আজ শনিবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শহরে ২শ’ ছিনতাইকারী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নারায়ণগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় রয়েছে ছিনতাইকারী চক্র। ওরা মোটরসাইকেল কিংবা প্রাইভেটকার ব্যবহার করছে ছিনতাইয়ের জন্য। আবার চিহ্নিত অন্ধকার স্পটে দাঁড়িয়ে থেকে টার্গেট করে ছিনতাইয়ে মেতে উঠে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরে ৫০টি স্থানে অন্তত ২শ’ জন ছিনতাইকারী রয়েছে।

জানা গেছে, রাতে শহরের বিভিন্ন স্থানে দল বেধে বসে থাকে ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারীরা। এরা সাধারণ মানুষকে কৌশলে টার্গেট করে। কেউ তাদের ফাঁদে পড়লে তারা অস্ত্র দিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা পয়সাসহ সাথে থাকা সব কিছু লুটে নেয়। কেউ বাধা দিলে তারা আঘাত করে রক্তাক্ত জমখ করে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।

শহরের চাষাঢ়ায় ছিনতাইকারীদের টার্গেট মালবাহী গাড়ি। তারা বাগে পেলেই ক্ষিপ্র গতিতে চলন্ত গাড়ি থামিয়ে ছিনতাই করে। মুরগি, মাছ, সবজিসহ বিভিন্ন পণ্য কবল থেকে রক্ষা করতে পারে না চালকরা। কেউ দেখে ফেললেও সাহস করে গাড়ি থামিয়ে মাল উদ্ধার করতে চায় না তাদের ভয়ে। ভয়ঙ্কর ওই ছিনতাইকারীদের কাছে থাকে ধারালো অস্ত্র।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক, ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড, পঞ্চবটি ফতুল্লা সড়ক, পুলিশ লাইন সড়ক, খানপুর, নতুন কোট, চানমারি, রাইফেল ক্লাব মোড়ে, মাসদাইর গোরস্থান, ঈদগা এলাকা,গলাচিপা, চাষাঢ়া রেলস্টেশন, শিবুমার্কেট, ভূইগড়, সাইনবোর্ড, নিতাইগঞ্জ,কাশিপুর সড়ক, সিদ্ধিরগঞ্জের মহাসড়কসহ কয়েকটি এলাকা, দেওভোগ পানির ট্যাকিং মোড়, বামমুলি এলাকা, পাইকপাড়া, জিমখানাসহ শহরের আশপাশের প্রায় ৫০ টি স্থানে অবস্থান করে ছিনতাইকারীরা। এ সব ছিনতাইকারীর গ্যাং রাতের শহরের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে থাকে। তারা বিভিন্ন স্থানে বসে অপেক্ষা করে সাধারণ মানুষের সর্বশ লুট করার। সম্প্রতি ছিনতাই কারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

সচেতন নাগরিকরা বলছেন, শহরে সন্ধ্যার পরে রাস্তায় মানুষের চলাচল কম। আর এমন সুযোগে যে সকল ছিনতাইয়ে গ্যাং এখনো রাস্তায় ঘুরাফেরা করে। শহরে টহল পুলিশ রয়েছে তবে তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না। পুলিশের তদারকি বাড়িয়ে ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে জেলা পুলিশের এসপি জায়েদুল আলম বলেন, এলাকা ভিত্তিক নাইটগার্ডের ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি টহল পুলিশের সংখ্যা বাড়িয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাতে মানুষ কম থাকায় ছিনতাইকারীরা তৎপর হয়ে। তবে পুলিশ তাদের আইনের আওতায় আনবে।

সূত্রে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারি সদর উপজেলার ফতুল্লায় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে টিপু হাওলাদার (২৫) নামের এক অটোরিকশা চালক খুন হয়েছে। ওই রাতে উপজেলার চর কাশিপুর এলাকায় দুর্বৃত্তরা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক টিপু হাওলাদারকে ছুরিকাঘাত করে অটোরিকশাটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়। গুরুতর অবস্থায় টিপুর চিৎকারে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে নগরের খানপুরে অবস্থিত ৩শ শয্যা বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ১৪ জুলাই আড়াইহাজারের একটি অটোরিকশা ড্রাইভারকে মারধর করে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে আড়াইহাজার -ফেরীঘাট সড়কের চালাকচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

৬ জুন রূপগঞ্জ এক পিকআপ চালককে কুপিয়ে হত্যা করে গাড়ি ছিনতাই করে। রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার কোনাবো এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত পিকআপ চালকের নাম আশিকুর রহমান (৩৫)। ৭ জুন নারায়ণগঞ্জে ব্যস্ত সড়কে দিনে দুপুরে ছিনতাইয়ের প্রস্তুতির সময় চাষাড়া এলাকা থেকে অস্ত্রসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। র‌্যাব জানিয়েছিলো, একটি মাইক্রোবাসে করে ৫ জন ছিনতাইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তাদের গতিবিধি সন্দেহ হলে র‌্যাব তাদের গাড়ি তল্লাশি করে। এ সময় গাড়ি থেকে একটি পিস্তল, বেশকিছু চাপাতি ও রামদা উদ্ধার করা হয়।

১১ জুন, সিদ্ধিরগঞ্জে ১২ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে ছিনতাইকারী চক্র। ওই দিন দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ১৪ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জে ছিনতাই হওয়ার আট দিন পর ৩২০ বস্তা চিনির মধ্যে ২৫৩ বস্তা চিনি পুলিশ ময়মনসিংহ থেকে উদ্ধার করে। ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকায় ট্রাকের ড্রাইভার সজিব মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

৪ জানুয়ারি গাড়ি ছিনতাইকালে ভুয়া পুলিশ সদস্য আটক করে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ।ওই সময় ২টি মেট্রো পলিটন পুলিশ কালারের জ্যাকেট, ৩টি পিস্তল সদৃশ্য গ্যাস লাইট, ১টি ওয়্যারলেস সেট (বেতারবার্তা), ১টি ওয়্যারলেস কন্ট্রোলার, ১টি চামড়ার পিস্তলের কভার, ১টি চামড়ার হ্যান্ডকাপের কভার, পুলিশের মনোগ্রাম সংযুক্ত ১টি ক্যাপ, ১টি সিগনাল লাইট, ১টি পুলিশে মনোগ্রাম সংযুক্ত কোমরের বেল্ট উদ্ধার করা হয়।
আটককৃত ব্যক্তির নাম মো. শামীম (৩৬)। সে কুড়িগ্রামের উলিপুর থানার খেয়ার ঘাট এলাকার মহসিন আলীর ছেলে। জেলা পুলিশের সূত্রে থেকে জানা যায়, ফতুল্লার লালখা থেকে ধানমন্ডি যাচ্ছিলেন আব্দুল্লাহ আল নোমান ও তার ড্রাইভার দেলোয়ার।
এসময় নম পার্কের পশ্চিম পাশে সাইনবোর্ডগামী রাস্তার উপর ৪ জন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তাদের গাড়ী সিগনাল দেয়। দুই জন পুলিশের পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিল। গাড়ীটি থামালে কাগজপত্র দেখার কথা বলে গাড়ীতে উঠে পরেন। এসময় ড্রাইভার মো. দেলোয়ার হোসেন’কে পিছনের সিটে বসিয়ে সেই ৪ জনের মধ্যে ১ জন গাড়ীটি চালায়। পথিমধ্যে আব্দুল্লাহ আল নোমান ও ড্রাইভার মো. দেলোয়ার হোসেন বুঝতে পারে ৪ জন ব্যক্তিই ভূয়া পুলিশ। তখন তাদের সাথে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ভূইগড় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌছালে একটি কভার্ড ভ্যানের সাথে গাড়ীটি দূর্ঘটনা হয়। আব্দুল্লাহ আল নোমান ও ড্রাইভার মো. দেলোয়ার হোসেনের ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন এতে শামীমকে আটক করে। পালিয়ে যায় বাকি ৩ জন।

৩১ মার্চ আড়াইহাজারে জামান (৪৫) নামে এক অটো চালকের হাত-পা বেঁধে দুই চোখ উপড়ে হত্যা করে তার অটো ছিনতাই করা হয়। এ সময় তার মুখে স্কচটেপ পেঁচানো ছিল। তিনি স্থানীয় ফতেপুর ইউপির বগাদী পূর্বপাড়া এলাকার মৃত শফিকুলের ছেলে। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ আড়াইহাজার-মদনপুর সড়কের মারুয়াদী এলাকায় হাইওয়ের পাশে পড়ে থাকা অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করেন। এছাড়া রূপগঞ্জের চনপাড়ায় হত্যা সহ একাধিক মামলার আসামী মোস্তফা (৩২) নামে এক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় তার সহযোগীরা। অন্যদিকে গাঁজা পাচারকালে পাচারকারীর কাছ থেকে গাঁজা ছিনতায়ের সময় গাঁজা বহনকারী ২ যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয় জনতা।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ