আজ শুক্রবার, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মন্ত্রী এমপিদের আস্থা অর্জন উপজেলা চেয়ারম্যানদের মূল চ্যালেঞ্জ

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
সদ্য শেষ হওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার ও সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যানদের মূল চ্যালেঞ্জ মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের আস্থা অর্জন। নির্বাচনের পূর্বে নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যানরা এলাকার উন্নয়নে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিলেন।

সে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষে প্রয়োজন অঢেল বরাদ্দের। স্থানীয় সরকারের কর্ম পরিকল্পনার যে সকল বরাদ্দ বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে পেয়ে থাকেন তার অধিকাংশ বরাদ্দই স্থানীয় সংসদ সদস্যর সুপারিশের ভিত্তিতেই কার্যকর হয়ে থাকে।

এমতাবস্থায় নব নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের মূল চ্যালেঞ্জ হলো তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের আস্থা অর্জন করা। চেয়ারম্যানরা যদি সাংসদদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন সেক্ষেত্রে নির্বাচনের সময় তারা যে সকল প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিলেন তা বাস্তবায়ন হবে। আর সে সকল প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হলে স্থানীয় সাধারণ ভোটাররা অনেক দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে সেই সাথে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে। এমনটাই মনে করছেন জেলার বিশ্লেষকগণ।

এমপি মন্ত্রীদের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখলে খুব সহজেই উপজেলা পর্যায়ে উন্নয়ন করা যায়। যে কোন বরাদ্দ পেতে এমপি মন্ত্রীদের সহযোগীতা পাওয়া যায়। এছাড়া এলাকার উন্নয়নে ও একটা সমন্বয় আসে। কিন্তু বিগত সময়ে দেখা গেছে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সাথে বৈরী সম্পর্ক তৈরী করেছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যানরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা নিজ এলাকার সাংসদদের সাথে প্রকাশ্যে একে অপরের বিরোধীতা করেছেন। যার কারণে কিছু সময় জনগন কে কাঙ্খিত উন্নয়ন থেকে পিছে থাকতে হয়েছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ- ১ আসনে মনোনয়ন ক্রয় করেছিলেন রূপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূইয়া। যিনি মনোনয়ন ক্রয়ের পর বর্তমান সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর বিপক্ষে অপপ্রচার ও তাকে বিভিন্নভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় গোলাম দস্তগীর গাজীকে। মনোনয়ন পাওয়ার পর বিপুল ভোটে জয়লাভ করে গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক। পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে আওয়ামী লীগের প্রথম মন্ত্রী হন তিনি। দায়িত্ব পেয়েছেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ের। এরপর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দাঁড়ায় শাহজাহান ভূইয়া।

গোলাম দস্তগীর গাজী সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে শাহজাহান ভূইয়াকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেন। বর্তমানে তারা এক সাথে মিলেমিশে রূপগঞ্জের উন্নয়নে কাজ করছেন। তবে শাহাজাহান ভূইয়া যদি পূর্বের থেকেই গোলাম দস্তগীর গাজীর সাথে ঐক্যবদ্ধ থাকতেন তাহলে ওই উপজেলার জনগন আরও উপকৃত হতো এমনটাই মনে করেন রূপগঞ্জ উপজেলার সাধারণ মানুষ। তবে গাজী পরিবারের একক চেষ্টায় বদলে গেছে রূপগঞ্জের উন্নয়ন চিত্র। সুসংগঠিত হয়েছে আওয়ামী লীগ।

নারায়ণগঞ্জ- ২ আসনে মনোনয়ন ক্রয় করেছিলেন ওই উপজেলার চেয়ারম্যান মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর সাথে পূর্বে দ্বন্দ্ব ছিলো হেলো সরকারের সাথে। অবশেষে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নজরুল ইসলাম বাবু। পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন হেলো সরকার।

বর্তমানে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু ও উপজেলা চেয়ারম্যান হেলো সরকার ঐক্যবদ্ধ হয়ে একত্রে আড়াইহাজারের উন্নয়ন করছেন। তবে তাদের পূর্বের কোন্দলে আটকে ছিলো আড়াইহাজারের উন্নয়ন । তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে তারা একত্রেই আড়াইহাজারের উন্নয়নে হাত দিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ- ৩ আসনে মনোনয়ন ক্রয় করেছিলেন বর্তমান সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন। তবে তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছিলেন। এর আগে ওই উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন বিএনপির আজহারুল ইসলাম মান্নান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন মান্নান।

যার কারণে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের আমলে ২৫ টি রাজনৈতিক মামলা হয়েছে, একাধিকবার জেল খেটেছেন। দলের অন্য নেতকর্মীদের মামলার ব্যয়ভার বহন করেছেন। কিন্তু মামলা-হামলার ফলে সোনারগাঁ উপজেলার উন্নয়নে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি মান্নান। অন্যদিকে মহাজোট থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় বর্তমান সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকাকে। পরবর্তীতে তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করে সাংসদ নির্বাচিত হন।

সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতিক পান জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত মোশারফ। স্থানীয় সাংসদের সাথে না থাকলেও তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে ওই উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
সচেতন মহলের মতে, নিজেদের মধ্যে কোন্দলের সৃষ্টি না করে তারা যদি পূর্বের থেকেই একত্রিত হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে

মানুষের স্বার্থে কাজ করতো তাহলে আরও বেশী উন্নয়ন করা সম্ভব হতো। তবে এখন রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার ও সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যানদের মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি তথা মন্ত্রী ও সাংসদদের আস্থা অর্জন।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ