আজ বৃহস্পতিবার, ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

তারের জঞ্জালে বেসামাল নারায়ণগঞ্জে

সংবাদচর্চা রিপোর্টঃ
ক্যাবল অপারেটর, ইন্টারনেট ও টেলিফোনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তার মাটির নিচ দিয়ে নেয়ার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও মানছেন না কেউ। কোন প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও সিটি কর্পোরেশনের খুুঁটিতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে তার স্থাপন করছে সংস্থাগুলো। এতে প্রাণহানি ও নানা দুর্ঘটনার পাশাপামি ঘটছে নগরীর সৌন্দর্যহানিও।

নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি সব স্থানেই বিদ্যুতের খুঁটিতে মাকড়সার জালের মতো প্যাঁচানো আছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তার। খুঁটি থেকে ছিরে পড়া ঝুলন্ত এসব তারের কারণে আতঙ্কের পাশাপাশি রয়েছে মৃত্যুর ঝুঁকি।

অন্যদিকে বিদ্যুতের খুঁটি ব্যবহার করে এসব তার ছড়িয়ে পড়েছে নগরীজুড়ে। প্রতিটি খুঁটির সঙ্গে পাকিয়ে তৈরি হয়েরছে তারের কু-লি। ঝুলে থাকা এসব তারের মাধ্যমেই মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হওয়ার সহ নানা রকম দুর্ঘটনা ঘটছে। জঞ্জালের মতো এসব তার নষ্ট করছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সৌন্দর্য।

নাগরিক সমাজের মতে, শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন সাধন করলেই হবে না, বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের পাশাপাশি কি করে নগরীর সৌন্দর্যবর্ধন করা যায় সেই দিকেও বিশেষ লক্ষ রাখতে হবে। ২০১১ সালে প্রথম বারের মতো নারায়ণগঞ্জ ৩টি পৌরসভাকে একত্রিত করে সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই ২০১১ সাল থেকেই কর্তৃপক্ষ বলে আসছে নগরীর উন্নয়ন, সৌন্দর্য সহ কত কিছুইনা তারা করবে। তবে বাস্তবতার সাথে তাঁরে প্রলেবের কোন মিল খুজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। সচেতন নাগরিকদের মতে যেহেতু ক্যাবল অপারেটর, ইন্টারনেট ও টেলিফোনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তার মাটির নিচ দিয়ে নেয়ার সরকারি নির্দেশনা আছে সেহেতু নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন সহ অন্যান্য দপ্তরগুলো সেই নির্দেশনার বলে সকল বৈধ ও অবৈধ সংযোগকারী প্রতিষ্ঠানেকে নোটিশের মাধ্যমে প্রথমে অবগত করতে পারে। সেই নোটিশের প্রেক্ষিতে আশানরূপ উন্নতি সাধিত না হলে কর্তৃপক্ষ অবশ্যই যেকোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু আফসো কর্তৃপক্ষ এই রূপ কোন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না।

বিদ্যুতিক তারে স্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে অনেকে। তারপরও ওই তারের জঞ্জাল অপসারনের কোনো উদ্যোগ নেই। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সড়কে তাকালেই দেখা যায় চারদিক ভরে গেছে ইন্টারনেট ও ডিশ লাইনের তারের গোছায়। যেসব খুঁটি এসব গোছার ভার বইছে সেসব কুঁজো বুড়ির মতো হয়ে গেছে। যে কোন সময় পড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তাছাড়া আরও কিছু ক্ষেত্রে এসব গোছার ঝুঁলন্ত তার চরম ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিও সৃষ্টি করে। দেখলে মনে হয় অযতেœ জটা লাগা চুল। কিন্তু চল নয়। সবই তারের জঞ্জাল। ইন্টারনেট, ডিশ, টেলিফোন, বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনগুলো জড়িয়ে আছে একসঙ্গে। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় মাথাও ওপর তাকালে এমন দলা পাকানো অবৈধ তারের জঞ্জাল চোখে পড়ে। সরকারী সিদ্ধান্ত অমান্য করে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও কেবল টিভি অপারেটররা দিনের পর দিন মাথার ওপর দিয়ে তার টানছে। খুঁটিতে বৈদ্যিতিক তার থাকলেও তার পাশাপাশি টেলিফোন, ডিশ এবং ইন্টারনেটের তার মিলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তারে তারে ধাক্কা খেয়ে তার থেকে মাঝেমধ্যে আগুনের ফুলকিও বের হয়। তখনই লোকজন দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে পুরো এলাকায়। এছাড়া ট্রান্সফলমারগুলোও ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা তারের জটের কারণে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ হতে পারে। আর তা হলে বাচার উপায় থাকবে না। এ ব্যাপারে লক্ষণীয় কোন উদ্যোগ নেই বিদ্যুত বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের ডিশ, ইন্টারনেক সংযোগ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় পুরোটাই বিদ্যুতের খুঁটি নির্ভর। বিদ্যু বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতার কারণেই রাস্তায় ঝুলন্ত তার সরানোর কাজে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে বিপজ্জনক তারের জট থেকে নগরবাসী মুক্তি পাচ্ছে না।

নগরবাসীর অভিযোগ বিগত কয়েকমাস পূর্বে নগরীর বিভিন্নস্থানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। প্রাথমিক ভাবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের সুত্রপাত হিসেবে চিহ্নিত করে কর্তৃপক্ষ। নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান সড়কের দুই পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে এত তারের জটলা যে, বোঝাই দায় কোনটি বিদূতের আর কোনটি ইন্টারনেট, টেলিফোন, ডিশের তার। বিভিন্ন ইন্টারনেট, টেলিফোন ও ডিশের তারে বৈদ্যুতিক তারগুলো নিচু হয়ে যাচ্ছে। এতে ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকরা করছে নগরবাসী।

নগরীর চাষাড়া খাঁজা মার্কেট, সান্তনা মার্কেট, লুৎফা টাওয়ার, সায়েম প্লাজা, প্রেসক্লাব, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব, কালীরবাজার, উকিলপাড়া, দুই নম্বার রেলগেইট, নিতাইগঞ্জ এলাকায় বিভিন্ন বিদ্যুতের খুঁটিকে ইন্টারনেট, টেলিফোন, ডিশের লাইনের তার গুলো মাকড়সার জালের মত পেঁচিয়ে রেখেছে।

একটি সূত্রে জানা যায়, রাস্তার পাশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঝুলন্ত তার ভূগর্ভস্থ বিতরণ লাইন ব্যবস্থার আওতায় নেয়ার ব্যপারে ২০১০ সালে মার্চে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। সরকার উন্নত বিশে^র মতো ভূগর্ভস্থ কমন নেটওয়ার্ক অর্থাৎ নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) তৈরি করেছে, যাতে মাথার ওপরে ঝুলে থাকা তার বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে নামিয়ে ভূগর্ভস্থ ব্যবস্থাপনায় সংযুক্ত করা হয়। ইন্টারনেট সচল রেখে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তার নামিয়ে ভূগর্ভস্থ করা সম্ভভ। তবে সরকারের নেয়া এই নিতীগত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন এখনো পর্যন্ত হতে দেখা যায়নি।

রাস্তার পাশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঝুলন্ত তার ভূগর্ভস্থ বিতরণ লাইন ব্যবস্থার আওতায় নেয়ার ব্যপারে বাংলাদেশ সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়টি বাস্তবায়নের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ ডিপিডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর ওয়াজেদ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি দেনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঝুলন্ত তার ভূগর্ভস্থ বিতরণে বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাথে নারায়ণগঞ্জ ডিপিডিসির কর্মকর্তাদের সাথে একটি বৈঠক হয়েছে উক্ত বৈঠকে আমি নিজেও উপস্থিত ছিলাম। ঝুলন্ত তারগুলো দ্রুত অপসারণ ও ভূগর্ভস্থ স্থানান্তর করার জন্য আমরা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন সহ জেলা প্রশাসকের সহায়তা কামনা করেছি। ইতি পূর্বে আমরা নগরির বেশ কিছু স্থানে অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবৈধ সংযেগের তারগুলোকে অপসারণ করেছি। কবে নাগাদ ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে কিছু বলতে চান নি।

অপর দিকে নারায়ণগঞ্জ ডিপিডিসির কর্মকর্তাদের সাথে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে বৈঠকের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ,এফ,এম এহতেশামুল হক’এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বিগত একটি মিটিং নারায়ণগঞ্জ ডিপিডিসির কর্মকর্তারা নগরির ঝুলন্ত তারের বিষয়টি উপস্থাপন করেন। তাঁদের উপস্থাপনের প্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে তাঁদের সর্বাত্মাক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে। এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন সদা প্রস্তুত রয়েছে তাঁরা যদি বলে আগামীকাল এই বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করবে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন তাঁদের সকল প্রকার সহযোগিতা করবে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন তাঁদের সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও নারায়ণগঞ্জ ডিপিডিসির কর্মকর্তাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে নাগরিক সংগঠনে বক্তব্য নিতে চাইলে নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ডিপিডিসিকে সহায়তা করার জন্য প্রস্তুত অপর ডিপিডিসি বলছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন সহযোগিতা করলে তাঁরা দ্রুত সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবান করার লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনা করবে। তাঁদের উভয়ের বক্তব্যের মধ্যেই কিছুটা অসঙ্গিত রয়েছে। নগরির তারের ঝঞ্জালের দুর্ভোগ থেকে মুক্তির দেয়ার দায়িত্ব কেউ নিতে চাচ্ছেনা। দায়িত্ব অবহেলা না করে দ্রুত নিতীগত সিদ্ধান্ত গ্রহন করে এই দুই প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে এবং দ্রুত সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ