আজ সোমবার, ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দৈনিক সংবাদচর্চার কার্যালয়ে ঢুকে সেই শামছু’র হুমকি

দৈনিক সংবাদচর্চার কার্যালয়ে

দৈনিক সংবাদচর্চার কার্যালয়েসংবাদচর্চা রিপোর্ট
গত ২৭ নভেম্বর ২০১৮ সোমবার দৈনিক সংবাদচর্চায় ‘সোর্সদের দখলে সদর মডেল থানা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর সদর মডেল থানা পুলিশের সহকারী উপ পরিদর্শক সেই শামছুজ্জামান পত্রিকাটির প্রকাশক ও সম্পাদক মুন্না খানকে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ ছাপতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন।

দৈনিক সংবাদচর্চার প্রকাশক ও সম্পাদক এ বিষয়ে তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। ফলে, গত ২৮ নভেম্বর ২০১৮ বুধবার সন্ধ্যা ৭ টায় সহকারি উপ পরিদর্শক শামছুজ্জামান পোশাক পরহিত অবস্থায় ২ জন বিনা পোষাকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিসহ সংবাদচর্চার ৫৩/৪ নবাব সলিমুল্লাহ রোড (দ্বিতীয় তলা) চাষাড়ার নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।

কার্যলয়ে প্রবেশের পর দৈনিক সংবাদচর্চার যুগ্ম সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন ভুঁইয়া তাদেরকে অভ্যর্থনা জানান। পাশে বসিয়ে তাদের কুশলাদি জিজ্ঞেস করেন। কি প্রয়োজনে আসা হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চান। এ সময় সদর মডেল থানার সহকরী উপ পরিদর্শক শামছুজ্জামান প্রকাশিত সংবাদটি মিথ্যা বলে দাবি করেন। তিনি জানান আসামী শাহজালাল, কবির ও সজিবকে ২০ পিস ইয়াবাসহ আটকের পর মামলা দেয়া হয়েছে। তবুও কেন এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ করা হলো? সোর্স ছাড়া কোন পুলিশ চলতে পারে না। এ সময় তিনি উত্তেজিত হয়ে উঠেন।

উত্তেজিত অবস্থায় তিনি টেবিল চাপড়ে বিকট আওয়াজ করতে থাকেন। প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ ছাপানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। প্রতিবাদ না ছাপলে মামলা করার হুমকি, ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি, বৈধ অস্ত্র অবৈধভাবে ব্যবহারের হুমকি, দেখে নেওয়ার হুমকি এমনকি প্রাণনাশের পর গায়েব করে দেয়ার হুমকি দিতে থাকেন। এ সময় তিনি পত্রিকা অফিসটিতে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে যুগ্ম সম্পাদক তাকে নাস্তা করার আহবন জানান এবং তার সকল অভিযোগ বিবেচনা করার আশ্বাস প্রদান করেন। এরপর তিনি শান্ত হয়ে পত্রিকাটির কার্যালয় ত্যাগ করেন। এ ঘটনায় দৈনিক সংবাদচর্চা পরিবারের সকল সংবাদদাতা, চিত্র সাংবাদিক, নিজস্ব প্রতিবেদক ও সম্পাদনা বিভাগের কৌশলীগণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা ওইদিন প্রতিবাদ জানাতে ২ ঘন্টা কর্ম বিরতি পালন করেন।

ঘটনার সময় দৈনিক সংবাদচর্চার নারয়ণগঞ্জ কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি প্রেস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুজ্জামান কাউসার, দৈনিক অধিকারের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি ও দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের রূপগঞ্জ প্রতিনিধি আল আমিন মিন্টু, এশিয়ান টেলিভিশনের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি ও দৈনিক সংবাদচর্চার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক খালেদ আল আমিন, দৈনিক সংবাদচর্চার যুগ্ম সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ সিটি প্রেস ক্লাবের প্রচার সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন ভুঁইয়া, দৈনিক সংবাদচর্চার সার্কুলেশন ম্যানেজার মাইনুল হাসান রোমান, নিজস্ব প্রতিবেদক সৈয়দ মো: রিফাত, নিজস্ব প্রতিবেদক শিপন মীর, চিত্র সাংবাদিক ওয়ার্দে রহমান।

এ বিষয়ে দৈনিক সংবাদচর্চার যুগ্ম সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ সিটি প্রেস ক্লাবের প্রচার সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন ভুঁইয়া জানান, দৈনিক সংবাদচর্চা একটি পেশাদারী সংবাদপত্রের প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠনে কর্মরত সংবাদদাতা, প্রতিবেদক, অফিস কর্মচারী কর্মকর্তা ও সম্পদনা বিভাগের কলা কৌশলীগণ সকলেই পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্ট, না বলা কথা, জীবনের প্রতিটি মূহুর্তের হাসি কান্নাসহ প্রতি মূহুর্তের চিত্র ঝুঁকি নিয়ে সংবাদপত্রের পাতায় বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ তুলে নিয়ে আসেন। এহেন পরিস্থিতিতে দৈনিক সংবাদচর্চার কার্যালয়ে ঢুকে পুলিশ কর্মকর্তার হুমকি শুধু এই পত্রিকার জন্য নয়, সকল সংবাদপত্রের নিরাপত্তার উপর হুমকি।

দৈনিক সংবাদচর্চার প্রকাশক ও সম্পাদক মুন্না খান বলেন, দৈনিক সংবাদচর্চা অল্প সময়ের মধ্যেই একটি জনপ্রিয় পত্রিকায় পরিণত হয়েছে। গত ২৭ নভেম্বর ২০১৮ ‘সোর্সদের দখলে সদর মডেল থানা’ প্রকাশিত সংবাদটিতে জনসাধারনের সাথে সোর্সদের আচরণ, পুলিশের ছায়া হিসেবে ধরপাকড় বাণিজ্যের লেনদেন, থানা কম্পাউন্ড তাদের অবাধ বিচরনের প্রকৃত দৃশ্য ফুটে উঠেছে। এ সংবাদে তাদের গোপন চিত্র বেরিয়ে এসেছে। তবে, মানুষ ভুলের উর্ধে নয়। পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ভুল হলে সরকার নির্দেশিত পথে সমাধানে যাওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি। আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়ার পথও জনসাধারনের সামনে উন্মুক্ত রয়েছে। তবে, কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা, হুমকি ধামকি গ্রহনযোগ্য নয়।

তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে আইনের রক্ষকগনের পক্ষ থেকে এ ধরনের আচরন মোটেই কাম্য নয়। সংবাদপত্রের সাংবাদিকগণকে ‘জাতির বিবেক’ বলা হয়। তবে আজ প্রভাবশালীরা ও আমলাগণ তাদের সেই সম্মান কতটুকু দিচ্ছেন? এ হুমকি শুধু দৈনিক সংবাদচর্চার উপর নয়। এ হুমকি নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি সংবাদপত্রের উপর। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করি। অন্যথায়, দৈনিক সংবাদচর্র্চার পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, তথ্য মন্ত্রনালয়, প্রেস কাউন্সিল, বাংলাদেশ পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর ও জেলা প্রধানের বরাবরে জানানো হবে। যেন ভবিষ্যতে কোন সংবাদপত্রের কর্মকর্তাগনের সাথে শালিনতা, সম্মানের সহিত, যথাযথ মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে আচরণ করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ সিটি প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক মো: শফিকুল ইসলাম আরজু সংবাদপত্রের কার্যালয়ে হুমকির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রকাশিত সংবাদের জের ধরে পত্রিকার কার্যলয়ে সদর থানার যে টিমটি উপস্থিত হয়েছিলো তারা আসলে কী বোঝাতে চাচ্ছিল? যদি সংবাদটি যাচাই বাছাই বা কোন ধরনের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয়তা মনে করতেন তাহলে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার, সদর থানার ওসি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারতেন। কিন্তু বিনা নোটিশে এ ধরনের আচরন বিধি না করে সরাসরি অফিস কার্যালয়ে এসে হুমকি প্রদান করা মানে সংবাদপত্র পরিবারকে হুমকি দেয়া বলে আমি মনে করি।

নারায়ণগঞ্জ সিটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল্লাহ মাহমুদ টিটু বলেন, আইনের লোক বেআইনিভাবে পোষাকের ক্ষমতায় যদি কিছু করতে চায় সেটা অবশ্যই অন্যায়। এ বিষয়টিও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দেখা উচিৎ বলে আমি মনে করি।

নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শরিফুদ্দিন সবুজ বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটানো খুবই নিন্দনীয় কাজ। যদি কোন বক্তব্য থাকে সেজন্য অফিসিয়াল সিস্টেম রয়েছে পুলিশের। সেই সিস্টেমে তাকে আসতে হবে। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমি প্রত্যাশা করবো পুলিশের যারা উর্দ্ধতন কর্মকর্তা রয়েছেন তারা বিষয়টি দেখে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা রেঞ্জের উপ মহা পরিদর্শক (ডিআইজি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমার কোন কিছু জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখবো। যদি কোন ধরনের বিষয় থাকে তবে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ