আজ শুক্রবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

তারের জঞ্জালে প্রাণ গেল স্বপনের

সংবাদচর্চা রিপোর্টঃ
৪ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রতিবেদন বেরিয়েছে। প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম পাঁচটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির মধ্যে একটি। জিডিপির ১৪ শতাং আমাদের নির্মাণ খাত। বিশ্বব্যাংক বলছে, বাড়বাড়ন্ত অর্থনীতির অন্যতম নিয়ামক দেশের নির্মাণশিল্প। অথচ ১০-১৫ তলার ওপরে ‘স্পাইডাম্যান’-এর মতো ঝুলে ঝুলে কাজ করেন মধ্য আয়ের দেশের হাজারো শ্রমিক। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, বহুতল ভবন থেকে পড়ে গিয়ে পাড়গোড় ভেঙে বছরে শাতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু হচ্ছে। সেব কি স্বাভাবিক মৃত্যু? নাকি হত্যা? সামান্য একটি হেলমেট, একটি সেফটি বেল্প এবং একটি সেফটি নেট থাকলেই শ্রমিকের জীবন বাঁচে।

বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ। এত শত অর্জন, সরকার আরো কত কিছু নিশ্চিত করছে, তবে স্বাভাবিক মৃত্যু কি নিশ্চিত করতে পারছে? যে সকল সাধারণ নাগরীক বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করছে সবকটা মৃত্যুই অস্বাভাবিক মৃত্যু। কিন্তু এগুলো বলবে কে? এ রকম এক নির্মম অস্বাভাবিক মৃত্যুর শিকার তল্লার স্বপন। ফতুল্লার তল্লা এলাকার সিরাজ মিয়ার ছেলে স্বপন (২৬) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যানার পোষ্টার সাটানোর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২ মে) আনুমানকি ১.৩০ টার সময় নগরীর চাষাড়াস্থ একটি ব্যানার অপসারণ করতে গিয়ে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে অকালে মৃত্যু বরণ করে। নির্মম এই মৃত্যুর দায় কার উপর বর্তাবে? কে নিবে এই খাটে খাওয়া এই স্বপনের পরিবারের দায়ভার। নিহত স্বপনের উপার্জিত অর্থে পরিবার চলতো। সেই উপার্জন সক্ষম ছেলেকে হারিয়ে দিশে হারা বৃদ্ধা মা।

ক্যাবল অপারেটর, ইন্টারনেট ও টেলিফোনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তার মাটির নিচ দিয়ে নেয়ার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও মানছেন না কেউ। কোন প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও সিটি কর্পোরেশনের খুুঁটিতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে তার স্থাপন করছে সংস্থাগুলো। নগরির চাষাড়াস্থ পুলিশ বক্সের উপর সিটি কর্পোরেশনের বিজ্ঞাপন ঘরে প্রতিনিয়ত প্রাণহানি ও নানা দুর্ঘটনা ঘটছে। তারপরও টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের।

নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি সব স্থানেই বিদ্যুতের খুঁটিতে মাকড়সার জালের মতো প্যাঁচানো আছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তার। খুঁটি থেকে ছিরে পড়া ঝুলন্ত এসব তারের কারণে আতঙ্কের পাশাপাশি রয়েছে মৃত্যুর ঝুঁকি।

বিদ্যুতিক তারে স্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে অনেকে। তারপরও ওই তারের জঞ্জাল অপসারনের কোনো উদ্যোগ নেই। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সড়কে তাকালেই দেখা যায় চারদিক ভরে গেছে ইন্টারনেট ও ডিশ লাইনের তারের গোছায়। যেসব খুঁটি এসব গোছার ভার বইছে সেসব কুঁজো বুড়ির মতো হয়ে গেছে। যে কোন সময় পড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তাছাড়া আরও কিছু ক্ষেত্রে এসব গোছার ঝুঁলন্ত তার চরম ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিও সৃষ্টি করে। দেখলে মনে হয় অযতেœ জটা লাগা চুল। কিন্তু চল নয়। তারে তারে ধাক্কা খেয়ে তার থেকে মাঝেমধ্যে আগুনের ফুলকিও বের হয়। তখনই লোকজন দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে পুরো এলাকায়। এই রকম একটি ঘটনার সম্মুখিন হতে হয়েছে নিহত স্বপনকে। নিহত স্বপন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের চাড়াস্থ বিজ্ঞাপন ঘরের একটি ব্যানার অপসারণ করার কাজ করছিলো। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে সেই ব্যানারটি ছিলো নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের একটি ব্যানার যা অপসারণের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলো স্বপন। সেই ব্যানারটি অপসারণ করতে গিয়ে ঝুলন্ত তারে ধাক্কা খেয়ে তার থেকে আগুনের ফুলকি বের হয়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোনের সাথে সাথেই উপর থেকে নিচে পরে গুরুত্বর আহত হয় স্বপন। দ্রুত নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসাপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎশক তাকে মৃত ঘোষনা করে।

রাস্তার পাশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঝুলন্ত তার ভূগর্ভস্থ বিতরণ লাইন ব্যবস্থার আওতায় নেয়ার ব্যপারে বাংলাদেশ সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়টি বাস্তবায়নের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ ডিপিডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর ওয়াজেদ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি দেনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঝুলন্ত তার ভূগর্ভস্থ বিতরণে বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাথে নারায়ণগঞ্জ ডিপিডিসির কর্মকর্তাদের সাথে একটি বৈঠক হয়েছে উক্ত বৈঠকে আমি নিজেও উপস্থিত ছিলাম। ঝুলন্ত তারগুলো দ্রুত অপসারণ ও ভূগর্ভস্থ স্থানান্তর করার জন্য আমরা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন সহ জেলা প্রশাসকের সহায়তা কামনা করেছি। ইতি পূর্বে আমরা নগরির বেশ কিছু স্থানে অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবৈধ সংযেগের তারগুলোকে অপসারণ করেছি। কবে নাগাদ ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে কিছু বলতে চান নি।

অপর দিকে গত ২৮ এপ্রিল দৈনিক সংবাদচর্চা পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ,এফ,এম এহতেশামুল হক’এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ডিপিডিসির কর্মকর্তারা নগরির ঝুলন্ত তারের বিষয়টি উপস্থাপন করেন। তাঁদের উপস্থাপনের প্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে তাঁদের সর্বাত্মাক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে। ডিপিডিসির কর্মকর্তাদের বক্তব্যে দেখা যায়, তারা দৈনিক সংববাদচর্চা পত্রিকাকে বলেন, সিটি কর্পোরেশন সহযোগিতা করলে এই কাজটি দ্রুত করা সম্ভব হবে। তাদের এই টানাটানিতে মানুষের প্রাণ ঝড়ছে। এই প্রাণগুলো দায় দায়িত্ব নেবে কে এমন প্রশ্ন এখন নগরজুড়ে?

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ