আজ শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

`তোফায়েল ভাইদের সাথে আন্দোলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতাম’

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে গত ২৫ নভেম্বর জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত, নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক। মন্ত্রী তার বক্তব্যে ছাত্রজীবনের নানা দিক তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, মাননীয় স্পিকার স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবাষির্কীতে আমার পরিচয় আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা , সেই সঙ্গে আমি একজন বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। আমাদের এই সংসদে যারা আছেন, তাদের অধিকাংশের ছাত্রজীবন কাটে পাকিস্তানের আমলে । এবং যৌবনকাল কেটেছে পাকিস্তান আমলের অনেকাংশে। আমরা সেই সময়ে পাকিস্তানীদের অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছিলাম। যারা পাকিস্তানের শাসন আমল দেখেছেন তারাই এই স্বাধীনতার মর্ম বুঝতে পারবেন ।

আমরা তাই সেই ছাত্রজীবনে রাজনীতি কাকে বলে আমরা বুঝতাম না , আমরা বুঝতাম পাকিস্তানীদের অত্যাচার, শোষণ ,নিপীড়ন। আমরা লেখা পড়া করতাম আমাদের ভবিষ্যত কি, আমরা কিছুই জানতাম না। আমাদের ভবিষ্যত ছিলো অন্ধকার, এমন সময় আমাদের বঙ্গবন্ধু আমাদের ৬ দফা ঘোষণা দিলেন, ৬ দফার মধ্যে আমরা দেখি আমাদের সেই অন্ধকার কেটে যাবে । আমরা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ৬ দফার পক্ষে আন্দোলন করেছিলাম। কিন্তু সেই মোনায়েম খান-আইয়ুব খানের পেটুয়া বাহিনী পাত্তু ,নোমানীরা আমাদের উপর পাল্টা হামলা, অত্যাচার করলো। আমরা যেখানেই যাই সেখানেই তারা আমাদের উপর হামলা করে, আমরাও পাল্টা হামলা করতে লাগলাম। ৬ দফা আমাদের মনের মধ্যে চলে এসেছে ,কারণ আমরা ৬ দফার মধ্যে স্বাধীনতার গন্ধ পেয়েছি। আন্দোলন থেকে কখনো আমরা পিছুপা হয়নি। এমন সময় আমরা দেখি আইয়ুব খান আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেলেন। আমরা তখন বুঝতে পারলাম সেই দফার বিরুদ্ধে তাদের ষড়যন্ত্র। আমরা ছাত্ররা ৬ দফার পক্ষে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুললাম। তোফায়েল ভাইদের সাথে আমরা আন্দোলন করে বিশ^বিদ্যালয়ে যেতাম, বিশ^বিদ্যালয় থেকে আমরা আন্দোলন করে চার দিকে ছড়িয়ে দিতাম। এনএসএফ প্রধান পাত্তু নিহত হলো। তিনি নিহত হওয়ার পরে এনএসএফ এর মনোবল ভেঙ্গে গেলো। পাকিস্থান বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে গেলো। আমাদের আন্দোলন আরও তীব্র হলো। যেখানে পাকিস্থানীরা আছে সেখানে আগুন জ¦লছে। এরপর ৬৯ এর গণ আন্দোলনে আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন। আইয়ুব খানের পতন হলো। ইয়াহিয়া খান এসে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের এসে বললেন তোমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হও। আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হলাম। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ জয়লাভ করলো, আমরা যে স্বপ্ন দেখেছিলাম তা ভেঙ্গে গেলো। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ ভাষণ দিলেন। আমাদের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বললেন। আমরা স্কুলে স্কুলে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং শুরু করলাম। বঙ্গবন্ধুর কথা সত্য হলো। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানীরা আমাদের উপর আক্রমণ করলো। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেলো। পাকিস্তানিরা ঢাকার শহর দখল করে নিলো। আমি (গাজী) মায়াসহ বন্ধুরা মিলে আগড়তলা গেলাম, সেখানে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে ঢাকায় ফিরে এলাম। তখন আমাদের দাবি ছিলো ১ দফা স্বাধীনতা।

রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম দস্তগীর গাজী আরও বলেন , বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমরা যুদ্ধ করেছি। আমাদের সেক্টর কমান্ডাররা আমাদেরকে বলেছেন তোমরা ঢাকায় থেকে যুদ্ধ করো, সরকারি স্থাপনা গুলো উড়িয়ে দাও। সরকারি প্রতিষ্ঠান উড়িয়ে দিলে বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকায় নিউজ হবে, নিউজ হওয়ার পর পাকিস্থানীতের মনোবল ভেঙ্গে যাবে। আমরা তখন বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান উড়িয়ে দিয়েছিলাম।

মন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে। তারা আমাদেরকে খাদ্য দিয়েছে,অস্ত্র দিয়েছে , আমরা ট্রেনিং পেয়েছিলাম। তাই ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ ভারতের সকল জনগণের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। ভারতের সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আমাদের দেশের জন্য ভারতের অনেক সেনা সদস্য জীবন দিয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান পরাজিত হলো।

বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসলেন, আমরা স্বপ্ন দেখলাম আমাদের সুখ আসবে ,শান্তি আসবে কিন্তু তা পূরণ হলো না। পাকিস্তানপন্থীরা বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বপরিবারে হত্যা করলো, মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জেলে নিলো। দীর্ঘ ২১ টি বছর আমরা দৌড়ের মধ্যে ছিলাম। আমাদের যৌবনকালে স্বাধীনতার সুখ ভোগ করতে পারলাম না। আন্দোলনের মাঝে আমাদের যৌবন কাটালাম। এর মাঝে সূর্যের আলোর মতো আমাদের মাঝে ফিরে এলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নেতৃত্ব দিয়ে দলকে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আমাদেরকে আলোর পথ দেখাচ্ছেন।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ