অনলাইন রিপোর্ট:
লোকসভা নির্বাচনের ভোট নেয়ার আগে অনেক কিছুই দাবি করেছিল ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। কিন্তু প্রথম দফা ভোটের পরেই তাদের কপালে চিন্তা ভাজ পড়তে শুরু করেছে।
প্রথম দফার ভোটের মধ্যে তারা দেখতে পাচ্ছেন মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তীসগড়ের বিধানসভা নির্বাচনের ছায়া। কয়েকমাসে আগে অনুষ্ঠিত ওইসব রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে হেরে গিয়েছিল কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল নরেন্দ্র মোদির বিজেপি।
১১ এপ্রিল প্রথম দফা ভোট নেয়া হয়, ভারত জুড়ে ৯১টি আসনে। দিল্লিতে বিজেপির এক নেতা দাবি করেছিলেন, আগের বারের চেয়ে এবারে বিজেপির চারটি আসন বাড়তে এ ৯১টির মধ্যেই। অর্থাৎ ২০১৪ সালে বিজেপি এই ৯১টি আসনের মধ্যে জিতেছিল ৩২টিতে। এ বার পাবে ৩৬টি। মোটামুটি এ হিসাবই করছিলেন তারা ভোটের চিত্র তাদের সামনে আসার পর।
কিন্তু ভোটের চিত্র তাদের টেবিলে আসতেই বিজেপি শিবিরের চেহারা পাল্টে গেছে। যে ২০ রাজ্যে গত বৃহস্পতিবার ভোট নেয়া হয়েছে, সব জায়গা থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করেছেন। তা নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন সারা রাত। বেশি আসনের দাবি তারা আর করছেন না। শোনা যাচ্ছে, নির্বাচনের প্রাথমিক লক্ষণ বিজেপির পক্ষে যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক নেতার বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ২০১৪ সালের লোকসভার নির্বাচনের তুলনায় কম ভোট পড়েছে। গতবার মনমোহন সিংয়ের সরকারকে সরিয়ে দেয়ার যে তাগিদ তাদের মধ্যে ছিল এবার মোদিকে রক্ষায় তাদের মধ্যে সে তাগিদ দেখা যাচ্ছে না। বিষয়টি একদিক থেকে বিজেপির জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও মোদিঝড় দেখা না গেলে শেষ পর্যন্ত ফলাফল উল্টে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
বিজেপির আশঙ্কা, দেশ জুড়ে মোদির পক্ষে জোরালো হাওয়া না থাকায় স্থানীয় বিষয়গুলো বড় হয়ে উঠতে পারে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় জাত-পাতের বিষয়টিও বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে।
ভোটের প্রচার শুরু হওয়ার আগেই অবশ্য বিষয়টি খানিকটা আঁচ করতে পেরেছিলেন মোদি। তাইতো ভোট শুরুর অনেক আগে থেকেই বুথকে শক্ত করতে আক্রমণাত্মক ছিলেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ। আরএসএসও মাঠে নেমে কাজ করেছে। তবে প্রথম দফার ভোটের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে অনেকটুকু এগিয়ে গেলেও ঠিক সমাপ্তিটা নিজেদের মনের মতো হচ্ছে না বিজেপির। সবচেয়ে বড় ভয়, কিছু দিন আগে ঠিক এই পরিস্থিতিই তৈরি হয়েছিল মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তীসগড়ের বিধানসভা নির্বাচনে। সেখানে গো-হারা হেরেছিল বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতেই।
‘বিজেপি ইনসাইডার’ বলে একটি টুইটার হ্যান্ডেল জানিয়েছে, বিজেপির সাম্প্রতিকতম অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা অনুযায়ী, গোটা দেশে বিজেপি ১৫০-১৬০টি আসনে নেমে আসবে। দলের সব থেকে বেশি ক্ষতি হবে উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও মহারাষ্ট্রে।
অবশ্য অনেক দিন ধরে ঠিক এ কথাই বলে আসছে কংগ্রেস। তাদের মতে, গত লোকসভা ভোটে বিজেপির একার জোরে পাওয়া ২৮২টি আসন থেকে এক ধাক্কায় শ’খানেক কমে গেলে এনডিএর শরিকদের নিয়েও সরকার গড়তে পারবেন না নরেন্দ্র মোদী। কোনোমতে সরকার গঠনের মতো পরিস্থিতিতে পৌঁছতে পারলেও মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নেবে না এনডিএ শরিকরাই। সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের সামনে একটি জোট সরকার গঠনের রাস্তা খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
হাতে অবশ্য এখনো আরো ছয় দফার ভোট রয়েছে। ফলে বিজেপি নতুন করে ছক আঁকতে বসছে