আজ শনিবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মধুর সম্পর্কে ‘বিষ প্রয়োগ’

সংবাদচর্চা রিপোর্ট :

এক সময় আইভী বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করে সভা সমাবেশে বক্তব্য দিতেন আনোয়ার হোসেন। আরেকটা সময় আইভীর পক্ষে এসেছেন এই তিনি। বলেছিলেন তার পক্ষে। অন্য কেউ আইভীকে নিয়ে সমালোচনা করলে তার কড়া জবাব দিতেও দেখা গিয়েছে এই নেতাকে। বিগত কয়েক বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে চাচা-ভাতিজি সম্পর্ক ছিল অনেক বেশি মধুর।
তবে, তাদের সেই মধুর সম্পর্ক এখন আর নেই। চিড় ধরেছে চাচা-ভাতিজির সম্পর্কে। যা মেয়র আইভীর বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়ে শুক্রবার। এদিন তিনি চাচা খ্যাত আনোয়ার হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে কড়া বক্তব্য দিয়েছেন। এর পরপরই দক্ষিণ বলয়ের নেতাকর্মীরা আনোয়ার হোসেনের বিলবোর্ডের মধ্যে কালি লেপন করতে শুরু করেন। এমনকী দলীয় কার্যালয়ে এসেও তারা তালা মেরে দিয়েছেন। এ নিয়ে রাজনৈতিকাঙ্গনে বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র মতে, দ্বিতীয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইভী এবং আনোয়ারের মধ্যকার সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়। সেসময় আনোয়ার হোসেন আইভীর বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন। এমনকী দুর্নীতির অভিযোগও তুলেন তিনি। সেসময় আনোয়ার হোসেন ছিলেন উত্তর বলয় ঘেঁষা। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীতা নিয়েই তাদের মধ্যে ওই দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তীতে এমন বৈরি সম্পর্ক থেকে তারা দুজনই সরে আসেন। চাচা-ভাতিজির মধুর সম্পর্ক পরিণিত হয়।
যদিও আনোয়ার হোসেনের দাবি, তিনি আইভীর বিরুদ্ধে কখনই অযৌক্তিক কিছু বলেননি। যা সমালোচনা করেছিলেন তা সবই ছিল গঠনমূলক।
সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও আনোয়ার হোসেন আইভীর পক্ষেই ছিলেন। উত্তর বলয় থেকে আইভীর বিরুদ্ধে করা সমালোচনার জবাবও দিতেন তিনি। নানা কারণেই চাচা-ভাতিজির সম্পর্কের উন্নতি ঘটতে থাকে। দুজন একই মঞ্চে বসেন। হাসেন। কথা বলেন। একজন আরেকজনকে সমর্থন করে বক্তব্যও দিয়েছেন। তবে, সময়ের সাথে সাথে এই মধুর সম্পর্কের রঙ পাল্টে যেতে থাকে।
সম্প্রতি প্রকাশ করা হয় মহানগর আওয়ামী লীগের অন্তর্ভূক্ত ১৭টি ওয়ার্ড কমিটি। এসব কমিটি প্রকাশে আসার পরপরই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন আনোয়ার হোসেন। অনেকেই তার বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেন। সর্বশেষ এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন মেয়র আইভী। এমনকী তিনি আনোয়ার হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বক্তব্যও রেখেছেন। এছাড়াও আইভীর ওই বক্তব্যের পরই দক্ষিণ বলয়ের নেতাকর্মীরা দুই নং গেট দলীয় কার্যালয়ে এসে তালা মেরে দেন এবং আনোয়ার হোসেনের ছবি সম্বলিত বিলবোর্ডে কালি লেপন করে ঘৃণা প্রকাশ করেন। এছাড়াও পূর্বের সব কমিটিই বহাল থাকবে বলে ঘোষণা দেন মেয়র আইভী।
এদিকে মেয়রের ওই বক্তব্যের মধ্য দিয়েই স্পষ্ট হয়েছে তাদের সম্পর্কের দ্বরত্বের বিষয়টি। কিছুদিন আগেও যে সম্পর্ক মধুর ছিল বর্তমানে সেই সম্পর্ক বিষাক্ত হয়ে উঠেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক সচেনত মহল। তারা বলছেন, রাজনীতিতে কেউ কেউ চীরস্থায়ী বন্ধু হতে পারেন না। কেননা, রাজনীতিতে স্বার্থ জড়িত থাকে। স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটলেই বন্ধু শত্রু হয়ে যান আবার এই স্বার্থের জন্য শত্রুও বন্ধুতে পরিণিত হয়ে উঠেন।
যদিও আনোয়ার হোসেনের ভাষ্য মতে, আইভী আবেগ তাড়িত হয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। তার বক্তব্যের বিরুদ্ধে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না বলেও জানান। তার মতে, তিনি হচ্ছেন আইভীর পিতৃতুল্য। আইভী সন্তানতুল্য। সন্তান রাগে ক্ষোভে দুই কথা বলতে পারেন। ভুল করতে পারেন। পিতৃতুল্য যারা তারা সেই ভুলে পা দিতে পারেন না। তাই তিনি আইভীর করা সমালোচনার কোনো জবাব দিবেন না। তবে, তিনি এটুকু আশা করেন, আইভী যা বলছেন তা ভুল। সেই ভুল তার একদিন ভাঙবে।
অন্যদিকে চাচা-ভাতিজির যে মধুর সম্পর্ক ছিল সেই মধুর সম্পর্কে কেউ না কেউ বিষ ঢেলে দিয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কে তাদের অমন মধুর সম্পর্কে বিষ প্রয়োগ করলেন!

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ