আজ বৃহস্পতিবার, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

না’গঞ্জে এসএসসি’র ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি স্কুলে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্কুলগুলোর মধ্যে রয়েছে- মর্গ্যান বালিকা বিদ্যালয়, আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, বিবি মরিয়ম, লক্ষ্মীনারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয়, জয়গোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয় ও হাবার্ড একাডেমি। শুধু নগরীর স্কুলগুলোতেই নয়, এ প্রক্রিয়া বিস্তৃত হয়েছে নগরীর উপকণ্ঠের স্কুলগুলোতেও। যদিও প্রতিবারের মত এবারও প্রশাসন বলছে, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, এসব স্কুল কোচিং ফি, উন্নয়ন ফি ও ক্রস ফির নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। অথচ বোর্ড নির্ধারিত ফি মাত্র এক হাজার ৫৬৫ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর ঐতিহ্যবাহী নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুলে এসএসসি ফরম পূরণে নেওয়া হচ্ছে বিজ্ঞান বিভাগে এক হাজার ৫৬৫ টাকা এবং বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগে এক হাজার ৪৭৫ টাকা। এছাড়া মর্গ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সব শাখায় চার হাজার ৮শ’ টাকা, জয়গোবিন্দ হাই স্কুলে তিন হাজার ৩৭৫ টাকা, গণবিদ্যা নিকেতনে দুই হাজার ৮৭৫ টাকা, বার একাডেমি হাই স্কুলে তিন হাজার ৬শ’ টাকা, হাবার্ড একাডেমিতে ১০ হাজার টাকা, শেয়ারচর উচ্চ বিদ্যালয় ও বন্দর গার্লস স্কুলে সাত হাজার টাকা, লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলস হাই স্কুলে চার হাজার টাকা, বিবি মরিয়ম গার্লস হাই স্কুলে তিনি হাজার ৮শ’ টাকা, আমলাপাড়া আইডিয়াল হাই স্কুলে এক হাজার ৭শ’ টাকা, বিদ্যানিকেতন হাই স্কুলে এক হাজার ৬৫০ টাকা এবং সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে এক হাজার ৭শ’ টাকা আদায় করা হচ্ছে।

মর্গ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আসমা আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার মেয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তাই ফরম পূরণ করতে স্কুলে চার হাজার ৮শ’ টাকা জমা দিতে হয়েছে। অথচ বোর্ড নির্ধারিত ফি মাত্র এক হাজার ৫৬৫ টাকা।’

একই অভিযোগ করেন জয়গোবিন্দ হাই স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আবদুল জব্বার বলেন, ‘আমার ছেলের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবদ স্কুল কর্তৃপক্ষ তিন হাজার ৩৭৫ টাকা আদায় করেছে।’

এদিকে শহরের বিভিন্ন মহল্লায় গড়ে ওঠা বেনামি কয়েকটি স্কুলে এসএসসি পরীক্ষার অনুমোদন না থাকায় শিক্ষার্থীদের অন্য স্কুল থেকে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

সিদ্ধিরগঞ্জের লক্ষী নারায়ণগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমার মেয়ে টেস্ট পরীক্ষায় সব বিষয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু ফরম পূরণ করতে চার হাজার টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। আমার এতো টাকা দেওয়ার সামর্থ নেই। গত তিন দিন ধরে স্কুলে ঘুরছি, কমিটির কাছে ধর্ণা দিচ্ছি। কিন্তু ফরম পূরণ করতে পারিনি।’

এ ব্যাপারে হাবার্ড একাডেমির প্রধান শিক্ষক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের এখানে বোর্ড নির্ধারিত ফি নেওয়া হচ্ছে। তবে সঙ্গে অতিরিক্ত তিন মসের বেতন নেওয়ায় টাকার অংকটা বেশি মনে হচ্ছে।’

মর্গ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বোর্ডের নির্ধারিত ফির সঙ্গে স্কুলের বেতন ও অকৃকার্যদের পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট ফি একসঙ্গে নেওয়া হচ্ছে।’

বিবি মরিয়ম হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইফুল আলম খান বলেন, ‘স্কুল পরিচালনা পরিষদের নির্ধারণ করা ফি আদায় করা হচ্ছে। অতিরিক্ত কোনও টাকা নেওয়া হচ্ছে না।’

লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিকাশ চন্দ্র দাস বলেন, ‘স্কুল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যারা টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে তাদের কাছ থেকে প্রতি বিষয়ের জন্য অতিরিক্ত ৫শ’ টাকা ও বোর্ড নির্ধারিত ফি নিয়ে ফরম পূরণ করা হচ্ছে। এখানে আমার কোনও হাত নেই।’

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রেজাউল বারী বলেন, ‘বিভিন্ন স্কুলে এসএসসি ফরম পূরণে বোর্ড নির্ধারিত ফির অতিরিক্তি টাকা আদায় করার অভিযোগা শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শরিফুল ইসলামকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট স্কুলের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া বলেন, ‘স্কুলগুলোকে মনিটরিং করতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা ও আইসিটি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে এবং সেটা যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ