খালেদ আল-আমিন:
ভাল নেই গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় নায়ক ছাত্তার। আশির দশকে ছিনেমার রঙ্গিন পর্দার জনপ্রিয় দাপুটে অভিনেতা নায়ক ছাত্তার এখন হাসপাতালের বেডে সার্বক্ষনিক শুয়ে থাকেন। আর কল্পনা করেন অতীতের রঙ্গিন জীবনের কথা, অশ্রু ঝরান নিরবে। অভিনয় জীবনে বহু চরিত্রে তাকে দেখা গেলেও বর্তমান অসহায় চিত্রটি তার জানা ছিলনা।
ব্রেন ও হার্ট স্ট্রোক করে শরীরের বাম পাশ পুরোটাই অবশ হয়ে গেছে তার। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন চিকিৎসা করানো হলেও কোন উন্নতি হয়নি। সাত মাস যাবৎ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট এ অধ্যাপক ডাঃ আতাহার আলী খানের তত্ত্বাবধানে আছেন। সার্বক্ষনিক তার সেবা করছেন তার ৩য় স্ত্রী আয়শা আক্তার কাকলী। পাশে নেই পরিবারের অন্য কেউ। তার প্রথম স্ত্রী অন্যজনকে বিয়ে করে চলে গেছেন বহুদিন আগে। ২য় স্ত্রী প্রবাসে থাকেন, কোন খোঁজ নেয়না। ভাই-বোন ও ১ম স্ত্রীর সন্তান কেউই আর তাকে মূল্যায়ন করে না এখন। একমাত্র ভালবাসা ও সেবা যা পাচ্ছেন সবই করছেন তৃতীয় স্ত্রী কাকলী। যার সম্বল মৃত্যু পথযাত্রী স্বামী ও একমাত্র ছেলে মোঃ আলী হামজা স্বাধিন। কাকলীকেও সহজ ভাবে নিচ্ছেনা ছাত্তারের পরিবারের লোকজন। প্রতিনিয়ত ভয় আর আতংকে জীবন পার করছেন কাকলী।
নারায়ণগঞ্জের সন্তান নায়ক ছাত্তার। ফতুল্লাহ থানার কাশীপুর ইউনিয়নের গোগনগড় বাগান বাড়ীতে ২৭ মে ১৯৫৫ সালে জন্মগ্রহন করেন। মরহুম মোক্তার হোসেনর বড় সন্তান তিনি। মাতা মরহুম জোবেদা বেগম। ৪ ভাই ও ৬ বোনের মধ্যে ছাত্তার বড়। পারিবারিক সম্পদ ভাগাভাগি হলেও অন্য ভাই-বোনরা অপেক্ষায় ছাত্তারের মৃত্যুর পর তার সহায় কেড়ে নেয়ার।
অভিনয় জীবনে টানা ১১০ টি চলচিত্রে নায়কের অভিনয় সহ মোট ১৫০ টি ছিনেমায় কাজ করেন তিনি। আশির দশকের শীর্ষ জনপ্রিয় নায়ক ছিলেন ছাত্তার। প্রথম নায়ক চরিত্রে কাজ করেন কাজি হায়াতের ‘পাগলি’ ছিনেমাতে। তার সাথে নাইকা ছিলেন ফারজানা ববি। এরপর অনেক ছবিতে অভিনয় করলেও তিনি সব চাইতে বেশি আলোচিত হয়েছেন ‘রঙ্গিন রুপবান’ ছিনেমার মাধ্যমে। এই ছবি তখন এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে পেক্ষাগৃহে একাধিকবার দেখানো হতো দর্শকদের চাহিদার জন্য। এরপর জনপ্রিয় এই নায়ক একের পর এক পরিচালকের ছবিতে অভিনয় করেন। নায়ক ছাত্তার সব শেষ পরিচালক রাজ মনির ‘খুদিরাম’ ছবিতে বাবা চরিত্রে অভিনয় করেন।
অর্থনীতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্স্টাস সাত্তার ২০১২ সালে স্ট্রোক করে প্যারালাইসড হয়ে অভিনয় থেকে দূরে। পাশাপাশি উচ্চচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় এই অভিনেতা ১৯৫৮ সালের ২৬ মে নারায়ণগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন।