মাজহারুলইসলাম:নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ইউনিক গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান স্থানীয় নেতা ও প্রভাবশালীদের সাথে নিয়ে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গত কয়েকদিন ধরে সেখানে পুনরায় বালু ভরাট শুরু করেছে। কৃষকদের ফসলী জমি রক্ষায় যে কোন সময় ফুসে উঠতে পারে এলাকাবাসী।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক সূত্রটি জানায়, ব্যক্তি মালিকানাধীন দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ইউনিক গ্রুপ সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের মেঘনা নদীর তীরবর্তী ভাটিবন্দর, ছয়হিস্যা, রতনপুর, ভবনাথপুর, জৈনপুর ও কান্দারগাঁও সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার একর কৃষি জমিতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা নামধারী ও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে গত ২/৩দিন ধরে জোড়পূর্বক বালু ভরাট করছে ।
ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে বিভিন্ন ভাবে বাঁধা দেয় কিন্তু সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি কর্তৃপক্ষ সরকারী নিয়ম-নীতিও উচ্চ আদালতকে অমান্য করে তাদের আবাসন প্রকল্প তৈরীর জন্য ২০০৯ সালে বালু ভরাটের কাজ শুরু করে। ফলে, ওই অঞ্চলের হাজার হাজার বিঘা কৃষি জমির মালিক বেকার হয়ে পরে।
এমতাবস্থায় ২০১৪ সালের ২ মে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) স্থানীয় কৃষকদের কৃষি জমি রক্ষায় একটি রিট করে। রিটে প্রাথমিক শুনানি করে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রুল জারি করে। রুলটিতে সোনারগাঁও উপজেলায় রিসোর্ট সিটি নির্মাণে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। সেই রুলে সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটির জন্য ইউনিক প্রোপার্টি ডেভলপমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্তৃক অনুমোদিত মাটি ভরাট থেকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের পিরোজপুর, জৈনপুর, ছয়হিস্যা, চরভাবানাথপুর, ভাটিবান্ধর ও রতনপুর মৌজার কৃষি জমি, জলাভূমি, নিচু ভূমি রক্ষায় কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চান আদালত।
সবশেষ ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ পূণঃরায় রিসোর্ট সিটিতে বালু ভারাট ও রিসোর্ট সিটি নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। আদালতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) পক্ষে ছিলেন এ এম আমিন উদ্দিন, মিনহাজুল হক চৌধুরী। সোনারগাঁ রিসোর্ট সিটির নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ইউনিক প্রোপার্টি ডেভলপমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে কামরুল হক সিদ্দিকী এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এসময় রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সংশিষ্ট এলাকায় মাটি ভরাট বন্ধে নিষেধাজ্ঞাও দেন আদালত। এই আদেশ মনিটরিং এবং বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জের যুগ্ম-পরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২৫ অক্টোবর ইউনিক প্রোপার্টি ডেভলপমেন্ট বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি মো. সেলিমের বেঞ্চে একটি আবেদন করেন। এই আবেদনের শুনানি করে আদালত পূর্ববর্তী অন্তবর্তীকালীন নির্দেশনা সংশোধন করে প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেন। ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল করে বেলা। বেলার আবেদন শুনানি করে আপিল বিভাগ ৬ সপ্তাহের মধ্যে মূল রুল নিষ্পত্তি করতে সব পক্ষকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি সংক্রান্ত আদেশটি স্থগিত করেন কিন্তু ওই আদেশের পর সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটিতে বালু ভরাটের কাজ পায় সোনারগাঁওয়ে একটি প্রভাবশালী ব্যক্তি। মহলটি বছরের প্রথম থেকেই রাতের আধারে পরে প্রকাশ্যে বালূ ভরাট শুরু করে।
এনিয়ে গ্রামবাসীদের সাথে বালু সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে বালু সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে ও কুপিয়ে ২০ গ্রামবাসীকে আহত করে। এনিয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যাম্যে সংবাদ প্রকাশ হবার পর সোনারগাঁয়ে আলোচনার ঝড় উঠে। এর পেক্ষিতে ১০ জানুয়ারী ২০১৬ সালে জেলা পরিষদ থেকে বালু ভরাট বন্ধ করার জন্য সোনারগাঁও উপজেলা প্রশাসন ও কোম্পানীটিকে বালু ভরাট বন্ধের জন্য নোর্টিশ প্রদান করে। উপজেলা প্রশাসন বালু ভরাট বন্ধ করেদেয়। কিন্তু আদালতের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে
একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এবছরে গত কয়েকদিন ধরে পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান মাসুমের নেতৃত্বে অবৈধভাবে ইউনিক প্রোপ্রাটি বালু ভরাট চলছে। পৈত্রিক ও ক্রয়কৃত জমি রক্ষা করতে গতকাল জমির মালিক গণ তাদের জমিতে মালিকানা সাইন বোড টানিয়ে দিয়েছেন।
এব্যাপারে জমির মালিক জাকির হোসেন জানান, কোম্পানির ক্রয়কৃত জমিতে বালু ভরাট করায় আমাদের কোন আপত্তি নাই। কিন্তু আমাদের মালিকানা ফসলী জমিতে যাতে জোর পূর্বক বালু ভরাট না কেরে, সেজন্য প্রশাসনের নির্দেশে আমরা আমাদের জমিতে সাইন বোড টানিয়েছি। তিন আরো বলেন অধিকাংশ জমিই কোম্পনি তাদের পোষ্য বাহিনী দিয়ে জোড়পূর্বক ভরাট করছে।
এলাকাবাসী জানান, শত শত কৃষকের বেচে থাকার এক মাত্র অবলম্বন তাদের ফসলী জমি জোড়পূর্বক ভরাট করতে থাকলে যে কোন সময় স্থানীয় জনগণ ফুসে উঠতে পারে ।
এ বিষয়ে পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান মাসুমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহীনুর ইসলাম জানান, প্রশাসনের অজ্ঞাতে কে বা কাহারা বালু ভরাট করছে বলে শুনেছি। এব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।