নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফতুল্লার পশ্চিম মাসদাইর এলাকায় পাওনা টাকার চাওয়ায় ঝুট ব্যবসায়ী সুমনকে আগুনে পুঁড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ঘাতকদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকবাসীসহ নিহতের স্বজনরা।
সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী এ কর্মসূচি পালন করে।
মানববন্ধন ও বিক্ষাভ সমাবেশে, সুমন হত্যার আসামীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, হত্যাকান্ডের তিনদিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ রহস্যজনক কারণে কোন আসামীকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি। যার কারণে আসামীরা আত্মগোপনে থেকে মামলা তুলে নিতে পরিবারের স্বজনদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। এ অবস্থায় তারা চরম আতংক ও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। নৃশংস এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশের কার্যক্রমের ধীর গতি ও আসামীদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতার অভিযোগ তোলেন তারা। স্বজনরা খুনীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী জানান প্রশাসনের কাছে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, নিহত সুমনের বাবা আব্দুল জলিল, মা কিসমত বেগম, স্ত্রী শিমু বেগম ও ছোটি বোন ও সোনিয়া বেগম। বেলা সাড়ে এগারোটা থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত একঘন্টা ব্যাপী এ কর্মসুচীতে প্রায় পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন। মানববন্ধন শেষে তারা নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
নিহত সুনের মা ইসমত বেগম বলেন, আমার ছেলেটার খুনীর বিচার চাই। আমার বাবাটারে একটু টাইমও দেয় নাই, আমার বাবারে পুইড়া মারছে। এই বলেই সন্তানের জন্য শুরু হয় বৃদ্ধ মায়ের আহাজারি। আমার বাবায় যাওয়ার আগে খুনিগো নাম নিজের মুখে বইলা গেছে। আমি এগুলার ফাঁসি চাই। আমি এই এতিমগুলারে নিয়া কই যামু। কে আমারে বিচার দিবো। কার কাছে যামু আমি।
নিহত সুমনের স্ত্রী সিমু আক্তার বলেন, আমারে যারা বিধবা করলো আমি তাদের ফাঁসি চাই। আমার সন্তানরে যারা এতিম করছে তাদের আমি বিচার চাই। আমি সহযোগিতা চাই। আমার স্বামীর হত্যার বিচার করেন ।
সুমনের পিতা জলিলুর রহমান বলেন, আমি প্রশাসনের কাছে আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই। এমপি শামীম ওসমান ও সরকারের কাছে আমার সন্তান হত্যার দ্রুত বিচার চাই। আমার নাতীরে যারা এতিম করছে সেই মাদক ব্যবসায়ী বিপ্লব, শায়লা বেগম, সোহেল মন্ডল, হোটেল মাসুদ এই খুনীদের শাস্তি চাই।
নিহত সুমনের ৮ বছর বয়সী সন্তান স¤্রাট কে কিছু বলার জন্য বলতে বলা হলেও শিশুটির মায়াবী চোখে ছিল শুধু বাবা হারানো কষ্টের জল। কিছু বলতে চাইলেও সে সময় সে কিছু বলতে পারেনি।
গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় পাওনা টাকা ফেরত দেবার কথা বলে ঝুট ব্যবসায়ী সুমনকে মোবাইল ফোনে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে নিজের বাসায় নিয়ে যায় একই এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী বিপ্লব। সুমন সেই বাসায় গেলে বিপ্লবের স্ত্রী শায়লা বেগম, হোটেল মাসুদ ও সোহলে মন্ডল সুমনের হাত পা ধরে রাখে আর বিপ্লব গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। সুমনের শরীরের ৭৫ শতাংশ আগুনে দগ্ধ হয়ে ঝলসে যায়। পরে গুরুতর অবস্থায় সুমনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে পরদিন শনিবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুমন মারা যায়। মৃত্যুর আগে সুমন এই চারজনের নাম উল্লেখ করে তাকে হত্যার বর্ণনা দিয়ে যায়।
এ ঘটনায় নিহত সুমনের মা কিসমত বেগম শনিবার রাতে অভিযুক্ত চারজনকে আসামী করে ফতুল্লা মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
গত দুই/তিন মাস আগে এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী বিপ্লব ও সোহেল মন্ডল দুইজনে ৭০ হাজার টাকা করে সুমনের কাছ থেকে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা ধার নেয়। এক মাস পর ওই টাকা ফেরত দেবার কথা থাকলেও সুমনকে তারা নানাভাবে হয়রানি করে আসছিল। পরে পরিকল্পিতভাবে তারা সুমনকে বাসায় থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় বিপ্লব, শায়লা, সোহেল মন্ডল, মাসুদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে নিহতের পরিবার। কিন্তু এখ নপর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।