আজ শুক্রবার, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সাংবাদিকদের তোপের মুখে লিফলেট অপসারণ করেছে ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল কৃর্তপক্ষ

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
১০০ শয্যা বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ সরকারি ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের নার্সদের ঔষধ চুরির সংবাদ দৈনিক সংবাদচর্চা পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছিলো হাসপাতালে কর্মরত নার্সরা (সেবিকা)। সংবাদ প্রকাশের পরদিন দুইজন সাংবাদিক ওই হাসপাতালে চিকিৎস্যার জন্য গেলে সেখানে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে তারা। পরবর্তীতে পত্রিকায় হাসপাতালের নার্সদের ঔষধ চুরির বিষয়ে সত্য প্রকাশের কারণে মানববন্ধনও করেন তারা। সবশেষে হাসপাতালের ইমার্জেন্সি কক্ষে একটি পোষ্টারে তারা কৃর্তপক্ষের আদেশক্রমে লিখে দেয় “সংবাদচর্চা” এর হলুদ সাংবাদিকদের অত্র হাসাপাতালে প্রবেশ নিষেধ। ওই পোষ্টার লাগানোর পরপরই নারায়ণগঞ্জে যুবক সাংবাদিক থেকে প্রবীণ সাংবাদিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। কর্র্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে তারা প্রশ্ন রাখেন, কোন প্রমাণ ছাড়া কিভাবে পত্রিকার সাংবাদিকদের তারা হলুদ সাংবাদিক বলে। একটি পত্রিকাকে হলুদ পত্রিকা বলার সাহস তাদের কোথা থেকে আসে।
নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার সাংবাদিকগণ তাদের নিজনিজ ফেইসবুক একাউন্টে ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন স্ট্যাটাস প্রদান করেন। জানা যায়, ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের এমন দায়সাড়া কর্মকান্ডের বিষয়ে সাংবাদিকগণ মানববন্ধনও করবেন।
গত ৭ মে দৈনিক সংবাদচর্চায় ভিক্টোরিয়া হাসাপাতালের নার্সদের ঔষধ চুরির সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এরপর ওই হাসাপাতারে দুইজন সাংবাদিক চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে প্রবেশ করলে সেখানে সাংবাদিকদের দুই ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এমনকি পত্রিকার বিরুদ্ধে মানববন্ধনও করেন তারা। এরপরেও ক্ষান্ত হননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
দৈনিক সংবাদচর্চা পত্রিকাকে হলুদ পত্রিকা বলে ওই পত্রিকার সাংবাদিকদেরও হলুদ সাংবাদিক হিসেবে আখ্যায়িত করে একটি পোষ্টারে লিখে দেন অত্র হাসাপাতালে সংবাদচর্চার সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধ। এই কাজটা করার কতটুকু এখতিয়ার তারা রাখেন এমন প্রশ্ন করে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুমকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়া কারোই উচিৎ নয়। তারা যেটা করেছে সেটা ঠিক করেনি। কোন সাংবাদিককে তারা অবরুদ্ধ করে রাখবে এরকম এখতিয়ার তাদের নেই। এছাড়াও পত্রিকাকে হলুদ বলা সেই সাথে প্রমাণ ছাড়া সাংবাদিকদের হলুদ সাংবাদিক বলা এটাও তারা ঠিক করেননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এটা করার এখতিয়ার রাখে না। এককথায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ।
এ বিষয়ে ডান্ডিবার্তা পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক হাবিবুর রহমান বাদল বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনে কারোই কাউকে বাধা দেয়া উচিৎ নয়। সাংবাদিকদের ২ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখা তারপর কোন পত্রিকা ও সাংবাদিকদের প্রমাণ ছাড়া হলুদ সাংবাদিক বলা অবশ্যই নিন্দনীয়।
এ বিষয়ে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বী বলেন, হলুদ সাংবাদিক কারও গায়ে লেখা থাকে না। হলুদ পত্রিকা বলে কোন পত্রিকাও নেই। ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের কৃর্তপক্ষ গণমাধ্যম ও গণমাধ্যম কর্মীদের হেয় করে কোন প্রচার লিফলেট সাটানোর অধিকার রাখে না। নারায়ণগঞ্জের সরকারি হাসপাতালগুলোর সেবার মান ও ঔষধ চুরির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্য তার কাছে নেই। তবে তথ্য উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে আগামীতে কর্মসূচী দেয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুজ্জামান কাউসার বলেন, সিভিল সার্জন যা করেছে তা অন্যায়। এ ঘটনায় তিনি সাংবাদিক সমাজের ঘৃনা আহরণ করেছেন। তার মতো একজন ব্যক্তি এমন কাজ করতে পারেন না। তার হাসপাতালে কি চলছে তা সাধারন মানুষ অবগত আছেন। নিজেদের দোষ ঢাকতে সাংবাদিকদের অপবাদ দেয়া তার জন্য সুখকর হবে না।
নারায়ণগঞ্জ সিটি প্রেসক্লাবের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, একজন সংবাদকর্মীকে ২ ঘন্টা আটকে রাখার অপরাধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জবাব দিতে হবে। তারা নারায়ণগঞ্জে স্বাস্থ্যসেবার নামে লাশে ঘর বানানো অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। অপরদিকে নিজেদের দোষ ঢাকতে সাংবাদিকদের উপর অপবাদ দেবেন তা হতে পারে না। সাংবাদিক নেতা হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন ঘটনার জন্য অবিলম্বে ক্ষমা চাওয়ার অনুরোধ জানানো হলো।
সাংবাদিক সৈয়দ সিফাত লিংকন হলুদ পত্রিকা ও সাংবাদিকদের বিষয়ে বলেন, সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। তাদের কাজ সমাজে ঘটে যাওয়া অন্যায়, অবিচার, অনিয়ম ও সাধারণ মানুষের দূর্ভোগ তাদের লিখনীর মাধ্যমে তুলে ধরা। ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নার্সদের ঔষধ চুরির সংবাদ দৈনিক সংবাদচর্চায় প্রকাশ করা হয়েছে। এখন ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে যে ওই সংবাদ ভুল তাহলে তারা প্রতিবাদ জানাতে পারতো। সেটা না করে পত্রিকাকে হলুদ পত্রিকা বলার তাদের এখতিয়ার নেই। এমনকি সাংবাদিকদের অবরুদ্ধ করে রাখারও এখতিয়ার তাদের নেই। তারা যেটা করেছে সেটা ঠিক করেনি।
ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের আরএমও আসাদুজ্জামনকে দৈনিক সংবাদচর্চা পত্রিকা অফিসের মুঠোফোন থেকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।
বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে একই প্রতিষ্ঠনে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে বহাল থাকার কারণে অনিয়ম দুর্নীতির আগাগোড়া সম্পর্কে বর্তমান আরএমও অবগত। নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসাপাতালের দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা কমাতে হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে আরএমও আসাদুজ্জামানকে বদলি কিংবা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বে প্রেরণ করা উচিৎ। কারণ একজন দায়িত্ববান লোক হওয়া সত্ত্বেও সংবাদ প্রকাশের পর তার প্রতিবাদ না করে উল্টো সাংবাদিকদের অবরুদ্ধ ও একটি গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীদের হলুদ বলে হেয় করার মধ্যেই তার দায়িত্ব হীনতার পরিচয় মেলে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ