি অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজন মারা গেছেন। সর্বশেষ নিউমার্কেটে আক্রান্ত এক ব্যক্তি রোববার হাসপাতালে মারা যান।

অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা ফুটপাত, লঞ্চঘাট, রেল বা বাসস্টেশন, হাটবাজারসহ  জনবহুল জায়গায় হকার হিসেবে অবস্থান করে। পরে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য ডাবের পানি, জুস, চা, কফি, পান, খেজুর, ঝালমুড়ি, শক্তিবর্ধক হালুয়া, ক্রিমজাতীয় বিস্কুট, চকলেট, রঙিন পানীয় ইত্যাদি বিক্রি করে। আবার কখনো এরা যাত্রীবেশে লঞ্চ, বাস বা ট্রেনে উঠে সরাসরি কারও সঙ্গে সখ্য তৈরি করে অজ্ঞানকারী খাদ্যদ্রব্য খাইয়ে মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে পালিয়ে যায়।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, কোমল পানীয় কিংবা বোতলজাত খাওয়ার পানির সঙ্গে ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইনসুলিন মিশিয়ে তৈরি করা হয় অজ্ঞান করার রেসিপি। আবার গণপরিবহনে সিটের কাছে ক্লোরোফর্ম জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ লাগিয়েও অজ্ঞান করার কাজটি করা হয়। ঈদ সামনে রেখে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা এলাকা ভাগ করে অপারেশন পরিচালনা করছে।  রোববার বিকালে বাড্ডার মোহাম্মদ আলী পারিবারিক জরুরি কাজে যান নগরীর গাবতলী। সেখান থেকে ফেরার পথে তিনি অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন।

অজ্ঞান অবস্থায় তাকে রোববার রাত ১১ টায় আসাদগেট থেকে উদ্ধার করা হয়। ততোক্ষণে প্রতারক চক্রের সদস্যরা তার সঙ্গে থাকা ১২ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে চলে যায়। গত বৃহস্পতিবার বাহন পরিবহনের একটি বাসে ষাটোর্ধ বয়সী এক যাত্রী অচেতন হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু কেউ তাকে ধরেনি। বিষয়টি চোখে পড়ে টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. আলমগীর হোসেনের। তিনি তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই ব্যক্তি গত শনিবার রাত ৩টার দিকে মারা যান।

মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আমিও একই বাসের যাত্রী ছিলাম। অনেকে দেখেছিল, কেউ ধরে নাই। সায়েন্স ল্যাবরেটরি বাসস্ট্যান্ডে আমি তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। শনিবার রাত ১০টার দিকে তেজগাঁও থানা পুলিশ কাওরানবাজার থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক কারওয়ান বাজার শাখার ক্যাশিয়ার কাজী ইরফান (২৭) এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কর্মী মাসুমকে (২৭) উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। তাঁরা অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছিলেন।

ডেমরা থানার কনস্টেবল কবির হোসেন (৪২) বরগুনায় গ্রামের বাড়ি থেকে ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে ফেরার পথে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন। শনিবার রাতে তাঁকে সায়েদাবাদ এলাকা থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে ওয়ারী থানার পুলিশ। তার সঙ্গে থাকা ২০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায় অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। গত শনিবার সকাল ১১টায় মধ্য বাড্ডা এলাকার পান ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনকে (৪০) অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নেয় প্রতারকরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাস, লঞ্চ, ট্রেন স্টেশন ও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অচেতন ব্যক্তিদের উদ্ধার করা হচ্ছে। এদের বেশির ভাগই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড, সোহ্‌রাওয়ার্দী হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা যেসব ওষুধ ব্যবহার করছে তা খুবই বিপজ্জনক। এসব ওষুধের প্রতিক্রিয়া মানুষের জীবন-মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে। এমনকি অনেকের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাও দুষ্কর হয়ে উঠতে পারে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর প্রায় ২০টি পয়েন্টে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এদের বেশির ভাগই মৌসুমী অজ্ঞান পার্টির সদস্য। কয়েকটি চক্রকে চিহ্নিত করতে পারলেও তারা পুলিশের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ছিনতাইকারী, অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান পরিচালনার জন্য গত ২০শে আগস্ট পুলিশকে নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর সাতদিন চলে গেলেও পুলিশের অভিযান চোখে পড়ার মতো নয়।

ডিএমপি’র উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের নির্দিষ্ট গ্রুপ রয়েছে। বিভিন্ন ধর্মীয় বা বড় কোনো অনুষ্ঠান সামনে রেখে তারা তৎপর হয়ে ওঠে। এ সময় মানুষ নগদ অর্থ নিয়ে বেশি চলাফেরা করে থাকে। প্রতিনিয়ত অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

 

 

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ