সৈয়দ মোহাম্মদ রিফাত:
‘ একটু আগে এই দশ টাকা নোট আমাকে এক রিক্সাওয়ালা দিয়েছে। আপনি কেনো নেবেন না।’ ‘এই টাকা পোড়া, নেয়া যাবে না। আপনি আমাকে দিয়ে চলে যাবেন, পরে অন্য কাস্টমার নিতে চাইবেনা।’ ‘কেনো নিতে চাইবেনা! আমি নেইনি? এই টাকাই নিতে হবে।’ ‘প্রয়োজনে আমাকে টাকা দিয়েন না, তবু আমি পোড়া টাকা নিতে পারবো না।’ গতকাল চাষাঢ়ার নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে ঠিক এভাবেই তর্ক-বিতর্ক হচ্ছিলো এক যুবক ও দোকানদারের সাথে। বিষয়টি নজরে পড়ে এ প্রতিবেদকের।
আলাপ করে জানা যায়, ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকা থেকে রিক্সায় করে চাষাঢ়ায় এসেছেন সৈয়দ শাওলিন। রিক্সাওয়ালাকে পঞ্চাশ টাকা নোট দেয়ার পর সে ১০ টাকা ফেরত দেয়। ওই দশ টাকা নোটের এক পাশ ছিলো পোড়া, তবে সে তা খেয়াল করেনি। পরে দোকানির কাছ থেকে সিগারেট নিয়ে ওই দশ টাকা দিলে দোকানি ওই টাকা চলবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। আর এ নিয়েই শুরু হয় তুমুল তর্ক। ওই দোকানী জানান, এর আগে অনেক কাস্টমার এমন পোড়া টাকা আমাকে দিলে আমি নিয়েছি। পরে তা কাউকে দিতে গেলে তারা নেয় না। এ কারনে আমিও নেই।
বিভিন্নজনের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এমন পোড়া টাকা প্রতিদিনই দেখা যায়। আর লেনদেন নিয়েও প্রতিদিন তর্ক হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, টাকা পোড়ার মূল কারণ ইয়াবা সেবন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মাদকসেবী জানান, ইয়াবা সেবনের জন্য পাইপ প্রয়োজন হয়। আর নতুন টাকা দিয়ে সহজেই সেই পাইপ বানানো যায়। ইয়াবা সেবনের পরে ওই টাকার পাইপের মাথায় আগুন লাগে। এতে টাকার এক কোনা পুড়ে যায়। পরবর্তী সেবনের জন্য পাইপ ঘুরিয়ে নিলে অন্য কোনাও একইভাবে পুড়ে যায়। এভাবে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা পুড়ে নষ্ট কিংবা বিনিময়ের অযোগ্য হয়ে পরছে ইয়াবাসেবীদের কারণে।
ইয়াবা সেবনে কেনো অন্য কিছু নয়, কেনো টাকা ব্যবহার করতে হয়! জানতে আলাপ হয় কয়েকজন ইয়াবাসেবীর সাথে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তারা বলেন, আমরা আগে ক্যালেন্ডারের মোটা কাগজ ব্যবহার করতাম। কিন্তু মোটা কাগজ সাথে রাখলে পুলিশ সন্দেহ করে বলে আমরা কাগজের পরিবর্তে টাকা ব্যবহার করি। সেক্ষেত্রে টাকা আমাদের কাছে নিরাপদ কারণ টাকা পকেটে থাকলে পুলিশ সন্দেহ করে না।
ইয়াবাসেবীরা আরও বলেন, নতুন নোট ইয়াবা সেবনের জন্য খুবই ভালো। কারণ নতুন টাকা সহজেই গোল করে পাইপ বানানো যায়। এরপর তা দিয়ে নাক কিংবা মুখ দিয়ে সহজেই ইয়াবার ধোঁয়া টেনে নেয়া যায়। ইয়াবা সেবনকালে অনেক সময় নোটের মাথার অংশ পুড়ে যায় বলে জানান তারা। প্রতিদিন এতো নতুন টাকা কিভাবে সংগ্রহ করা হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তারা আরও বলেন, ইয়াবা সেবনের জন্য অনেক আগে থেকেই নতুন টাকা ব্যবহার করা হয়। কালীরবাজার থেকে একেবারে পাঁচ কিংবা দশ টাকার একশ’ নোটের নতুন বান্ডিল নিয়ে এনে রাখি। হাতে সময় কম থাকলে পরিচিত দোকান থেকে নতুন নোট সংগ্রহ করি।
মরণ নেশা ইয়াবা সেবনে শুধু মাদকাসক্তরাই ধ্বংস হচ্ছেন না, সেই সাথে পুড়িয়ে নষ্ট করছেন টাকার নোটও। হাত বদলে জনসাধারণের কাছে যাওয়া সেই পোড়া টাকা নিয়ে পদে পদে ঘটছে বিপত্তি। একাধিক ব্যবসায়ী জানান, প্রতিদিন তাদের কাছে ১০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ ও পাঁচশ টাকার কিছু নোট আসে যার একপাশ পোড়া। সেই টাকা কাস্টমারকে দিতে গেলে পোড়া বলে নিতে চায় না। যার কারণে তাদের প্রতিনিয়ত সমস্যার মুখে পড়তে হয়। তারা আরও বলেন, দোকানে প্রতিনিয়ত যে টাকার নোটগুলো আসছে সবগুলোর পোড়ার ধরণ একই রকম।
এ বিষয়ে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, আমাদের অভিযানের ফলে মাদক বিক্রেতারা নানা কৌশল অবলম্বন করছে। তারপরেও পুলিশের অভিযান থেমে নেই।