আজ শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা, আলীগঞ্জ খেলার মাঠের পাশে পশুর হাট !

নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও স্কুল এবং খেলার মাঠ এবং মূল সড়কের মধ্যে পশুর হাটের টেন্ডার আহ্বান করেছে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৭ টি অস্থায়ী পশুর হাটের জন্য দরপত্র আহ্বান করে ১ অগস্ট গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এই বিজ্ঞপ্তিতে ১৫ নম্বরে তালতলা এবং ১৬ নম্বরের আলীগঞ্জ খেলার মাঠ সংলগ্ন পিডব্লিউডির খালি জায়গার জন্য পৃথক দুটি অস্থায়ী হাটের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এরমধ্যে আলীগঞ্জের জন্য ৩৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং তাল তলার জন্য ৮৫ হাজার টাকা সম্ভাব্য ইজারা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় সূত্র জানায়, আলীগঞ্জ মাঠের সাথে কোনো রকম পশুর হাটের ইজারা না দেওয়ার দাবি জানিয়ে ১৫ জুলাই আলীগঞ্জ মাঠের পক্ষে আলীগঞ্জ ক্লাব সভাপতি কাউসার আহম্মেদ পলাশ স্বাক্ষরিত জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসনের বরাবর স্মারকলিপি প্রেরণ করা হয়।
স্মারকলিপিতে মাঠ রক্ষায় এর পাশে কোনো ধরণের পশুর হাট ইজারা না দিতে আবেদন জানানো হয়। একই সাথে এখানে হাট ইজারা দিলে মাঠের ক্ষতি সাধন সম্পর্কে বর্ণনাও দেওয়া হয়। এমনকি এই মাঠে নিয়মিত জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্টও চালু রয়েছে বলে সেখানে জানানো হয়েছে। তারপরও উপজেলা প্রশাসন এই দাবি উপেক্ষা করে, জনস্বার্থ বিবেচনা না করে আলীগঞ্জ মাঠের সাথেই অস্থায়ী হাটের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে। এ নিয়ে এলাকাজুড়ে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া, এবং নানা গুঞ্জন ও ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে।
এদিকে বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে ইতোপূর্বে ৪৬.০০.০০০০.০৪১.০৩১.০৩৯.১৩-৩৩৪/১ (৮) নং স্মারকে এই মন্ত্রণালয়ে অধিনস্থ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, পৌর মেয়র/প্রশাসক, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের বরার নিষেধাজ্ঞা ও সতর্কতা পাঠিয়েছিলেন।
ওই নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছিলো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ, খেলার মাঠ, রেল লাইন, সড়ক ও মহাসড়কের সন্নিকটসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে পশুর হাট যাতে বসানো না হয়। এর ব্যাখ্যা হিসেবে জানানো হয়েছিলো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে পশুর হাট বসানো হলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বিঘœ ঘটে, তেমনি খেলার মাঠে, সড়ক ও মহাসড়ক এবং রেল লাইনের সন্নিকটে ফাঁকা জায়গায় পশুর হাট বসালে পরিবেশ বিনষ্ট ও জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পায়। অনেক সময় দুর্ঘটনার কারণে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাই এসব স্থানে পশুর হাট না বসানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয় ওই মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব স্বাক্ষরিত স্মারকে।
এদিকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও সদর উপজেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ কোন উদ্দেশ্যে, কোন কারণে খেলার মাঠ ও সড়কের পাশে অস্থায়ী হাটের ইজার জন্য দরপত্র আহ্বান করেছেন এ নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। স্থানীয়দের মাঝে এ নিয়ে ক্ষোভে সঞ্চার হয়েছে। বিশেষ করে আলীগঞ্জ খেলার মাঠের পাশে পিআইডব্লি’র জায়গায় হাট ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান নিয়ে স্থানীয়রা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা বারিক জানান, ‘আমরা যে দরপত্র আহ্বান করেছি সেখানে কোনো খেলার মাঠ নেই। পিডব্লিউডির জায়গাতে হাট ইজারার আহ্বান করেছি। পাশে মাঠ থাকলেও সেটি বাউন্ডারি দেয়া।’ এছাড়াও তিনি তালতলা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা প্রশাসনকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেছি। জনস্বার্থ বিঘিœত হবে না তেমন রিপোর্ট পেয়েই ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করেছি।’
অপরদিকে মাঠের পাশে হাট ইজারা না দিতে আলীগঞ্জ ক্লাব থেকে যে আবেদন করা হয়েছিলো সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাহিদা বারিক বলেন, ‘আমরা তদন্ত রিপোর্ট পেয়েই দরপত্র আহ্বান করেছি। যে স্থানে হাট দিচ্ছি সেখানে মাঠ নেই। যেটা আছে সেটা বাউন্ডারি করা।’

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ