আজ রবিবার, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সোনারগাঁয়ে ৭ দফা দাবীতে মান্নানের সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নান ৭ দফা দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করছেন। ২৫ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে সোনারগাঁয়ের মেঘনাঘাট এলাকায় প্রতাপেরচর তার নিজ বাড়িতে এ সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁও পৌর বিএনপির সিনিয়ন সহ সভাপতি শাহজাহান মেম্বার, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির রফিক, কাঁচপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সেলিম হক রুমি, সাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কামরুজ্জামান ভূইয়া মাসুম, সোনারগাঁ উপজেলা তাঁতী দলের সভাপতি আমির হোসেন, সোনারগাঁ উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেন নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান স্বপন, সোনারগাঁ পৌর শ্রমিক দলের সভাপতি আব্দুর রাহিম প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে আজহারুল ইসলাম মান্নান অভিযোগ করেন, আগামী ৩০ (ত্রিশ) ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছি। দেশের ক্রান্তিলগ্নে গনতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার ও দেশমাতা সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষে জনগনের ভোটের অধিকার এবং গনতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।

বর্তমান সরকার ও পুলিশ বাহিনী যতই অত্যাচার নির্যাতন করুক না কেন আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে লড়াই চালিয়ে যাব।

সারা দেশের মতো নারায়নগঞ্জ-৩ সোনারগাঁ আসনে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের মধ্যে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরী করা হয়নি। বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ না থাকার কারনে তাদের অধিনস্থ পুলিশ ও সকল প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তারা নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করছেনা। আমার নেতাকর্মীদের উপর হামলা মাইক ভাংচুর, বিভিন্ন স্থানে পোস্টার ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। মহাজোটের সমার্থকরা ইতিমধ্যে বৈদ্যের বাজার এলাকায় আমার পোস্টার আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। মাঠে মহাজোট প্রার্থীর ফেস্টুন পোস্টার ব্যানারে সয়লাব থাকলেও ধানের শীষের পোস্টার ব্যানার কোথাও টানাতে দিচ্ছেনা।

গত ১৩ (তের) ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও থানার ওসির সামনে মিটিং চলাকালীন সময়ে মহাজোটের প্রার্থীর এক সমর্থক আমাকে গলা টিপে হত্যা করার চেষ্টা চালায়। কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা যাবেনা এই মর্মে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা থাকলেও মাঠ পর্যায়ে পুলিশ এ নির্দেশ মানছেনা।

সোনারগাঁ থানার পুলিশ প্রতিদিন আমার নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নেতাকর্মীদের না পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিচ্ছে। সারা দেশের ন্যায় সোনাগাঁয়েও নির্বাচনের নামে প্রহসন করার সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করে রেখেছে বর্তমান সরকার। শান্তি প্রিয় সোনারগাঁয়ের মানুষের ভোটের অধিকার রক্ষার সংগ্রামে আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।

গত উপজেলা পরিষদ ও ইউপি নির্বাচনে বারদি ইউনিয়নের নূনেরটেক ও চরকিশোরগঞ্জ সহ কয়েকটি কেন্দ্র দখল করে সরকার সমর্থকরা। সেই দুটি কেন্দ্রে কেউ ভোট দিতে আসেনি। আমি বিশ্বস্তসূত্রে জানতে পারলাম নূনেরটেক ভোট কেন্দ্রে গত দুটি নির্বাচনে যে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করে সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দিয়ে বাক্স ভর্তি করেছিল পুনরায় এবারের নির্বাচনেও অনিয়ম ও জালিয়াতি করার জন্য সেই একই প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে নির্বাচনের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে মহাজোট প্রার্থীর ইচ্ছায়। তিনি সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। এ উপজেলায় ১০ (দশ) বছরেরও অধিক সময় তিনি এখানে কর্মরত আছেন। নির্বাচনের কয়েক মাস আগে শুধুমাত্র ভোট জালিয়াতি করার জন্য তাকে এখানে বদলি করে আনা হয়েছে। গুনধর এ কর্মকর্তা হলেন উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ইয়াছিন হাবিব তালুকদার।

এছাড়া আরেক কর্মকর্তা উপজেলা প্রকৌশলী আলী হায়দার খানকে ভট্টপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র-২ (দুই) এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ জানাব অবিলম্বে এ দলবাজ কর্মকর্তা দুজনকে প্রত্যাহার করা হোক।

আপনারা স্থানীয় গনমাধ্যমকর্মী হিসেবে আরো অবগত আছেন, আমি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে সরকারি অর্থে এক কাপ চা পর্যন্ত খাইনি। আমার মাসিক সম্মানী ভাতা এতিমখানায় দান করে দিয়েছি। বর্তমান সরকার বারবার আমাকে বরখাস্ত করেছে। আমি মিথ্যা রাজনৈতিক মামলার আসামী হয়েছি। আমার ছেলে জেলা ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম সজীব সহ সোনারগাঁ থানার শত শত নেতাকর্মী কয়েক দফা মিথ্যা মামলার স্বীকার হয়ে জেল খেটেছে। পুলিশ আমার নেতাকর্মী এমনকি যারা কয়েক বছর আগে মারা গেছেন কিংবা যাহারা দেশের বাইরে (প্রবাসী) থাকেন তাদেরকেও গায়েবী মামলার আসামী করেছেন। কর্মীদের জামিন নিতে ৫ (পাঁচ) বছর ধরে সপ্তাহের ৪ (চার) দিন আমাকে হাইকোর্টে যেতে হচ্ছে। সরকারের এত অত্যাচার নির্যাতনের পরেও দলকে ভালবেসে আমি নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছি। নেতাকর্মীদের উপর এত অত্যাচার নির্যাতন হচ্ছে তা স্বত্তেও সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জনগনকে নিয়ে রাজপথে ছিলাম।

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের জনপ্রীয়তা দেখে মহাজোটের প্রার্থী ও তার সমর্থকরা আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আপনাদের মাধ্যমে আমি সোনারগাঁবাসীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমি নির্বাচনে জয়ী হতে পারলে আমার প্রথম কাজ হবে যুব সমাজকে বাঁচাতে এলাকাবাসীদের সাথে নিয়ে মাদক নির্মূল করা, এটাই আমার প্রধান ওয়াদা। তাছাড়া সোনারগাঁয়ে যেসব স্থানে অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে তা সরকারি ভাবে বৈধ করব।

সরকারি ভাবে বৈধ করার আগে কোথাও যাতে কোনো গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা না হয় তার ব্যবস্থা নেব। আমি জয়ী হলে, মেঘনা নদী থেকে বিগত ৫ (পাঁচ) বছর যেভাবে টেন্ডার ছাড়া অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে মানুষের বাড়িঘর ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন করে দেয়া হয়েছে তা বন্ধ করব। নদী থেকে কোনো অবৈধ বালু উত্তোলন করতে দেয়া হবেনা। তাছাড়া শিল্প এলাকায় কোনো চাঁদাবাজ, ভুমি দস্যুকে কোন প্রকার প্রশ্রয় দিবনা। সোনারগাঁয়ের প্রতিটি রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন করব। সোনারগাঁয়ের কোনো কাঁচা রাস্তা থাকবেনা। নারীদের উন্নয়ন ও নারী নির্যাতন বন্ধে পদক্ষেপ নেব। শিক্ষিত বেকার যুবকদের সরকারি ও বেসরকারি চাকরির ব্যবস্থা করব।

ব্যবসা বানিজ্য করে আমার পরিবার স্বচ্ছল, আমি কোনো দুর্নীতি ও অনিয়মকে ছাড় দেবনা। ঈশাখার রাজধানী ঐতিহাসিক সোনারগাঁকে একটি পর্যটন নগরীতে পরিনত করব। মেঘনা ঘাট থেকে বিআরটিসি বাস ও এসি বাসের ব্যবস্থা করব। সর্বোপরি এলাকাবাসীদের চাহিদা অনুযায়ী মস্জিদ,মাদ্রাসা,স্কুল,কলেজ ও স্বাস্থ্যখাত সহ এলাকাবাসীদের অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর চাহিদা অনুযায়ী সবধরনের কাজ করব।

নির্বাচনের তারিখ যতই নিকটবর্তী চলে আসছে ততই আমার নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ বাহিনী ও লাঙ্গল প্রতিকের সন্ত্রাসীরা আমার নেতা কর্মীদের উপর গ্রেপ্তার হামলা হুমকির মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। গত ২৪ ডিসেম্বর আমার গণসংযোগে হামলা চালিয়ে ১০ (দশ) জনকে হামলা চালিয়ে গুরুতর ভাবে আহত করে। এবং গত ২ (দুই) দিনে নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক সহ ২০ (বিশ) জন নেতা কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।

প্রতিদিন রাতের বেলা নেতা কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ উপস্থিত হয়ে প্রকাশ্যে মহাজোটের প্রার্থী লাঙ্গল প্রতিকের পক্ষে ভোট চাচ্ছে। কেউ পুলিশের কথায় রাজি না হলে গ্রেপ্তার সহ নানা ভাবে হয়রানি এবং এলাকা ত্যাগের হুমকি দিয়ে আসছে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ