জেলা প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁও শহরের নিশ্চিন্তপুর হ্যাডস পাড়ায় একটি চীজ কারখানার বর্জ্য ও দূষিত পানির গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। এই কারখানার ময়লা পানি ও বর্জ্য ফেলানো হয় পাসের একটি পুকুরে। যার ফলে দূষিত হচ্ছে সেই এলাকার পরিবেশ। ১০ মার্চ
রোববার এমনি একটি অভিযোগ নিয়ে এলাকাবাসী একটি স্বাক্ষরীত লিখিত অভিযোগ করেন ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার , জেলা প্রশাসক ও পৌরসভার বরাবরে।
এলাকাবাসী জানান, নিশ্চিন্তপুর এলাকায় মিঠু নামের এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় একটি চীজ কারখানার ব্যবসা করে আসছেন। সেই কারখানার বর্জ্য ও ময়লা পানি পাসের একটি পুকুরে ফেলেন তারা। যার ফলে বিপদের মুখে পড়েছেন সেই এলাকার লোকেরা। সেই সাথে বিপদের মুখে পড়েছে স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা সহ ছোট্ট শিশুরাও। থাকতে পাড়ছেন না লোকেরা। অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই।
সোমবার দুপুরে সারেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কারখানার পাসের একটি পুকুরে ময়লা আর্বজনা ফেলেছেন এই চীজ কারখানার লোকেরা। প্রতিনিয়ত এই পুকুরে কারখানার ময়লা পানি যাওয়ার ফলে দূর্ঘন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। চিন্তিত স্থানীয় লোকেরা। প্রচন্ড গন্ধে বাসায় থাকাটি যেন তাদের কাছে বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে।
স্থানীয়রা একাধিকবার এই কারখানার মালিককে বিষয়টি অবগত করলেও মালিক যেন বিষয়টি গায়েই নেননি। অবশেষে আইনের আশ্রয় চায় এলাকাবাসীর লোকেরা।
সময় প্রায় দুপুর ১টা হঠাৎ কারখানায় উপস্থিত হয় নয়ন নামের মোটরসাইকেল আরোহী। গাড়ি থেকে নামা মাত্র মোবাইল ফোনে সংবাদকর্মীকে কথা বলতে বলেন তার বন্ধু মিঠুর সাথে। পরিচয়ে মিঠু বলেন আমি স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা।
বক্তব্যে মিঠু বলেন,“সেই এলাকার লোকেরা ভালোনা। তারা মানুষের ভালো চায়না। তোমার সেখানে কিছু বলার দরকার নাই। আমি কিছুক্ষণ পরে যাবো সেখানে। আমি সভাপতি সহ আছি। যার কারনে আমি সেখানে যাইতে পাড়ছিনা এখন। এটা নিয়ে তোমার কোন টেনশন করার দরকার নাই,তুমি শুধু সেখান থেকে চলে যাও। সভাপতি যদি যানে এই ছোট বিষয় নিয়ে সেখানে গেছ তাহলে একদম রাগে যাবে। যার কারনে আমি চাচ্ছিনা তোমাকে এই বিষয় নিয়ে ইয়া করার। এজন্য তুমি সেখান থেকে চলে আসো।
স্থানীয় বাসিন্দা খাদিজা বেগম জানান, এই কারখানার জন্য আমরা ভালোভাবে থাকতে পাড়ছিনা বাসায়। এতো দূর্ঘন্ধ হলে এলকায় থাকাটি যেন আমাদের মুসকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারখানার লোকদের বিষয়টি জানানো হলেও তারা কোন কিছুই করেন নাই। তাদের জন্য আমাদের থাকা কষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, অনেকদিন ধরে তাদের বলেছি এটার একটা ব্যবস্থা করেন। কিন্তু ব্যবস্থা তো দূরে থাক উল্টা কারখানার মালিক আমাদের হুমকি দেয় তোরা আমার কিছু করতে পাড়বিনা,কি করবি কর।
এলাকার আরেক বাসিন্দা জানান, এই কারখানা বর্জ্য আর তাদের দূর্ঘন্ধযুক্ত যে পানিগুলো এই পুকুরে ফেলানোর কারনে অনেক এলাকার মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমার ঠিক ভাবে খাইতে পাড়িনা এতো গন্ধ উঠে মাঝে মাঝে। আমাদের কথা কেউ শুনেনা। কি করবো আপনারাই বলেন। আমার বিভিন্ন স্থরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমার এই সমাজে একটি ভালো পরিবেশে থাকতে চাই। আর এখানে থাকতে হলে চীজ কারখানার এই বর্জ্য ও দূর্ঘন্ধযুক্ত পানি এখানে ফেলা বন্ধ করতে হবে। যাতে করে সকলে একটু শান্তিতে থাকতে পারে।
সর্বশেষ কথা হয় কারখানার মালিক মিটুর সাথে তিনি জানান, আসলে এই অভিযোগটি অনেক কষ্ট দায়ক। দীর্ঘদিন ধরেই আমরা এই কারখানাটি চালাচ্ছি। আমার ইতিমধ্যে পুকুরের মধ্যে ব্লিচিং পাউডার,চুন সহ বিভিন্ন জিনিস দিয়ে এই ময়লাটে নষ্ট করে দিচ্ছি। আমার পৌরসভায় বলেছি হয়তো আজ কালের মধ্যে এটার একটি সঠিক সুরহা বেড় করে ফেলবো। তবে এলাকাবাসীকে কোনদিন কোন রকমের হুমকি আমরা দেই নাই। এটা মিথ্যা কথা।
কারখানায় হঠাৎ স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতার বন্ধু কি করে উপস্থিত হলেন এ ব্যাপার কারখানার মালিক মিঠু বলেন,আমার কাউকে এই বিষয়ের জন্য বলিনাই। এই ব্যক্তি কি করে এখানে এসেছে আমরা যানিনা।
ঠাকুরগাঁও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নাজমুল হুদা এ্যাপোলো জানান, আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের কোন কর্মী যদি এমন আচরণ করে থাকে তাহলে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নিবো।
ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জেন ডা.আবু.মো.খাইরুল কবির বলেন,কারখানার ময়লা আর্বজনা ও ময়লা পানি যদি পুকুরে ফেলা হয় তাহলে এটা ঠিক নয়। কারন সেই এলাকায় অনেক লোকেই হয়তো থাকে । তারা যদি এই পানির স্পর্শে আসে তাহলে ইনফেকশন হতে পারে। তাই সকলকে সেই পুকুরের পানি থেকে দূরে থাকার জন্য জানান তিনি।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড কে এম কামরুজ্জামান সেলিম কে জানান, এখন পর্যন্ত আমার হাতে এমন অভিযোগের কোন কাগজ আসেনি। অভিযোগটি আসলে সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।