আজ রবিবার, ২রা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ডেমরায় বাস চাপায় কলেজ ছাত্রের মৃত্যু প্রতিবাদে ভাঙচুর সড়ক অবরোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডেমরায় বাসের চাপায় গোলাম মোস্তফা স্কুল এন্ড কলেজের বানিজ্য বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইবনে তাহছিম ইরাম (১৮) নামে এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।এসময় ঘটনাস্থলেই তার মাথার একপাশ থেতলে যায়। শুক্রবার দুপুরে ডেমরা-রামপুরা সড়কের মোস্তমাঝির মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ইরাম ডেমরার আমুলিয়া পূর্ব পাড়ার মো. দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে মৃতের লাশ তার পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে বাড়ীতে নিয়ে যায়।

অপরদিকে ঘাতক বাসটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় খবর পেয়ে রামপুরা থেকে ট্রাফিক পুলিশ রমজান পরিবহনের ওই বাসটিসহ (ঢাকা মেট্রো ব-১৫-৩৬৮৭) চালক মো. শামীম ও হেলপার মুন্না মিয়াকে আটক করে। তবে এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও কলেজ শিক্ষার্থীরা ডেমরার আমুলিয়া, ষ্টাফ কোয়ার্টার ও সুলতানা কামাল সেতু এলাকায় বেশ কয়েকটি গাড়ী ভাঙচুর করে বিক্ষোভ করে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ ঘটনায় ডেমরাÑরামপুরা ও ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গ্যারেজে গিয়েও বেশ কয়েকটি বাস ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা স্থানীয় সাংবাদিকদের ছবি তুলতেও বাঁধা দেয়। এ সময় ডেমরার ষ্টাফ কোয়ার্টার এলাকাটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, নিহত ইরাম দুপুরে খেলা শেষে সাইকেলযোগে মোস্তমাঝির মোড় হয়ে বাড়ী ফিড়ছিল। এ সময় ষ্টাফ কোয়ার্টার থেকে ছেড়ে আসা রামপুরাগামী রমজান পরিবহনটি ইরামকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে রামপুরায় গিয়ে বাসটিসহ হেলাপার ও চালক আটক হয়।

বিক্ষোভের সময় উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা জানায়, ডেমরার যাত্রীবাহী বাসগুলোর চালক ও হেলপাররা সব অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তার নেশাগ্রস্থ হয়ে সড়কে অনেক বেপরোয়া হয়ে গাড়ী চালালেও পুলিশ কিছু বলেনা। ডেমরা থানা পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশদের মাসোহারা দিয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্করা গাড়ী চালায় বলে ডেমরার সড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা হচ্ছেই। প্রশাসন সঠিক ব্যবস্থা নিলে এমন হতোনা। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দুই দিনের বিক্ষোভ ঘোষণা করে ষ্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় সব গাড়ী চলাচল বন্ধ করে দেয়।
জানা গেছে, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীরা রামপুরা সড়কের আমুলিয়ায় গাছের গুঁড়ি ও ঢালাই পাইপ ফেলে সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। ডেমরার ষ্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় টায়ার জালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। পুলিশ কোন পদক্ষেপ নিতে পারছেনা। স্থানীয় সাংবাদিকদেরও ছবি তুলতে দিচ্ছে দেয়নি শিক্ষার্থীরা। ক্যামেরা বা মোবাইল ফোন হাতে নিলেই তারা উত্তেজিত হয়ে উঠছে। এদিকে মীরপাড়া এলাকায় গ্যারেজে রাখা অন্তত ৩৫ টি গাড়ী ভাঙচুর করে। তাছাড়া এলাকার অন্যান্য সব গ্যারেজে গিয়ে শিক্ষার্থীরা বাস ভাঙচুর করে।

ডেমরা জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রথমে ভাঙচুর করলেও পুলিশের উপস্থিতির পর তারা রাস্তায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছে। এদিকে মৃতের লাশ সুরতহাল শেষ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তাছাড়া চালক ও হেলপার আটক রয়েছে। পরে বিকালে ওয়ারী জোনের ডিসি মো. ফরিদ উদ্দিন ষ্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় এসে প্রথমে বিক্ষুব্ধ জনতা ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শোনেন।

এ সময় শিক্ষার্থীরা জানায়, ডেমরায় সব ধরণের যানবাহন বেশিরভাগ সময় হেলপাররা চালায়। চালক থাকলেও তার লাইসেন্সবিহীন ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তারা প্রায়ই নেশাগ্রস্থ থাকে বলে গতি নিয়ন্ত্রণ রাখেনা। তাছাড়া যানবাহনগুলোর বেশিরভাগই কাগজপত্রহীন। ষ্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় ফুট ওভার ব্রীজের দাবি করে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি সড়কে প্রয়োজনীয় স্পীড ব্রেকার তৈরীর দাবিও জানায় তারা। পরে জবাবে ডিসি ফরিদ উদ্দিন বিক্ষুব্ধদের দাবি যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিয়ে যথাযোগ্য সমাধানের আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধরা সড়ক ছেড়ে দেয়।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ