আজ মঙ্গলবার, ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

তাজমহলের জমিটিতে শিব মন্দিরের কোন অস্তিত্ব ছিল না!

সজিব খান: যে জমিটিতে তাজমহল তৈরি করা সেটি হিন্দু রাজা দান করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দানের জমিতে সমাধি তৈরি করা যায় না বলে শাহজাহান রাজপুত রাজাকে জমিটির মূল্য স্বরূপ চারটি হাভেলি দিয়েছিলেন। তখন ওই জায়গায় কোন শিবমন্দিরের কোন অস্তিত্ব ছিল না। এছাড়া জমিটিতে কোনও মন্দিরও ছিল কি না কোথাও এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।

সম্রাট শাহজাহানের এই তাজমহলটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছিল প্রায় ৩৭০ বছর আগে। তখনকার অধিকারী উঁচু পদের ওমরাহ রাজা (পরে মির্জা রাজা) জয়সিংহ কাচ্ছওয়াহা সম্রাটের তাজ মহল তৈরির মনোভাব জেনে জমিটি দান করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী দানে পাওয়া বা ছিনিয়ে নেওয়া জমিতে পবিত্র সমাধির নির্মাণ ন্যায়সঙ্গত নয় বলে জমির বিনিময়ে রাজা ভগবানদাসের হাভেলি ও মান সিংহের ছোট ভাই মাধো সিংহের হাভেলি, আটঘা খান বাজারে রূপসী বেরাগী ও সুরজ সিংহের ছেলের হাভেলি— মোট চারটে হাভেলি জয়সিংহকে হস্তান্তরিত করা হয়।

যে দলিল থেকে এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে সেটি আসল দলিলের একটি প্রতিলিপি, জয়পুরের ‘কপড়দ্বারা’ মহাফেজখানা থেকে স্থানান্তরিত হয়ে এখন বিকানিরের রাজ্য অভিলেখাগারে সুরক্ষিত আছে। এই জমিতে কোনও মন্দির ছিল কি না তার কোনও উল্লেখ কোথাও নেই। তা ছাড়া কাচ্ছওয়াহা বংশে একমাত্র দ্বিতীয় সওয়াই রাম সিংহ (উনিশ শতক) ছাড়া কেউ শিবের উপাসক ছিলেন না, সকলেই মাতৃদেবীর পূজক ছিলেন।

জয়পুরের সিটি প্যালেস মিউজিয়ামের একটি রঙিন নকশা থেকে জানা যায় যে ১৭৩৫ সালে যমুনা নদীর দু’ধারে রাজপরিবারের সদস্যদের ও দরবারের আমির-ওমরাহদের মোট ৪২টি বসতবাড়ি, বাগানবাড়ি বা সমাধিসৌধ ছিল। ‘কপড়দ্বারা’ মহাফেজখানার দুটি অন্য দলিল থেকে আরও জানা যায় যে রাজস্থানের মকরানার খনি থেকে মার্বেল খনন ও আগ্রায় পাঠানোর পুরো দায়িত্ব জয়সিংহ পালন করেছেন।

তাজমহলের স্থপতির নাম সরকারি ভাবে কোথাও উল্লিখিত না হলেও আমরা মোটামুটি নিশ্চিত যে তাজের মুখ্য স্থপতি হলেন উস্তাদ আহমদ লাহোরি। লুতফুল্লাহ মুহান্দিস-এর লেখা ‘দেওয়ান-ই-মুহান্দিস’ থেকে জানা যায় যে তাঁর পিতা উস্তাদ আহমদ স্থপতি, প্রযুক্তিবিদ, গণিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিদ হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, এবং তিনি শুধু তাজমহল নয়, দিল্লির শাহজাহানাবাদ ও লালকেল্লার স্থপতিও ছিলেন। সম্রাট তাঁর কাজে সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে ‘নাদির-উল-আস্‌র্‌’ (দুনিয়ার সেরা) উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।

তাজমহলের মূল কাঠামো বিশেষ মশলা দিয়ে তৈরি পোড়ানো ইটের, তার উপর শ্বেতশুভ্র মর্মর পাথরের আস্তরণ। সৌধের মূল আকর্ষণ এর প্রায় ৩৫ মিটার উঁচু গম্বুজ। কোনও কোনও সূত্র অনুযায়ী গম্বুজ নির্মাণের দায়িত্ব তুরস্কের স্থপতি উস্তাদ ইশা ও উস্তাদ আফান্দির উপর ন্যস্ত ছিল। কোনও লিখিত সমর্থন পাওয়া যায় না বলে এর সত্যতা সম্বন্ধে সন্দেহ আছে। গম্বুজের উপর উলটানো পদ্মফুলের মাঝখান থেকে উঠে আসা প্রায় ন’মিটার লম্বা সোনার জল দেওয়া তামার ভারী চূড়া। এটি নাকি লাহৌরের নামী স্বর্ণকার কাজিম খানের করা।

সূত্র: আনন্দ বাজার

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ