সৈয়দ মোহাম্মদ রিফাত:
নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ রোডে পঞ্চবটি থেকে শাহী মসজিদ পর্যন্ত রাস্তাটির বেহাল দশা ছিলো। বৃষ্টি এলে রাস্তায় থাকা অসংখ্য গর্তে পানি জমে যেতো হাঁটু পর্যন্ত। দুর্ভোগ রোধে ২ বছর আগে ইট বিছানো হয়। তবে এতে ভোগান্তি কমেনিও মোটেও। প্রতিদিন এ সড়কে চলতে গিয়ে অসংখ্য যানবাহন ও যাত্রিরা বিপাকে পড়ে। জ্যামে পড়ে নষ্ট হয় কর্মঘন্টা। দুর্ঘটনাও নিত্য বিষয়। আর সবচেয়ে বেশী ক্ষতির শিকার হচ্ছে দেশের বড় রপ্তানি খাত গার্মেন্ট সেক্টর।
স্থানীয়রা জানান, এ রাস্তাটি সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর নির্মাণ করা বেশ ক’বছর ভালো ছিলো। রাস্তায় যানবাহন যেমন চলতে স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করতো তেমনি পথিকরাও। তবে রাস্তার পাশে কোন বড় ড্রেণ নির্মাণ না করায় পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা নেই। তারা আরও জানান, শাসনগাঁ শাহী মসজিদের পাশে আসলাম সানীর মালিকানাধীন করোণী গ্রুপের নির্মাণ কাজের সময়ে এ রাস্তাটি প্রথম ক্ষতিগ্রস্থ হয়। নির্মানাধীণ ওই ভবনের ইট-বালু,সুরকি, পানি একাকার হয়ে গর্ত সৃষ্টি হয়। এরপর বৃষ্টিতে সে গর্ত আরও বড় আকারে রূপ নেয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে অনেক দূর পর্যন্ত। খানা খোন্দলে ভরে যায় এ রাস্তার এক কিলো।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সড়কে বিশেষ করে ব্যাটারী চালিত রিক্সা ও ইজিবাইকের দৌরাতœ বেশি। এছাড়াও রয়েছে রিকশা, ভ্যান, প্রাইভেট কার ও মোটর সাইকেল। সরু এ সড়কে এতো যানবাহন থাকলেও লেন একটাই। যার জন্য যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী গাড়িগুলোকে নানান ঝামেলা পোহাতে হয়। তার উপর রাস্তায় ইট থাকায় চলাচলে আরও বিলম্ব হয়। এতে কর্মঘন্টার অপচয় হয় তেমনি পণ্য আনা নেয়ার ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত সময় লাগে ও ব্যয় বাড়ে।
এ রাস্তার পাশে বিসিক নারায়ণগঞ্জ তথা বাংলাদেশের অন্যতম শিল্প নগরী হিসেবে পরিচিত। দেশের রপ্তানী খাতে বিসিকের কয়েকশ গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ভূমিকা রয়েছে বেশ। এছাড়া সড়কের দু’পাশে রয়েছে অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান। সৈয়দপুর থেকে শুরু করে মুক্তারপুর পর্যন্ত বড় কয়েকটি সিমেন্ট কারখানা রয়েছে। ফলে এ সড়ক দিয়ে পণ্য আনা নেয়া হয় অনেক। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিদেশী বায়াররাও আসেন। একজন গার্মেন্ট মালিক জানান, বিদেশী ক্রেতারা এমন সড়ক দেকে আৎকে উঠেন। তাই অনেক সময়ে এ সড়ক ব্যবহার না করে মহল্লার সড়ক দিয়ে শহর ঘুরে তাদের আনা হয়।
ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জগামী যাত্রীদের অভিযোগ, ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ পঞ্চবটি হয়ে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। ইট বিছানো এ অংশ পার হতে কয়েকঘন্টা লেগে যায়।
স্থানীয়রা জানান, দূরদর্শিতার পরিচয় না দিয়ে রাস্তা নির্মাণকারী কৃর্তপক্ষ তিন জেলার এই সংযোগ সড়কটি খুব সরু করে নির্মাণ করেছে। তারা বলেন, এই সড়কে সাধারণ মানুষের দূর্ভোগ অনেক পুরনো। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কৃর্তপক্ষ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও বহুবার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে কাজের বেলাতে কেউ ব্যবস্থা নেয়নি। যার ফলে হাজারো মানুষের এই দুর্দশা। ইটের সলিংয়ের কারণে এই সড়কে যানবাহন দিয়ে চলাচল করলে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পরে। গাড়ির অবস্থাও নাজেহাল হয়ে পরে। আর বৃষ্টি হলে রাস্তার দিকে তাকানো যায়না।
সদর উপজেলার আওতাধীন রাস্তাটির কেনো তিন বছর ধরে বেহাল দশা জানতে দৈনিক সংবাদচর্চা অফিস থেকে মুঠোফোন করা হয় চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসকে। তিনি বলেন, এলজিইডি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে আমি ওই রাস্তার বিষয়ে বলতে পারবো। উল্লেখ্য, এ রাস্তা দিয়ে এ চেয়ারম্যানের আদি বাড়ি কাশিপুরে যেতে হয়।
এরপর সরাসরি কথা হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারি প্রকৌশলী এ বি এম খোরশেদ আলমের সাথে। তিনি বলেন, উপজেলাতে আমাদের আরও একটি এলজিইডি অফিস আছে। সেখানে থেকে সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।
তার দেয়া তথ্য অনুসারে মুঠোফোন করা হয় সদর উপজেলার উপ সহকারী প্রকৌশলী নূর মোহাম্মদকে। তিনি বলেন, পঞ্চবটির ওই রাস্তা সড়ক ও জনপথ বিভাগের। এটা সদর উপজেলার আওতায় নয়।
তবে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আলিওল হোসেন জানান, ওই সড়ক আমাদের আওতাধীন না। সড়কটি সংস্কারের দায়িত্ব সড়ক ও জনপথ ঢাকা বিভাগের।
এরপর ঢাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো. আলমগীর রেজাউল করিমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, একটা সময় ওই রাস্তাটি আমাদের আওতায় থাকলেও বর্তমানে মুক্তারপুর ব্রীজের জন্য বাংলাদেশ সেতু কৃর্তপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, তারা বলতে পারবেন।
অবশেষে বাংলাদেশ সেতু বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী পরিচালক (কারিগরি) কাজী মো. ফেরদাউস এর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এ রাস্তার ডিজাইন করা হচ্ছে সেই সাথে সংস্কারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই তা বাস্তবায়ন করা হবে।