আজ মঙ্গলবার, ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মামলাকে ঘিরে মহাজোটে কোন্দল চরমে

মামলাকে ঘিরে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মহাজোটের অংশীদার আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে চরম কোন্দল বিরাজ করছে। সেলিম ওসমানের প্রচার প্রচারনা থেকে শুরু করে কোন কর্মকান্ডে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির হেভিওয়েট নেতাদের দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচনের শেষ মুহুর্ত ঘনিয়ে আসলেও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান এবারের বিরোধী দল জামাত বিএনপিকে ছেড়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের নিয়েই বেশি ভাবছেন। শেষ মুহুর্তের কয়েকটি ঘটনাকে নিয়ে বিশ্লেষকগন এমন ধারনাই করছেন। এর মধ্যে সেলিম ওসমানের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙ্গচুরের ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে মামলা, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভির কয়েকজন কাছের লোকের নামে মামলা, জাতীয় পার্টির ওই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী আল জয়নালকে ২০ ঘন্টা থানায় আটকে রাখার ঘটনাগুলো বিশ্লেষন করে নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন। আর শহরজুড়ে সাধারন মানুষ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় তুলছেন।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের বাগা বাগা নেতারা নির্বাচনের আগে মিটিং মিছিল করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তাদের দাবি ছিল নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি সংসদীয় আসনে যেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেয়া হয়। নেতাদের দাবি ভেস্তে গেছে মহাজোটের প্রার্থীদের বহাল রখার ষোষণা ও চিঠি আসায়। অনেক নেতার বক্তব্যও ঝাল ও এলাকায় বিচরন কমে গেছে। মনোনয়ন প্রাপ্তদের সাথে বঞ্চিতরা কেউ কেউ বেঁকে বসার কারনে তাদের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্তত টানা ৮ মাস নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের জাতীয় পার্টির (জাপা) দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে জোর মিটিং-মিছিল, আন্দোলনে অংশগ্রহন, জাতীয় অনুষ্ঠানে যোগদানসহ কত কি করেছেন সম্ভাব্যরা। মনোনয়ন পেতে জেলার নেতাদের সমর্থন ও লবিং করেছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে। এ লবিংয়ে ছিলেন আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের নেতারা।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এড. আবু হাসনাত মোঃ শহিদ বাদল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এড. খোকন শাহ। মহাজোট জাতীয় পার্টির (জাপা) নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নাসিম ওসমানের অকাল মৃত্যুতে আসনটি খালি হলে উপনির্বাচনে প্রার্থীতা পাওয়ার জন্য তার স্ত্রী পারভীন ওসমান দৌড়ঝাপ করলেও কুলিয়ে উঠতে পারেন নি। আপন দেবরের কাছে প্রথম বার হেরে যান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে ফের অন্তত দেড় বছর আগে থেকে প্রয়াত নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমান নির্বাচনীয় এলাকায় আলোচনায় চলে আসেন। আবার পারভীন ওসমান তার দেবর একেএম সেলিম ওসমানের কাছে পরাজিত হয়। মনোনয়ন পেয়ে যান সেলিম ওসমান। এ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার জন্য বেশ এগিয়ে থেকেও পিছনে পড়ে গিয়েছিলেন আল-জয়নাল। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন সম্ভাব্যরা এখন ভাল নেই। নির্বাচনের ভোটের বাকি মাত্র ২ দিন। ভোটের আগে গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় একাধিক মামলা। যে মামলাগুলো রুজু হয়েছে তার মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশিদেরও অনেকেই আসামী। স্থানীয় আওয়ামী লীগ একাধিক নেতারা বলছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) মেয়র সেলিনা হায়ত আইভী অনুসারী অনেকেই মামলার শিকার হয়েছেন সেলিম ওসমানের ক্যাম্প ভাঙ্গচুরের ঘটনায়। এতে অনেক নেতাই মনে করছেন আইভি পন্থিরাই সেলিম ওসমানের এখন সবচেয়ে বড় ভয়ের কারন। তা না হলে সেলিম ওসমান কেন জাতীয় পার্টি আর আওয়ামী লীগের সাথে সংযুক্ত নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে বেঁধে রাখতে চান। বর্তমানে ভোটের সময়ও আইভি অনুসারীরা রক্ষা পাচ্ছে না মামলা থেকে। এসব মামলার কারনে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতাকর্মীদের সাথে বিরোধ চরম পর্যায়ে চলে যাওয়ার আশংকা করছেন অনেকে। তারা বলছেন, সেলিম ওসমানের সাথে আল-জয়নালের সম্পর্ক ভাল না। তারা একজন আরেক জনকে প্রতিপক্ষ ভাবছেন বলেই গত ২৫ ডিসেম্বর আল-জয়নাল বন্দর থানায় তার লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্র জমা দিতে গিয়ে তিনি প্রায় ২০ ঘন্টা থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। এ বিষয়টিকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন, প্রভাবশালী নেতা সেলিম ওসমান। তার সাথে কেউ প্রতিদ্ব›দ্বীতা করতে গেলে তিনি তাকে বিভিন্ন কৌশলে সায়েস্তা করেন। তার সাথে প্রতিদ্ব›দ্বীতায় নামার ফলে তাদেরকে শায়েস্তা করার জন্য মামলা দেয়ার পথ বেছে নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাদের দাবি, গত ২৩ ডিসেম্বর রাত ২টার সময় নয়াপাড়া জাপানী ভবনের পাশে সেলিম ওসমানের নির্বাচনীয় প্রচারণা ক্যাম্প ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) মেয়র সেলিনা হায়ত আইভী পন্থি ১২ জনকে সহ ৭৪ জনকে নামীয় আসামীসহ আজ্ঞাত আসামী করে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মহাজোটের প্রার্থী সেলিম ওসমানের কাছের লোক ১৭ নং ওয়ার্ড (নাসিক) কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবুর ঘনিষ্টজন এনামুল হক রিয়াজ বাদী মামলা করেন।

মেয়র আইভীর চারপাশের যারা এ মামলায় আসামী হলেন, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক খুশিদ আলম সাগর, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনু, হুমায়ূন কবির এলিন, বন্দর থানা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল ইসলাম, বাহাউদ্দিন বাহু, রিপন, জাহাঙ্গীর, আতিকুর রহমান মাসুম, সালাউদ্দিন, মিয়া বাবু, মোতালিব, শুক্কুর, হিমেল খাঁনসহ আসামী করে এ মামলা করা হয়েছে। ভোটের আগে এমন মামলায় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে জড়িয়েছে। তাই আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলছেন, সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে টু শব্দ করলেই মামলা ঠুকে দেন তার লোকজন দিয়ে। সেলিম ওসমান আওয়ামী লীগের ভাল চান না। তিনি মহাজোটের প্রার্থী হয়েও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে যাচ্ছেন বলেও দাবি তাদের। ভোটের আগে সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন নামে পরিচিত মামলার বাদী এনামুল হক রিয়াজ। এ মামলায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এর ভাই দেলোয়ার হোসেন চুন্নুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সাথে কথা হলে তারা বলেন, ভোটের আগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে মামলা হয়েছে এটা দুঃখজনক। তারা আরও বলছেন, সেলিম ওসমানের অফিস বা নির্বাচনীয় ক্যাম্পে ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করবেন এমন অভিযোগ ও মামলা সঠিক বলে মনে হচ্ছে না। যিনি এ মামলার বাদী তিনি আমাদের নেতাকর্মীদের ভাল চাচ্ছেন না বলেই এসময় মামলা দিয়েছেন।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ