আজ শুক্রবার, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাবরি মসজিদের রায়ে হিন্দু-মসুলমানের যুক্তি সমূহ

ভারতের উত্তরপ্রদেশের বহুল প্রতীক্ষিত বাবরি মসজিদ মামলার রায় ঘোষণা করেছেন দেশটির সর্ব্বোচ্চ আদালত। শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মামলার রায় পড়া শুরু করেন ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। প্রধান বিচারপতি ছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে রয়েছেন পরবর্তী প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবদে, ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ ও এস আবদুল নাজির। বিতর্কিত অযোধ্যা মামলার এ রায় সর্বসম্মতিতে পড়ে শোনান প্রধান বিচারপতি।

এদিন বিচারপতিরা রায়ে বলেন, অযোধ‍্যার বিতর্কিত জমি রামলালার। ট্রাস্ট তৈরি করে মন্দির নির্মাণ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে অন্যত্র পাঁচ একর জমি দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া তিন মাসের মধ্যে কেন্দ্রকে এসব পরিকল্পনা করতে বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ।

রায়দানের ক্ষেত্রে এএসআই এর রিপোর্টকে গুরুত্ব দিয়েছে আদালত।

জমির মালিকানার পক্ষে প্রমাণ দেখাতে পারেনি সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড। এদিন রায়ে বলা হয়, যে কাঠামো ভেঙে বাবরি মসজিদ তৈরি হয়েছিল, তা মসজিদ নয়। তবে তা যে মন্দির ছিল তাও নির্দিষ্টভাবে বলা যায় না। বাবরি মসজিদ খালি জায়গায় ওপর তৈরি হয়নি বলেও জানানো হয়। আদালত জানান, শুধু ধর্মবিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে আদালত রায় দিতে পারেন না। রাম যে অযোধ্যায় জন্মেছিলেন, হিন্দুদের এই বিশ্বাসের ওপর প্রশ্ন তোলা যায় না। অন্যদিকে, জমির দখল নিয়ে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড যে দাবি করছে, তার যথাযথ প্রমাণ দিতে পারেনি।

১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ যে ভাঙা হয়েছে, তা আইনবিরুদ্ধ বলেও রায়ে জানানো হয়। ১৮৫৬ থেকে ১৮৫৭ সাল সময়কালের যে নথি মিলেছে তাতে হিন্দুদের পূজা করাতে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি।

প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ রায়ে ঘোষণায় বলেন, ‘এই রায় সম্পূর্ণ ঐকমত্যের একটি রায়।’

আদালতের রায়ে বলা হয়, ব্রিটিশরা আসার আগেও অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে যে হিন্দুরা পূজা করতেন, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। রায়ে বলা হয়, কোনো ফাঁকা জায়গায় বাবরি মসজিদ তৈরি হয়নি।

সুপ্রিম কোর্ট রায়ে জানান, অযোধ্যার বিতর্কিত জমিকে তিন ভাগে ভাগ করে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর জানিয়েছে।

গত ৮ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এফ এম ইব্রাহিম কলিফুল্লাহ, আধ্যাত্মিক গুরু শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর ও আইনজীবী শ্রীরাম পঞ্চুকে নিয়ে মধ্যস্থতা প্যানেল তৈরি করা হয়। দুই পক্ষের আলোচনায় মধ্যস্থতার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় ২ আগস্ট শীর্ষ আদালত জানান, ৬ আগস্ট থেকে মামলার নিয়মিত শুনানি হবে। ১৬ সেপ্টেম্বর, মধ্যস্থতাকারী প্যানেল ফের আলোচনা শুরুর কথা বললে, সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেন, আদালতের বাইরে মীমাংসার চেষ্টা চলতেই পারে। তবে, এজন্য শুনানি বন্ধ রাখা হবে না।

৪০ দিন টানা শুনানির শেষে চলতি বছরের ১৬ অক্টোবর রায় ঘোষণা স্থগিত রাখেন শীর্ষ আদালত। শুনানি পর্বে দুই পক্ষের আইনজীবীদের উত্তপ্ত সওয়াল জবাবে বারবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এজলাস। শুনানির শেষ দিনে হিন্দু মহাসভার পক্ষ থেকে আদালতে জমা পড়া ব্রিটিশ আমলে অযোধ্যার জমির নকশার কপি, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবী রাজীব ধাওয়ান ছিঁড়ে ফেলায় সে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়।

হিন্দুদের দাবি, বাল্মীকি রচিত রামায়ণে অযোধ্যাই রামের জন্মস্থান। এই জমিতেই রামের জন্ম হয় বলে মানুষের যুগ যুগ ধরে বিশ্বাস। মুসলিম পক্ষের পাল্টা যুক্তি, বাল্মীকি রামায়ণের আইনি ভিত্তি নেই। আদালতে কীভাবে প্রমাণ করা যাবে যে এটাই রামের জন্মস্থান?

অন্যদিকে, হিন্দু পক্ষ দাবি করে, অযোধ্যায় মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি করা হয়। মুসলিম পক্ষের পাল্টা দাবি, বিতর্কিত জমিতে মন্দিরে প্রমাণ নেই। ১৮৮৫ সালে আদালত মন্দির নির্মাণের অনুমতি দেননি। পরে হিন্দুরা রাম জন্মভূমির দাবি তোলে। হিন্দুদের যুক্তি, এএসআইয়ের রিপোর্টে মন্দিরের অস্তিত্বের কথা বলা হয়েছে। শিব, পদ্ম ও হনুমানের যে প্রতিকৃতি পাওয়া গেছে, তা প্রমাণ করে ওই জমিতে হিন্দু মন্দির ছিল।

মুসলিমদের দাবি ছিল, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তৈরি এএসআই রিপোর্টের বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই। পদ্মফুলের প্রতিরূপ ইসলামেও দেখা যায়। বাবরের আত্মজীবনী বাবরনামায় অযোধ্যায় মসজিদের উল্লেখ নেই বলে আদালতে হিন্দুপক্ষ পালটা যুক্তি দেয়। মুসলিম পক্ষের আইনজীবীদের পাল্টা যুক্তি, বাবরনামার দ্বিতীয় ভাগের কিছু পাতা, বহু বছর আগে খোয়া যায়। সেখানে মসজিদের উল্লেখ ছিল। হিন্দুরা দাবি করে, অযোধ্যায় যে কাঠামো ছিল তা মসজিদের কাঠামো নয়। কারণ, সেখানে ওজু করার জায়গা ছিল না। মুসলিমদের দাবি, বিতর্কিত জমিতে নামাজ পড়া হতো। নামাজের আগে ওজু করার জায়গাও ছিল। এলাকার দখল নেওয়ার জন্য রাতের অন্ধকারে মসজিদে রাম মূর্তি ঢোকানো হয়।

সেই বিতর্কিত রাম মন্দির-বাবরি মসজিদ মামলার রায় আজ শনিবার ঘোষণা করলেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ অবসর নেওয়ার আগেই এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বলে শীর্ষ আদালত জানিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী আজ রায় ঘোষণা হলো।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ