আজ শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হয়রানী থেকে রেহাই পেতে সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব সংবাদদাতা, সংবাদচর্চা
পাওনা টাকার দাবি না ছাড়ায় মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা ও হয়রানী থেকে রেহাই পেতে এবং এর যথাযথ সুষ্ঠু তদন্ত গ্রহণ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, পাইকপারা হাজী মো. আবু সাইদ সিকাদারের স্ত্রী আসিয়া খাতুন, তার ছেলে মো. হোসেন সিকাদার, জোবায়েদ শিকদার ও সুমন সিকদার।

সম্মেলনে মো. হোসেন সিকদার বলেন, আমার পিতা নিতাইগঞ্জের বিশিষ্ট গম ব্যবসায়ী ছিলেন। মের্সাস শাহাজালাল এন্টারপ্রাইজ নামে ও কোহিনুর ও রেডিয়াম ফ্লা. মিল নামে ২টি ময়দার মিলের মালিক ছিলেন। তার ধারবাহিকতায় নিতাইগঞ্জ মার্কেটের সাথে দীর্ঘ দিন যাবত আমরা ভাইয়েরা এই ব্যবসায় জড়িত। আমরা আমাদের বাণিজ্য আলাদাভাবে পরিচালনা করে আসছি। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি মার্কেটের মের্সাস মক্কা-মদিনা ফ্লা: মিল নামক এক মিল ব্যবসায়ী হাসান ফকিরের সাথে ব্যবসায়িক সংক্রান্ত লেনদেন বাবদ ৭০ লাখ টাকা পাওনা হই। যা তিনি পরিশোধ না করে উক্ত টাকার চেক সবাইকে আলাদাভাবে দিয়ে মার্কেট থেকে চলে যায়। যা তার আরেক প্রতিষ্ঠান মের্সাস ফাহিম এবং সৈয়দপুর ট্রেডার্স নামে ছিলো। চেকের ৬ মাস পার হয়ে গেলে তার সাথে সবাই আমরা ব্যবসায়িক ভাবে সকল পাওনাদাররা বসি। তখন সে ৩ মাস সময় নিয়ে একটি লিখিত স্টাম্পে যা সে মারা গেলেও তার ওয়ারিশদ্বয় তার জায়গা সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা দিবে ও একটি চেকের মাধ্যমে ৭০ লাখ টাকা সবাইকে দিবে বলে আশ্বস্ত করে। ৩ মাস পার হয়ে গেলেও চেক পাশ না হওয়াতে ঐ চেকের মাধ্যমে ডিস-অনার মামলা করি। যার মামলা নং-সিআর ৩৫৭/১৯।

এই বিষয় নিয়ে তার পরিবারকে জানানো হলে তার পরিবারের সদস্যারা আমাদেরকে ও অন্যান্য পাওনাদারদের নিয়ে বসে। সেখানেও হাসান ফকির তার পরিবারের সম্মুক্ষে সে তার সম্পত্তি বিক্রি করে তার সামর্থ্য অনুযায়ী আমাদের চারজন সুমন, জনি, হোসেন ও দুলালকে ৫৫ লাখ টাকা দিবে বলে আশ্বস্ত করে। যা তিনি ছোট একটি কাগজে নিজ হাতে লিখিত দেয়। সেই থেকে ৩ মাস পার হয়ে গেলেও সে টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। তখন তার সাথে যোগাযোগ করা হলে সে বলে আমার জায়গা সম্পত্তি সব এজমালি। পরিবারের অনেক খামখেয়ালির কারণে জায়গাগুলো বিক্রি করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে নারায়নগঞ্জ জেলা সাবেক এসপি হারুন অর রশিদ বরাবর জানানো হলে সে তাকে ডেকে আনে এবং ১০ দিনের সময় নিয়ে চলে যায়। মাস খানেক পর তার সাথে তিনি আবারো একই কথা বলেন। আবারও তার পরিবারকে বলা হলে তার ভাই এবং তার স্ত্রী আশা মনি পিংকি কোনো ভাবেই সম্পত্তি আলাদা করে দিবে না কিন্তু পাওনাদারের টাকা হিসেবে শীতলক্ষ্যা ব্রীজের শেষাংশে জমি বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করবে। তার বিনিময়ে হাসান ফকিরের বিল্ডিং ও জায়গা ভাইয়েরা ও স্ত্রী রেখে দিবে। কিন্তু সেই জায়গাও তাদের ১১ জন ওয়ারিশদের মধ্যে কেউ কেউ বলে বিক্রি করবে না। তারপর হাসান ফকির বলে বাড়ি বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করবে সেখানেও সম্পত্তির লোভে তার পরিবার কোনো সহযোগীতা করতো না। কারণ তার কোনো ওয়ারিশ ছিলো না। সে মারা গেলে তার সব সম্পত্তির মালিক হবে তার ভাই এবং স্ত্রী। এর মাঝে আমরা জানতে পারি মামুন নামে আরেক পাওনাদারের সাথে তার হাতাহাতি হয় এবং আত্মীয় হওয়ার কারণে তার কিছুখন পরেই সেটা আপোষে মিটে যায়। যা মার্কেটের অনেকেই দেখে। বিষয়টি জানার জন্যে হাসান ফকিরকে ফোন দিলে সে বলে আমরা তাকে কোনো আঘাত করি নাই, কোনোরূপ অত্যাচার করি নাই যার পুরো রেকর্ড আমাদের কাছে আছে। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর আমরা সবাই জানতে পারি যে হাসান ফকির আত্মহত্যা করে এবং এটাকে অপমৃত্যু হিসেবে সদর থানায় নথি করে। যার মামলা নং- ২৫, তাং-১০/১২/১৯। এরপর আমরা কেউ তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করি নাই। এর ৮ দিন পর আমাদের ৩ জনের নামে সদর থানায় আত্মহত্যা প্ররোচনামূলক মামলা করে হাসান ফকিরের স্ত্রী। মামলায় অভিযোগ করা হয় আমরা ১০ বছর যাবত ব্যবসায়ের লভ্যাংশ নেই। যেখানে আমি ব্যবসা শুরু করি ২০১৫ সালের শেষ দিকে আর হাসান ফকিরের সাথে লেনদেন শুরু হয় ২০১৮ সালে তাহলে ১০ বছর কিভাবে হল? মামলায় আরো উল্লেখ করা হয় ০৩/১২/১৯ তারিখে আমারা নিজেরা হাসান ফকিরকে মারধর করি অথচ আমরা ৩ জন সেখানে উপস্থিত ছিলাম না এবং পরেরদিন তিনি নিজে স্টেটম্যান্ট দেয় আমরা তাকে মারি নাই। তাহলে আমরা কিভাবে তাকে মারলাম? এখানেই স্পষ্ট হয়ে উঠে আত্মীয়তার সম্পর্ক যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য ঐ ব্যাক্তির নামের পরিবর্তে মামলায় আমাদের নাম ফাসিয়ে দেয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, মামলা প্রসঙ্গে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলে পাওনা টাকার দাবি ছেড়ে দিলে তারা মামলা তুলে নিবে। মামলায় জামিনে বের হয়ে আসার পর ব্যবসায়িক মহল নিয়ে সামাজিকভাবে বসতে চাইলে ওর ভাই সুলতান ফকির বলে পাওনা টাকার দাবি ছেড়ে দিলে তারা মামলা তুলে নিবে না হলে জেল খাটানোর জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন তাই করবে। তাহলে এটা কি পুরো মিথ্যা অপবাদ, ষড়যন্ত্রমূলক মামলা বলা যায় না? আমরা যদি এই মামলায় জড়িত থাকতাম তাহলে প্রথমে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা না করে অপমৃত্যু মামলা কেন ফাইল হলো?

হোসেন সিকদার বলেন, হাসান ফকির কখনোই বলে নাই যে টাকা দিবে না। ও কেন আত্মহত্যা করলো? ওর যদি টাকা না দেয়ার ইচ্ছা থাকত তাহলে ও পালিয়ে যেত। প্রশ্ন হল, দেয়ার সামর্থ্য না থাকলে একটি কথা ছিলো কিন্তু দেয়ার সামর্থ্য থাকা সত্তে¡ও কেন দিতে পারেনি, কারণ একটিই তার সম্পত্তি তার পরিবার ও স্ত্রী হনন করবে। প্রশাসন যদি একটু তদন্ত করে তাহলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে যে, সম্পত্তির লোভের কারণে হাসান ফকিরকে আত্মহত্যা করতে তার পরিবার ও তার স্ত্রী প্ররোচিত করেছে। আজকে আমাদের যে হয়রানী করা হলো তার একটাই কারণ যাতে আমরা আর টাকার দাবি করতে না পারি। আমরা এসপি মহোদয়ের নিকট সুষ্ঠু তদন্ত কামনা করছি, কারণ এরা যে আমাদের আবার হয়রানী করবে না তার নিশ্চয়তা কি? তাই এই মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা থেকে আমাদের অব্যাহতি দেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি এবং এর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করছি।

আরএইচ/এসএমআর

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ