আজ শনিবার, ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সেলিম ওসমানের বাধায় থেমে নেই বিএনপিহীন এসএম আকরাম

সেলিম ওসমানের বাধায়

নিজস্ব প্রতিবেদক:

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ১১ দিন। গত ১০ ডিসেম্বর দলীয় প্রতীক পাওয়ার পর থেকে প্রার্থীরা ও তাদের নিকট আত্নীয়স্বজনসহ সমর্থক-কর্মীরা কাছা দিয়ে নেমে পড়েছেন প্রচার-প্রচারণায়। প্রচারণায় একাধিক স্থানে সেলিম ওসমানের নেতাকর্মীদের বাধার সম্মুখিন হয়েছেন বিএনপিহীন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী এসএম আকরাম। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (জাপা) প্রার্থী ও সমর্থকরা নির্বাচনী এলাকার একপ্রান্ত থেকে অপরপান্ত প্রচার প্রচারণা চালতে সক্ষম হলেও পারছেন না বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলো। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি গঠিত (সদর-বন্দর) নিয়ে গঠিত। এ আসনে ভোটার নারী-পুরুষ ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৬১৬ জন। এ আসনে জয়ের সম্ভাবনায় জাতীয় পার্টির (জাপা) মনোনিত প্রার্থী সেলিম ওসমান ও ঐক্যফ্রন্ট বিএনপির মনোনিত প্রার্থী এস এম আকরাম।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে মনোনয়ন নিয়ে এরশাদ সরকারের সময় টানা দুইবার ৯ম ও ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারে সদস্য প্রায়ত নাসিম ওসমান। তার অকাল মৃত্যুতে আসনটিতে উপনির্বাচন হয় ২০১৪ সালের মে মাসে। সে নির্বাচনে ওসমান পরিবারের সন্তান সুনামধন্য ব্যবসায়ী সেলিম ওসমান। বলা যায় স্বাধীনতার পরবর্তী সময় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। সেই আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ব্যানারে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে ১৯৯৬ সালে প্রথম বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোন এস এম আকরাম।

২০০১ সাল থেকে আওয়ামী লীগের নেতা এস এম আকরাম দল ছুট খেলায় নেমে পড়েন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের আহব্বায়ক ছিলেন। পরে মাহামুদুর রহমান মান্নার গঠিত নাগরিক ঐক্য কমিটির মুখ পাত্র ছিলেন। বর্তমানে তিনি ড. কামালের গড়া ঐক্যফ্রন্টের মুখ পাত্র হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে ঐক্যফ্রর্ন্ট বিএনপির মনোনিত প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে ভোটের লড়াইয়ে মাঠে রয়েছেন এস এম আকরাম। গত ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে মনোনয়ন নিয়ে ওসমান পরিবারের সন্তান সুনামধন্য ব্যবসায়ী সেলিম ওসমান নির্বাচিত হোন। সেলিম ওসমান ২০১৪ সাল পরবর্তী সময় এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেন।

২০১৮ সালের ১১তম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে মনোনয়ন নিয়ে ভোটের মাঠে ব্যাপক প্রচার প্রচারণাসহ গণসংযোগ করছেন। এ আসনের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ, তাঁতী লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-নেত্রীদের পাশে পেয়ে সেলিম ওসমান সদর-বন্দর থানা এলাকায় নির্বাচনী কর্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে দলছুট নেতা ঐক্যফ্রর্ন্টের মুখপাত্র এসএম আকরাম হতাশ ও হাপিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির জনপ্রিয় এবং পদধারী নেতা-কর্মী সমর্থকদের কাছে না পেয়ে।

তিনি হাপিয়ে যাচ্ছেন সদর-বন্দর থানার বিএনপির শক্তিশালী নেতা-কর্মী ও বিএনপির অঙ্গসংগঠনের কোন নেতাকে কাছে না পেয়ে। এসএম আকরাম গত ১০ ডিসেম্বর ধানের শীষ প্রতীক পাওয়ার পর থেকে দলের অনেক ত্যাগী ও বহু মামলা হামলার শিকার হয়েছেন এমন কোন নেতাকে তিনি তার কাছে ভেড়াতে পারেন নি। না পারার কারনে তিনি হতাশ ও হাপিয়ে যাচ্ছেন। ১২, ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর স্থানীয় কয়েকজন অনুসারীদের নিয়ে গণসংযোগ করতে গিয়ে একাধিকস্থানে তোপের মুখে পড়েছেন বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, এসএম আকরামের কর্মসূচি কাইকারটেক, আলীরটেকে পন্ড হয়েছে।

তার কর্মসূচি পন্ড হওয়ার বিষয়ে স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, বিএনপির ত্যাগী ও মামলা হামলার শিকার নেতা-কর্মীদের সাথে কোন প্রকার আলোচনা না করে কর্মসূচি দেয়ায় ও গণসংযোগ করতে আসায় সফল হতে পারেন নি। আকরামের নামে দলছুট নেতা আখ্যা সদর-বন্দরবাসী ও দলীয় নেতা-কর্মীদের থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ায় কোথাও দাঁড়াতে পারছেন না এস এম আকরাম। স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জনপ্রিয় নেতা ও দুইবারের সংসদ সদস্য আবুল কালামকে পাশে পাচ্ছেন না। আবুল কালাম অসুস্থ্য তার খোঁজ নিতে শোনা যাচ্ছে না।

এ নিয়ে কালাম ভক্তদের মধ্যে ক্ষোভ চরমে। আরেক জনপ্রিয় নেতা বাংলাদেশ সাম্যবাদী কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক সাঈদ আহাম্মেদ আকরামের সমর্থনকারী হলেও এখনও তিনি পাশে নেই। মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি কারাবন্দী এড. সাখাওয়াত হোসেনের সমর্থকদের ডাক খোজ না করায় আকরাম গণসংযোগ জমাতে পারছেন না। মহানগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক এটিএম কামাল, মহানগর যুবদলের জনপ্রিয় সভাপতি ও ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, বিএনপির নেতা মকুলসহ যুবদল, ছাত্রদল, তাঁতীদল, শ্রমিকদল, কৃষকদল, মহিলাদল, যুব মহিলা দলসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-নেত্রীদের এখন ভোটের মাঠে নামাতে পারেন নি আকরাম।

এমন অবস্থা দেখে জাতীয়তাবাদী দলের অনেকেই বলছেন, বিএনপির প্রার্থী আকরাম ভোটের মাঠ ছাড়তে পারেন যে কোন সময়। এর কারন হিসেবে তারা আরও বলছেন, যে নেতা নিজ দলের ত্যাগী নেতাদের একসাথে করতে পারেন না তিনি কিভাবে জনপ্রিয় নেতা সেলিম ওসমানকে পরাস্থ করবেন? সেলিম ওসমান এলাকায় দান বীর হিসেবে খ্যাত হচ্ছেন। অপরদিকে এসএম আকরাম দলছুট নেতা হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করে বসেছেন।