আজ সোমবার, ২৭শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

হতাশ বিএনপি সিদ্ধান্তহীনতায়!

হতাশ বিএনপি

হতাশ বিএনপি

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চার মাসের বেশি সময় ধরে বেগম খালেদা জিয়া জেলে। দলের অধিকাংশ নেতা পলাতক। তৃণমূলে মামলা হামলায় নেতাকর্মীরা হয় জেলে না হলে পালিয়ে। এই অবস্থায় বিএনপিতে ক্রমশ বাড়ছে হতাশা। একে অন্যকে দোষারোপ করছে। সর্বশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা জড়িয়ে যেতে পারেন, এমন আশঙ্কা ছড়িয়ে পরেছে। এ অবস্থার প্রভাব পরবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ অবস্থায় কি করবে বিএনপি? কোটা সংস্কারে আন্দোলন থেকে দুটি শিক্ষা বিএনপি নিতে পারে। প্রথম শিক্ষা, আন্দোলনের দাবী জনপ্রিয় হলে মানুষ তাতে যোগ দিবে। দ্বিতীয় শিক্ষা, ষড়যন্ত্র করে বর্তমান সরকারকে হটানো এখন কঠিন। এই শিক্ষা কি বিএনপি নেবে? এই শিক্ষা নিয়ে কি বিএনপি তাঁর নতুন গতিপথ ঠিক করতে পারবে?
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক ভাবেই বলেছেন, ‘কোটা আন্দোলনের পেছনে লন্ডন ষড়যন্ত ছিলো।’ তারেক জিয়ার সঙ্গে অধ্যাপক মামুন আহমেদের কথোপকথনের অডিও বাজারে চলে আসার পর বিএনপিও এখন গর্তে ঢুকে গেছে। বিএনপি এখন কর্মসূচীহীন। একমাত্র সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সংবাদ ব্রিফিং ছাড়া বিএনপির কোন দৃশ্যমান কর্ম তৎপরতা নেই।
খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারুন বা না পারুন, বিএনপি আন্দোলন গড়ে তুলতে পারুক বা না পারুক, সরকারের মনোভাব যা-ই হোক, বিএনপির আগামী নির্বাচনে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তারা নির্বাচনে যাবে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।
কোটা সংস্কার আন্দোলন, গত বছর বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন এবং ব্যবসায়ীদের অন লাইন ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনের পর একটা বিষয় পরিষ্কার হয়েছে, জনপ্রিয় ইস্যূতে আন্দোলন হলে সরকার তা মেনে নেয়, সমঝোতায় আসে। নির্বাচনের মাত্র কয়েকমাস আগে সরকার সংঘাতে যেতে চায় না। তাহলে প্রশ্ন আসে, বিএনপি কেন একটি জনসম্পৃক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেছে না? বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যরিষ্টার মওদুদ আহমেদ স্বীকার করেছেন যে ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে অনেক শিক্ষনীয় আছে।’ তিনি বলেন ‘আমরা সরকারের বিরুদ্ধে জনগনকে নিয়ে এরকম আন্দোলন করতে পারিনি’ বিএনপির আরেক নেতা আমীর খসরু চৌধুরী অবশ্য বলেন ভিন্ন কথা। তার মতে,‘সরকার তো আমাদের দাঁড়াতেই দিচ্ছে না। ঢাকায় আমরা একটা জনসভা করতে পারছি না। মিছিল তো দূরের কথা।’ কিন্তু আমীর খসরুর বক্তব্যকে পরাজিতের প্রলাপ বলেছেন বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী এবং গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় যদি বিএনপি এক লাখ লোক রাস্তায় নামায় তাহলে কি সরকারের সাধ্য আছে বাধা দেয়?’ তাঁর মতে, ‘আন্দোলন আপনি যার বিরুদ্ধে করবেন, তাঁর অনুমতি নিয়ে করলে তো সেটা আন্দোলন হলোনা।’ বিএনপির সমর্থক আরেক বুদ্ধিজীবী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, ‘বিএনপির জনসমর্থন আছে। কিন্তু জনসম্পৃক্ততা নেই। বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করার চেষ্টা করছে না বা পারছে না।’
নেত্রীর মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন সময় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করে দলটি। একই সঙ্গে চালিয়ে যায় আইনি লড়াই। কিন্তু কোনো কিছুতেই দলের নেত্রীকে মুক্ত করতে পারেনি।
বেশ কিছুদিন ধরে কোনো আন্দোলন কর্মসূচীও পালন করেনি দলটির নেতাকর্মীরা। শুধু আইনি প্রক্রিয়াই চলছিল, কিন্তু একটার পর একটা মামলায় জামিন আটকে যাওয়ায় তারা হতাশ। দলটি মনে করছে সরকার না চাইলে কোনোভাবেই বেগম জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। আবারো রাজপথে নামার বিকল্প দেখছে না বিএনপি। তাই নতুন করে আন্দোলন কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর এ আন্দোলন পরে কঠোর আন্দোলনে রুপ দেয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
দুদকের দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের কারাদ- দেন বিচারিক আদালত। সেই থেকে তিনি পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন।