অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাজীবন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আমাদেরকে স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিয়ে গেছেন। ছাত্রজীবন থেকেই সংগ্রামী এ মহানায়ক ন্যায়নীতির পক্ষে অবস্থান নিয়ে তাঁর রাজনৈতিক দর্শন নির্ধারণ করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবদ্দশায় সকলের প্রতি যে আহবান জানিয়ে গেছেন, তা আমাদের সবসময় স্মরণে রাখা উচিত। তিনি বলতেন, আত্মশুদ্ধির কথা, আত্মসংযমের কথা, আত্মসমালোচনার কথা। বাঙালি জাতিকে তিনি আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি হওয়ার প্রণোদনা দিতেন। একজন বিশুদ্ধ ও দৃঢ় মানসিকতার মানুষ ছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর হিমালয়সম সততা, মানসিকতা ও দেশপ্রেম আমাদের সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণা যোগায়।
বিশ্বে স্বাধীন রাষ্ট্রের সংখ্যা যত, স্বাধীন জাতির সংখ্যা ততটা নয়। অনেক স্বাধীন রাষ্ট্র আছে যেখানে অনেক জাতি আজও পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দী। স্বাধীনতার মর্মার্থ অনুধাবনের সুযোগ সবার ভাগ্যে থাকে না। সত্যিকারের মহান নেতার নেতৃত্ব পাওয়ার সৌভাগ্য যাদের হয়েছে জগতে সেই জাতিগুলোই কেবল স্বাধীনতার শক্তিতে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
যেমন আমরা, বাংলাদেশের বাঙালি জাতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল ভোগ করে চলেছে প্রতিটি বাঙালি। শুধু বাঙালি কেন? বাংলাদেশের অবাঙালি জাতিগোষ্ঠীসমূহও একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের নাগরিক হিসেবে নিজেদের উন্নয়নের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় উন্নয়নযাত্রায়ও গৌরবের সাথে অংশগ্রহণ করে চলেছে।
শত বাঁধা পেরিয়ে ‘পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি’র মানদণ্ডে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৩২তম বৃহৎ অর্থনীতি। পাকিস্তানিরা আমাদের ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল। বিশ্বসভ্যতার ইতিহাসে এতবড় গণহত্যার নজির আর নেই। শুধু মানুষ হত্যা করেই বসে ছিল না হায়েনা পশ্চিম পাকিস্তানিরা। স্থানীয় আলবদর, আল-শামস, রাজাকার নামের দোসরদের সাথে নিয়ে এই নরপশুরা আমাদের দুই লাখ নারীর সম্ভ্রম হরণ করেছিল।
বাঙালির বিজয় নিশ্চিত জেনে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতির সবচেয়ে মেধাবী সন্তানদের বেছে বেছে হত্যা করেছে। উদ্দেশ্য ছিল, বাঙালি জাতি যেন কোনদিন আর কোমর সোজা করে দাঁড়াতে না পারে। দেশ স্বাধীন হয়ে গেলেও পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র থেমে ছিল না। বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর পরিবারের প্রায় সব সদস্যসহ হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট।
এরপর থেকে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় ছিল স্বাধীনতার যুদ্ধে বিরোধিতা করা অপশক্তি।
একাত্তরের গণহত্যা, ১৪ ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং ৭৫ এর ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় পরাজিত শক্তি ৩ নভেম্বর হত্যা করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চার প্রধান সংগঠককে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের অনুসারীদের গুলিতেই কারাগারের ভেতরে শহীদ হন- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচ এম কামরুজ্জামান। এরপরে দীর্ঘ সামরিক শাসন। নামে-বেনামে কত মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধপন্থী মানুষকে হত্যা করা হয়েছে তার হিসেব রাখেনি ইতিহাস!
এরপরেও বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। ‘পূর্ব-পাকিস্তান’ নামের অভিশপ্ত পরিচয় ঘুচিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ এখন পাকিস্তান থেকে অনেক সামনে এগিয়ে গেছে।
সামাজিক নিরাপত্তা, জীবনযাত্রার মান, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মানবউন্নয়ন, ব্যাংক রিজার্ভ, এমনকি ক্রিকেটে পর্যন্ত বাংলাদেশ পাকিস্তান তো বটেই, ভারত এবং শ্রীলঙ্কার মত দেশের সাথে পাল্লা দিচ্ছে; কোন কোন ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে।
স্বাধীনতার ৪৫ বছরে অনেক সামরিক-বেসামরিক অস্থিরতা, অরাজকতা দেখেছে বাংলাদেশ। কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন হয়নি। কিন্তু অগ্রযাত্রা থেমে নেই। এই পুরো উন্নয়ন তৎপরতায় অনুঘটকের কাজ করেছে দেশের আমলাতন্ত্র।
অনেক সমালোচনা আছে সত্য। কিন্তু গৌরবময় সাফল্যগাঁথাও কম লম্বা নয়।
স্বাধীন দেশের আমলাতন্ত্র নিজে নানা হিসেবে আশীর্বাদপুষ্ট। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকারও বাস্তবতার সাথে সঙ্গতি রেখে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনভাতা বৃদ্ধি করেছেন।
আবার রাষ্ট্রও যতগুলো শক্তির সম্মিলনে তার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে তার অন্যতম হল এই আমলাতন্ত্র। আমলাতন্ত্র নিয়ে খোদ আমলাদের মধ্যেই নানা আলোচনা। আবার যারা অন্যান্য চাকরি বা পেশায় আছেন তাদের মধ্যেও আলোচনা-বিশ্লেষণের শেষ নেই। বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমলাতন্ত্র নিয়ে কী বলে গেছেন? আমলাতন্ত্রের ভূমিকা উনি কীভাবে দেখতে চাইতেন?
জাতির জনককে অনুধাবন করতে হলে তাঁর বক্তব্য, তাঁর কথা মনোযোগ দিয়ে আমাদের সকলকে অনুধাবন করতে হবে। ১৯৭০ সালের মহাগুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেতার এবং টেলিভিশনে একটি নির্বাচনী ভাষণ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি পাকিস্তানের আমলাতন্ত্রের যে চিত্র তুলে ধরেছিলেন সেটা আমাদের সকলের জানা দরকার।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘সরকারি চাকরির ক্ষেত্রের পরিসংখ্যানও একই রকমের মর্মান্তিক। স্বাধীনতার ২২ বছর গত হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে বাঙালির সংখ্যা আজও শতকরা মাত্র ১৫ ভাগ। দেশ রক্ষা সার্ভিসে বাঙালির সংখ্যা শতকরা দশ ভাগেরও কম। সার্বিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই প্রকট বৈষম্যের ফলে বাংলার অর্থনীতি আজ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসের মুখে।’
স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির মেধাবি সন্তানদের যারা এখন সরকারি বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত তারা নিশ্চয় অনুধাবন করতে পারছেন, কী পরিমাণ বৈষম্য আর অন্যায়ের ভেতর দিয়ে পাকিস্তান আমলে আমলাতন্ত্র পরিচালিত হয়েছে! বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তার সুফল আমরা সকলেই কোনো না কোনোভাবে ভোগ করছি।
জাতির জনকের প্রতি আমাদের ঋণ কোনদিন আমরা শোধ করতে পারব না। কিন্তু ঋণ শোধ করার চেষ্টা আমাদের অবশ্যই করতে হবে। বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করে আমরা জাতির জনকের বিদেহী আত্মাকে শান্তি দিতে পারি।
স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে পাকিস্তান আমলের সরকারি কর্মকর্তাদের ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে। পাকিস্তানি হায়েনারা যখন আমাদের প্রিয় নগরী ঢাকার ঘুমন্ত মানুষের উপর সশস্ত্র হামলা চালায় তখন প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেছিল রাজারবাগের পুলিশ সদস্যরা। কোন ডিসি হয়তো মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অস্ত্র ভাণ্ডার খোলে দিয়েছেন, কোন থানার ওসি হয়তো নিজেদের অস্ত্র মুক্তিসেনাদেরকে দিয়ে দিয়েছেন। আমাদের ডাক্তাররা আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দিয়ে সুস্থ করে আবার যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করেছেন। আমাদের প্রকৌশলীরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করেছেন। প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষ মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অংশ নিয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধের গৌরব আমাদের সকলের। এই গৌরব আমাদের ম্লান হয়ে যাবে যদি নিজের কাজ সুচারুভাবে আমরা করতে না পারি। আমাদের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যা নিয়ে জাতির জনক আমাদের পথ দেখিয়ে যাননি। তিনি আমাদের সব বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে গেছেন। প্রশ্ন হল আমরা তাঁর দেখিয়ে যাওয়া পথে হাঁটছি কি না? সঠিক পথে হাঁটতে হলে আগে পথকে জানতে হবে।
১০ জানুয়ারি, ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের জেলখানা থেকে মুক্ত স্বাধীন দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমি স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিতে চাই যে, আমাদের দেশ হবে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক দেশ। এদেশের কৃষক, শ্রমিক, হিন্দু-মুসলমান সবাই সুখে থাকবে, শান্তিতে থাকবে।’
১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে পুলিশের চরিত্র কেমন হবে তার উপর আলোকপাত করেছিলেন। তিনি সেখানে বলেছিলেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার একটি নয়া পুলিশ-বাহিনী গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। এটি হবে গণ-পুলিশ বাহিনী; অতীতের ন্যায় এ বাহিনী ভয়-ভীতি ও নির্যাতন চালানোর হাতিয়ার হবে না।’
পাকিস্তানিরা আমাদের দক্ষ মানবশক্তিকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারিয়ে নব্য স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের কাজ ছিল অত্যন্ত দুরূহ। একই বিবৃতিতে জাতির জনক বলেছিলেন, ‘পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং অগ্রগতির নীলনক্সা তৈরির জন্য আমাদের অসংখ্য ট্রেনিংপ্রাপ্ত শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ, পরিসংখ্যানবিদ, ইঞ্জিনিয়ার, স্থপতি, চিকিৎসক, কারিগর, প্রযুক্তিবিদ এবং সকল রকম দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন। আমাদের শিরোমণি বুদ্ধিজীবী ও দক্ষ জনশক্তি যারা আমাদের অগ্রগতির পথ নির্দেশ করতে পারতেন, তাদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য বর্বর শক্তি প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। আমরা বহু মূল্যবান জীবন হারিয়েছি। আমাদের অবশ্যই এই ক্ষতিপূরণ করতে হবে এবং উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে নয়া দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কালবিলম্ব না করে যাতে আমরা আমাদের নয়া সমাজ গঠনের কাজ শুরু করতে পারি, তজ্জন্য সম্ভাব্য দ্রুত সময়ের মধ্যে যুদ্ধের ধ্বংসলীলার স্বাক্ষর মুছে ফেলতে হবে।’
জাতির জনক অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামকে ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ’ বলে বর্ণনা করে সবাইকে প্রথম মুক্তিযুদ্ধের মত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানিয়ছিলেন। বঙ্গবন্ধু মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন, অর্থনৈতিক মুক্তি না আসলে স্বাধীনতা অর্জনের আসল উদ্দেশ্যই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
সম্পদের লোভ, ভোগ-বিলাসিতার বিষয়ে জাতির জনক বারবার আমাদের সাবধানবাণী শুনিয়ে গেছেন। একদল সম্পদের প্রাচুর্য আর বিলাসিতায় ডুবে থাকবেন আর জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশ না খেয়ে, না ঘুমিয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরবে এমন বাংলাদেশ তিনি কখনো চাইতেন না। ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি টাঙ্গাইলে এক জনসমাবেশে তিনি ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘ বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা হবে। শোষকদের আর বাংলাদেশে থাকতে দেয়া হবেনা। কোন ‘ভুঁড়িওয়ালা’ এদেশে সম্পদ লুটতে পারবে না।’
রাষ্ট্রের চাকরি পাওয়ার জন্য ‘তদ্বির আর সুপারিশ’ প্রক্রিয়ারও বিরুদ্ধে ছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পাবনা জেলার নগরবাড়ির জনসভায় প্রদত্ত ভাষণে নেতা, মন্ত্রী, এমপি, বড় বড় আমলাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার চোখে মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নাই। আপনারা রিকমেন্ড করা বন্ধ করেন। যার যা শক্তি আছে, যত দূর যার বুদ্ধি আক্কেল আছে, সেভাবে সরকারি কর্মচারি সুযোগ সুবিধা পাবে। তারও উপরে আমার দলের এমপিও হন, অন্যদলের নেতা হন, ছাত্রনেতারা হন, যুক্তফ্রন্টের ভাইরা হন, তারা মনে রাখবেন মেহেরবানি করে দলের লোককে খুশি করার জন্য রিকমেন্ড দিবেন না। আর যে লোককে রিকমেন্ড দিবেন, আমি সরকারকে হুকুম দিয়ে দিয়েছি, তার চাকুরি কোনদিন জীবনে হবেনা। যে গরিব এক গ্রামে বাস করে যে ছেলে তোমাদের কাছে যেতে পারে না। শহরের কাছে থাকে, তোমাদের বাড়িতে যায়। … আমি কমিশন বসাইয়া দেব। সে কমিশন ঘুরে ঘুরে ইন্টারভিউ হবে। যার যোগ্যতা অনুযায়ী তার চাকরি হবে। কোন সুপারিশ এদেশে চলবে না’।
সরকারি-বেসরকারি সব ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ছিলেন সর্বদা জাগ্রত। ৭২ সালের ২ এপ্রিল জাতির জনক বক্তৃতা করেন উত্তরবঙ্গের আরেক জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে। সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ যদি দুর্নীতিতে নষ্ট হয়ে যায়, বাংলায় যদি শোষণহীন সমাজ গঠন না হয়, তাহলে আমি বিশ্বাস করি যারা শহীদ হয়ে মারা গেছে ওদের আত্মা শান্তি পাবে না। তাই আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা সকলে কাজ করেন, দেশকে গড়ে তোলেন’।
১৯৭২ সালের ২৬ জুন জাতির জনক গিয়েছিলেন নোয়াখালী জেলার মাইজদিতে। সেখানে তিনি দুর্নীতিবাজদের উদ্দেশ্যে ঘৃণা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘ভাইয়েরা আমার, ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ কর, ঘুষ খাওয়া বন্ধ কর, গরিবের রক্ত চোষা বন্ধ কর। না হলে ভাল হবে না, তোমরা আমাকে চেন’।
লেখক: উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।