আজ সোমবার, ২০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩রা জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভিক্টোরিয়ায় রোগী সেবার নামে ভোগান্তী চরমে

ভিক্টোরিয়ায় রোগী সেবার

ভিক্টোরিয়ায় রোগী সেবার

আল মামুন খাঁন : নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শত বছরের পুরনো জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতাটি বর্তমানে যেন নবরূপে সজ্জিত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই সরকারি হাসপাতালে রোগী সেবার নামে চলছে চরম ভোগান্তী।

সরজমিন অনুসন্ধানে দেখাযায়, হাসপাতালটিতে সেবা নিতে আসা রোগীদের নানাবিদ অভিযোগ। রোগীদের জন্য নেই বিশুদ্ধ খাবার পানির কোন ব্যবস্থা, প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্য সেবার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন গত ৩ মাস যাবৎ নষ্ট, নেই ডেন্টাল এক্স রে, ১১৮ নং রোমে প্যাথলজী বিভাগের জায়গা ও লোকবল সংকট, পয়নিষ্কাশন এর পরিষ্কার টয়লেট, টয়লেটগুলোতে নষ্ট লাইট নেই দরজা বন্ধ ব্যবস্থা,বহি বিভাগের আগত রোগীদের মাথার উপরে নষ্ট সিলিং ফ্যান, হাসপাতালে প্রবেশমুখে খোলা ও অস্বাস্থ্যকর ডাস্টবিন প্রভৃতি সমস্যা গুলো দেখার যেন কেহ নেই।

কিন্তু অপর দিকে ডাক্তারদের রুমে অত্যাধুনিক এসি, ফ্রিজ, টিভি, সিসি ক্যামেরা ব্যবস্থা, জানালায় নতুন থাই গ্লাসসহ নানা প্রকার আধুনিক ব্যবস্থাদি রয়েছে সরকারি ১শ শয্যা জেনারেল ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে।

সাধারণ মানুষ সেবা নিতে এসে ভিক্টোরিয়ার ডাক্তারদের কাছে হচ্ছে জিম্মি। মাত্র ৫টাকা মূল্য দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করে একজন রোগী দীর্ঘ লাইন অতিক্রম করে যখন পৌছায় সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের কাছে ঠিক তখনই ডাক্তারের শুরু হয় আসল কেরামতি। প্রথমে রোগী হতে তার রোগ সম্পর্কে অবগত হয়ে নিকটতম কোন প্রাইভেট প্যাথোলজীতে ইচ্ছে মত পাঠানো হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য। তাতে উক্ত ডাক্তারের কমিশন বানিজ্য নিহিত রয়েছে বেসরকারি প্যাথোলজী গুলো হতে। এরপরতো কমিশনের উপর ভিত্তি করে ইচ্ছেমত কোম্পানির ঔষধ লিখে দেয়া হচ্ছে রোগীদের বোকা বানিয়ে।

হাসপাতালটিতে বিশুদ্ধ পানির নতুন পাম্প স্থাপন করা হলেও এখনো সেটি বন্ধ রয়েছে পরিষ্কার নতুন ট্যাংকির অভাবে। তাই সেবা নিতে আসা রোগীরা বিশুদ্ধ খাবার পানি হাসপাতালের বাইরে আশপাশের অন্যত্র থেকে এনে পানিও জলের অভাব পূরণ করছে। প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্য সেবার নামে চলছে আইওয়াশ ধোকাবাজি। বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ও প্যাথলজীতে আল্ট্রাসনোগ্রাম এবং অন্যান্য পরীক্ষা নিরিক্ষার নামে অর্থ কমিশনের জন্য হাসপাতালের কর্মরত ডাক্তারা রোগীদের পাঠাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

গর্ভবতী অসহায় এক নারী প্রায় ১৫দিন যাবৎ আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করানোর জন্য হাসপাতালে ঘুরছে। কিন্তু প্রতিদিনই তাকে বলা হচ্ছে আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করার মেশিন নষ্ট। ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের নীচ তলার ১১৬নং কক্ষে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনের টোল আদায়কারি সাংবাদিকদের জানায় প্রকৃত সত্য ঘটনা, গত এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখ শেষ এই নষ্ট মেশিনটির ব্যবহার করা হয়েছে। তাহলে দেখাযায় গত ৩ মাস যাবৎ আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি নষ্ট রয়েছে। আর তিন মাস যাবৎ ছিলোনা প্রসূতী মায়েদের স্বাস্থ্য সেবা সরকারি ভাবে পাওয়ার কোন ব্যবস্থা। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে সরকরি ভাবে সকল প্রসূতী নারী স্বাস্থ্যসেবা পাবে বিনামূল্যে। কিন্তু জেনারেল ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের দায়িত্ব এবং কর্তব্য তদারকির কাজে নিয়োজিত ডাক্তার নিজ কাজের কথা ভুলে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেখিয়েছেন। গত ৩ মাসে লাখ টাকা মূল্যের আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন প্রতিস্থাপন না হলেও, হয়েছে হাসপাতালের সাজসজার কাজ। রোমে রোমে লেগেছে এসি, হাসপাতালে লেগেছে সিসি ক্যামেরা, থাই গ্লাসসহ নতুন রং।

এ বিষয়ে জেনারেল ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর.এম.ও) ডাঃ আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানায়, গত ২ থেকে ৩দিন যাবৎ আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি একটু ডিস্টাব বা নষ্ট হয়েছে। গতকাল ঢাকা থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ’র লোক এসে উক্ত মেশিনটি দেখে গিয়েছে। ১লক্ষ টাকা লাগবে উক্ত মেশিনটি ঠিক করতে। আমরা অভিযোগ জানিয়েছি কবে আসবে আল্ট্রাসনোগ্রাম এর জন্য নতুন মেশিন তা আমরা জানি না।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ