আজ বৃহস্পতিবার, ২০শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সোনারগাঁয়ে মাদক প্রতিরোধে পুলিশের ভূমিকায় জনমনে সন্তোষ

মাদক প্রতিরোধে

মাদক প্রতিরোধেসোনারগাঁ প্রতিনিধি: প্রাচীন বাংলার রাজধানী-খ্যাত নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার হাটে-ঘাটে, অলিতে গলিতে পাড়া মহল্লায় বিভিন্নস্থানে ছিল মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ মাদকের ছড়াছড়ি।

যেকোন সময় হাত বাড়ালেই পাওয়া যেত মরণ নেশা মাদক।মাদকের ভয়াল থাবায় জড়িয়ে বিপদগামী হয়ে পড়েছিল স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ যুব সমাজ ও উঠতি বয়সের তরুন তরুণীরা। মাদকের করাল গ্রাস থেকে এখনই যুব সমাজকে রক্ষা করতে না পারলে গোটা জাতি অচিরেই মেরুদন্ডহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন সুশীল সমাজের ধারনা।

মাদক প্রতিরোধে সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের ভূমিকায় জনমনে অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। মাদক প্রতিরোধে সোনারগাঁ থানা পুলিশের অভিযানে বিগত ২০১৭ সালের আগষ্ট থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত ৮ মাসে উদ্ধার হয়েছে ২৭৭১০ পিস ইয়াবা, ১৪৭২ বোতল ফেনসিডিল, ১৩৫ কেজি গাঁজা, ৩০২ ক্যান বিয়ার, ১৭০ লিটার চোলাই মদ ও ৫ টি বিদেশী পিস্তল।

পুলিশ মাদক ব্যবসায় জড়িত ৪৬৮ জনকে গ্রেফতারসহ ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে আরো ৫৫ জন মাদক ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেছে। সম্প্রতি মাদক নির্মূলে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্বনয়ে সোনারগাঁ উপজেলার ১০ টি ইউনিয়ণ ও একটি পৌরসভার ৫৫৯ জন মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীর নামের তালিকা তৈরি করেছেন। মাদক নির্মূলে শতভাগ সফলতার লক্ষে অচিরেই চিরুনী অভিযানে মাঠে নামবে বলে জানিয়েছেন সোনারগাঁ থানা পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে ,চট্টগ্রাম, বি-বাড়ীয়া ও কুমিল্লা সীমান্ত পথ দিয়ে ভারত থেকে আসা বিভিন্ন প্রকারের মাদকের চালান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি গোমতি ও মেঘনা সেতু এলাকা এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর ব্রীজ হয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা সদর ও উপজেলা সদর ও রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়। অন্যদিকে চট্টগ্রাম সীমান্ত পথ দিয়ে মেয়ানমার (বার্মা) থেকে আসা বিভিন্ন মাদকের চালান গুলোও একই ভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর ব্রীজ হয়ে চলে যায় রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ সহ আশপাশের জেলা গুলোতে। এভাবে প্রতিদিন মেঘনাঘাট ও কাঁচপুর পয়েন্ট দিয়ে আসছে লাখ লাখ টাকার মাদকের চালান। এর ফলে কাঁচপুর এলাকাসহ সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন পয়েন্ট হয়ে উঠেছে মাদকের স্বর্গরাজ্য। কাঁচপুর ও

মেঘনাঘাট থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকাযোগে মাদক সরবরাহ করার ফলে পুরো সোনারগাঁয়ের যত্রতত্র খুব দ্রুত বিস্তৃত হয়ে পড়েছিল মাদক। যে কোন মাদক সহজলভ্য হওয়ার কারনে স্কুল কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ উঠতি বয়সের তরুন ও যুবকরা সহজেই ঝুঁকে পড়ছে মাদকের মরণ ছোবলে। মাদকের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকলেও মূল অপরাধী ও নাটের গুরুরা রয়ে যায় ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। মূল মাদক চোরাচালানীরা তাদের নিয়োজিত লোক দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় মাদক দ্রব্য আনা-নেওয়া ও বিক্রির কাজ চালায়। মাদক চোরাচালানে জড়িতদের পুলিশ গ্রেফতার করলেও কিছু দিন যেতে না যেতেই তাদের গডফাদররা আদালত থেকে জামিনে ছাড়িয়ে আনে এবং পুনরায় ঐ একই কাজে বহাল তবিয়তে নিয়োজিত করে। অনেক সময় পুলিশ মাদক সেবনকারী ও বিক্রেতাদের গ্রেফতার করলেও উৎকোচের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশের এই উৎকোচ বাণিজ্যে সহযোগিতা করে থাকে তাদের নিয়োজিত তথাকথিত সোর্সরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার কাঁচপুর, সোনাপুর, বেহাকৈর, সেনপাড়া, নন্দীপুর মোগরাপাড়া, বন্দেরা, বাড়ী মজলিশ, বাড়ী চিনিস, গোহাট্টা, মেঘনাঘাট, বৈদ্যের বাজার, আনন্দবাজার, আমিনপুর, রাইজদিয়া, গোয়ালদী, ফতেপুর, নয়ামাটি, বালুয়াদীঘিরপাড়, চিলারবাগ, কাইকারটেক, বারদি, তালতলা, জামপুর, নয়াপুর, মারবদী, নাজিরপুর, চেঙ্গাকান্দি, নানাখী, চৌরাপাড়া, ভারগাঁও, লাদুরচর, শেককান্দি, ভিটিপাড়া, লক্ষীবরদী, কলতাপাড়া, বস্তল, হাতুরাপাড়া, মিরের টেক, ভাটিবন্দর, জিয়ানগর, কান্দারগাঁও, আষাড়িয়ারচর, পাঁচনী, মঙ্গলেরগাঁও, দুর্গাপ্রসাদ, কাজিরগাঁও, এলাহীনগর, নবীনগরসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক স্পটে চলত রমরমা মাদক ব্যবসা। এ সকল স্পটে মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন সহ সকল প্রকারের মাদক পাওয়া যেত। মাদকের এই সহজলভ্যতার কারণে এলাকার স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদেরকে নিয়ে তাদের অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছিলেন।

অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে মাদকের টাকা জোগাড় করতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই সহ নানা প্রকার অপরাধ ,অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। তাই এলাকার যুব সমাজকে এই মরন নেশা থেকে মুক্ত করার জন্য প্রশাসনকে এ ব্যাপারে আরও তৎপরতা বাড়ানোর জন্যে আহবান জানান মাদকাসক্ত তরুন যুবকদের অভিভাবক ও সচেতন মহল। এছাড়া বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে মাদক বিরোধী প্রচার-প্রচারণা, সভা, সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে মাদকের কুফল সম্পর্কে এলাকাবাসীকে সচেতন করে তুললে মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে যুব সমাজকে বিরত রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।

সোনারগাঁ থানার (ওসি) মোরশেদ আলম জানান, ইতোমধ্যেই অনেক মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ এবং তাদের মাদক স্পটগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিলেও আদালত থেকে তারা সহজেই জামিন পেয়ে পুনরায় একই পেশায় নিয়োজিত হয়। স্থানীয় এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা সচেতন হলে এবং থানা পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলেই মাদকের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের কঠোরভাবে দমন করে মাদক প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে ।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ